২-০ গোলে হারিয়েও ঘানার সঙ্গে বিদায় উরুগুয়ের

ফানাম নিউজ
  ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:২২

ঘানাকে ২-০ গোলে হারিয়েও বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিতে হলো দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে। অন্য ম্যাচে যে অঘটন ঘটিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া!

পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে তারা। যার ফলে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে বিদায় ঘটলো উরুগুয়ের। ‘এইচ’ গ্রুপ থেকে পর্তুগালের সঙ্গে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করলো দক্ষিণ কোরিয়া।

পর্তুগালের বিপক্ষে কোরিয়ার ২-১ গোলে এগিয়ে থাকার খবর তখন পৌঁছে গেছে সুয়ারেজদের কানে। তখনও ম্যাচের ২-৩ মিনিট বাকি। এরপর স্টপেজ টাইম দেয়া হলো আরো ৮ মিনিট।

কিন্তু জিতলেও যে লাভ নেই! কারণ, শত চেষ্টা করেও ঘানার জালে আর বল জড়াতে পারছিল না উরুগুইয়ানরা। আর একটি গোল দিতে পারলেই পয়েন্ট টেবিলটা পাল্টে যেতো।

কিন্তু গোল না হওয়ায় ডাগআউটে বসে চোখের পানি ছাড়ছিলেন উরুগয়ের অধিনায়ক লুইস সুয়ারেজ। ঘানার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়টাও যে কাজে আসলো না দুইবারের চ্যাম্পিয়নদের! পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়ে শেষ ষোলতে উঠে গেছে এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিলো উরুগুয়ে ও ঘানা।

বিশ্বকাপে টিকে উরুগুয়ের প্রথম কাজ ছিল নিজেদের ম্যাচটি জেতা। সেটা তারা করেছে। তবে আরেকটি গোল ঘানার জালে দিতে পারলে কপাল খুলতো তাদের। 'এইচ' গ্রুপ থেকে আগেই শেষ ষোলোতে নাম লিখিয়েছির পর্তুগাল। সম্ভাবনা বেঁচে ছিল বাকি তিন দল উরুগুয়ে, ঘানা ও দক্ষিণ কোরিয়ার। কাতারের আল জানুব স্টেডিয়ামে ঘানার বিপক্ষে মাস্ট উইন ম্যাচে ২-০ গোলে জিতেও কান্নায় মাঠ ছাড়তে হলো উরুগুয়ে ফুটবলারদের।

গ্রুপের অন্য ম্যাচটি যখন পর্তুগাল-দক্ষিণ কোরিয়া ১-১ গোলে এগিয়ে চলছিল, তখন উরুগুয়ের সমর্থকদের মুখে ছিল হাসি। দক্ষিণ কোরিয়া ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দের বদলে হতাশা নেমে আসে আল জানুব স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। এগিয়ে থাকা দলের মধ্যেও হতাশা। ঘানার বিপক্ষে জয়ের ব্যবধান বড় করতে পারলে পরের রাউন্ডে উঠতে পারতো উরুগুয়ে। শত চেষ্টা করেও গোল বাড়াতে পারেনি তারা।

উরুগুয়ে দ্বিতীয়ার্ধে গোল বাড়ানোর ভালো সুযোগ পেয়েছিল ৭০ মিনিটে। বক্সের বাইরে থেকে ভালভার্দের আচমকা একটা জোরালো শট কোনো রকমভাবে ঠেকিয়ে দিয়েছেন ঘানার গোলরক্ষক। ঘানাও ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিল একাধিকবার। ৭৯ মিনিটে অ্যান্টোনি সেমেনউ'র শট দ্বিতীয় পোস্ট ঘেঁষে বাইরে গেলে বেঁচে যায় উরুগুয়ে। ৮১ মিনিটে মোহাম্মদ কুদুস বক্সের মাথা থেকে শট নিয়েছিলেন। উরুগুয়ের গোলরক্ষক সেটা রুখে দিয়ে আরেকবার দলকে গোল হজম করা থেকে রক্ষা করেন।

প্রথমার্ধেই ২ গোল করেছিল উরুগুয়ে। অথচ ম্যাচের প্রথমার্ধটা অন্য রকমও হতে পারতো। ঘানাই যে প্রথম নষ্ট করেছে ম্যাচে এগিয়ে যাওয়ার সহজতম সুযোগ!

