শিরোনাম
শেষ ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। বোলার মোহাম্মদ নওয়াজ। প্রথম বলেই হার্দিক পান্ডিয়ার উইকেট তুলে নিলেন এই স্পিনার। ম্যাচের উত্তেজনা তখন তুঙ্গে। ৫ বলে প্রয়োজন ১৬ রান। দ্বিতীয় বলে ১ রান নিয়ে কোহলিকে স্ট্রাইকে দেন দিনেশ কার্তিক। তৃতীয় বলে কোহলি নিলেন ২ রান। শেষ ৩ বলে প্রয়োজন হয় ১৩ রান।
এ সময়ই আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। মোহাম্মদ নওয়াজের একটি ফুলটস বলকে নো ডাকলেন আম্পায়ার। অফ স্টাম্পের বাইরে বল থাকলেও বলকে টেনে ডিপ স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকালেন কোহলি। ফিল্ডার চেষ্টা করেও বলটিকে মাঠে রাখতে পারলেন না।
নো বল নিয়ে আম্পায়ারের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। কিন্তু অন ফিল্ড আম্পায়ার বলটিকে থার্ড আম্পায়ারের কাছেও পাঠালেন না ‘নো’ চেক করার জন্য। তার সিদ্ধান্তই বহাল থাকলো। ৩ বলে প্রয়োজন ৬ রান। পরের বল ফ্রি-হিট। এর পরের বলে নওয়াজ দিলেন ওয়াইড। সেই ৩ বলই বাকি থাকলো। রান প্রয়োজন ৫।
চতুর্থ বলটিতে বিরাট কোহলি বোল্ড হলেন। কিন্তু ফ্রি-হিটের কারণে তিনি আউট হলেন না। বরং দৌড়ে ৩ রান নিলেন তারা। শেষ দুই বলে প্রয়োজন ২ রান। পঞ্চম বলটিতে দিনেশ কার্তিককে স্টাম্পিং করলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।
ম্যাচ যেন পাগলা ঘোড়ায় চড়ে এক্সপ্রেস গতিতে ছুটছিল তখন। ১ বলে ভারতের দরকার দুই রান। এ সময় আবারও ওয়াইড দিয়ে বসলেন নওয়াজ। ১ বলে প্রয়োজন ১ রান। শেষ বলটিতে রবিচন্দ্রন অশ্বিন অনায়াসে ১ রান নিয়ে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিজয় উল্লাসে মেতে উঠলেন বিরাট কোহলি এবং অশ্বিন।
কিন্তু ভারতের এই অবিস্মরণীয় বিজয় ম্লান হয়ে যাচ্ছে ‘নো’ বল বিতর্কে। এমন একটি সময়ে আম্পায়ার নো ডাকলেন, যখন সময়টা খুবই স্পর্শকাতর। আম্পায়ারদের যখন আরও বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া প্রয়োজন ছিল।
অস্ট্রেলিয়ান সাবেক ক্রিকেটার ব্র্যাড হগই প্রশ্নটা বড় করে তুলেছেন। তিনি টুইটার লিখেছেন, ‘কেন নো বলটি পুনরায় বিবেচনা করা হলো না? কেন কোহলি বোল্ড হওয়ার পর বলটি ডেড হয়নি?’ ব্র্যাড হগের এই টুইট ঘিরেই এখন বিতর্কটা সবচেয়ে বেশি মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে।
যে বলে নো ডাকা হলো, কোহলি তখন ক্রিজ জেড়ে বেরিয়ে এসে ছক্কা হাঁকান। বলা হচ্ছে, ব্যাটার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসলে তখন কোনোভাবেই উচ্চতাসূচক (নওয়াজের বলকে যে কারণে নো ডাকা হলো) নো বল দেয়া যায় না। আইসিসির ক্রিকেট নিয়মে এমন ধরনের কোনো নীতি লেখা নেই। অথচ, আম্পায়ার দিব্যি নো ডেকে দিলেন। সেটিকে আবার চেকও করলেন না। অথচ, ওই বল থেকে সাত রান যোগ হলো ভারতের ইনিংসে।
শুধু তাই নয়, বিতর্কটা আরও বেশি হয়েছে, পরের বলে (একটি ওয়াইড দেয়ার পর) কোহলি বোল্ড হওয়ার কারণে। কারণ তখন বলটি ছিল ফ্রি-হিটের। অথচ, বোল্ড হয়েও কোহলি আউট হলেন না। বরং দৌড়ে ৩ রান নিলেন তিনি। যদিও পাকিস্তান তখন ওই বলটিকে ডেড বল দাবি করেছিল।
পাকিস্তানি স্পিডস্টার শোয়েব আখতার দুটি টুইট করেন। দুটোতেই সমালোচনা করেন আম্পায়ারের। তিনি খিলেছেন, ‘ Aur haan, umpire bhaiyo, no ball thora dekh ke. Bunti nahi thi wasay (নো বল ডাকার সময় অবশ্যই আম্পারকে সেই নো বল চেক করা কিংবা ভালোভাবে দেখা উচিৎ। অথচ এই বলটাকে চেক করা হলো না।’
পরের টুইটে লিখেছেন, ‘Umpire bhaiyo, food for thought aaj raat k liye (আম্পায়ার ভাইয়া, আজ রাতে ভালোভাবে চিন্তা করো।)’
জন ব্রুক নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘যখন ক্রিজের বাইরে এক পা চলে যায়, তখন সেটা কখনোই নো বল হয় না। অবশ্যই এটা অসম্মানজনক একটি সিদ্ধান্ত এবং একটি বড় অপরাধ।’
আরফা পিরোজ জ্যাক নামে পাকিস্তানের জিও নিউজের একজন সাংবাদিক পোস্ট করেছেন, ‘পাকিস্তানের উচিৎ নো বল ইস্যুটা নিয়ে কথা বলা। আইসিসি রেফারির সামনেই আম্পায়াররা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এত বাজে আম্পায়ারিং দিয়ে ভারত কখনোই একটি স্বচ্ছ জয় নিয়ে যেতে পারলো না।’
জেমস উইলিয়ামস নামে একজন লিখেছেন, ‘ক্রিজের বাইরে একটি পা চলে গেলে সেটা কখনোই নো বল হয় না। এ ধরনের মুহূর্তগুলোতে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে থার্ড আম্পায়ার দিয়ে চেক করে নেয়া জরুরি।’