১৮ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল ঘানা। কিন্তু আন্দ্রে আইয়ুর কিক বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক রোশে। পরে দুই গোল করে এগিয়ে যায় সুয়ারেজরা। মোহাম্মদ কুদুসকে বক্সে ফাউল করেছিলেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক সার্জিও রোশে।

ঘানার আবেদনে রেফারি পেনাল্টি হয়েছে দেখতে ভিএআর দেখেন। দেখে সিদ্ধান্ত দেন পেনাল্টির। কিন্তু গ্রুপে ভাল অবস্থানে থাকা ঘানা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। স্পট কিক নিতে এসে দুর্বল শট নেন ঘানার অধিনায়ক আন্দ্রে আইয়ু। উরুগুয়ে গোলরক্ষক রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ে দলকে রক্ষা করেন।

ঘানার পেনাল্টি মিসের পরই উরুগুয়ে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে গোলের জন্য। ২৩ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো তারা। ডি আরাসকায়েতার শটে পুরোপুরি পরাস্ত হয়েছিলেন ঘানার গোলরক্ষক। কিন্তু বল গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন স্যালিসু।

৩ মিনিট পর আর ভাগ্যবঞ্চিত হতে হয়নি আরাকায়েসতাকে। ডান দিক থেকে সুয়ারেজের নেওয়া শট রুখে দিয়েছিলেন ঘানার গোলরক্ষক লরেন্স আতি; কিন্তু ফিরতি বলে আরাকায়েসতার হেড কাঁপিয়ে দেয় ঘানার জাল।

ব্যবধান দ্বিগুণ করতে বেশি সময় নেয়নি উরুগুয়ে। ৩২ মিনিটেই তারা স্কোরটা ২-০ বানিয়ে ফেলে। এবারও সেই আরাকায়েসতা। সুয়ারেজের ঠেলে দেয়া চলন্ত বলেই কোনাকুনি শটে গোল করেন তিনি।

দক্ষিণ কোরিয়া ও উরুগুয়ের পয়েন্ট ও গোল গড় সমান। তবে গ্রুপ পর্বে বেশি চার গোল করার সুবাদে এশিয়ার অন্যতম প্রতিনিধিরা উঠে গেলো পরের রাউন্ডে। দুই গোল করা উরুগুয়ের বিদায় হলো প্রথম রাউন্ড থেকেই।

আল জানুব স্টেডিয়ামে উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল ঘানার জন্য প্রতিশোধ নেয়ার মিশন। ১২ বছর আগে, ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে লুইস সুয়ারেজের সেই হাত দিয়ে গোল ঠেকানো এবং আসামোয়াহ জিয়ানের পেনাল্টি মিসের মধুর প্রতিশোধ নেয়ার মিশন আজ আফ্রিকান দেশটির সামনে।

কিন্তু সেই আসামোয়াহ জিয়ান থেকে বর্তমান দলের অধিনায়ক আন্দ্রে আইয়ু- কারো সঙ্গে কারো যেন কোনো পার্থক্য নেই। সেবার ঘানা অধিনায়ক আসামোয়াহ পেনাল্টি শটটা মেরে দেন ক্রসবারে।

আর আজ পেনাল্টি পেয়ে ঘানা অধিনায়ক আন্দ্রে আইয়ু এত দুর্বল শট নিলেন যে, হেসে খেলেই যেন সেই শটটি ঠেকিয়ে দিতে পারবেন যে কোনো গোলরক্ষক। ফলে ঘানাকে বিদায়ই নিতে হলো।