শিরোনাম
ঘরে-বাইরে এবার নিয়ে টি-টোয়েন্টি সপ্তম সিরিজে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। আগের ৬ বার একচ্ছত্র শাসন ছিল টাইগারদেরই। কিন্তু সপ্তমবার এসে আর সিরিজটা নিজেদের কাছে রেখে দিতে পারলো না বাংলাদেশ।
সিরিজের শেষ ম্যাচেও হারতে হলো ১০ রানের ব্যবধানে। সে সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারেরমত জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজে হারলো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এই সিরিজ জয়ে জিম্বাবুয়ের অর্জন হলো আরো একটি। যে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে এই প্রথম কোনো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করলো তারা।
জিম্বাবুয়ের এই জয়ে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব রায়ান বার্লের। ৬৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তারা যখন ধুঁকছিল, তখন হঠাৎ ঝড় তোলেন বার্ল। নাসুম আহমেদের এক ওভার থেকেই ৩৪ রান তোলেন তিনি। ৫টি ছক্কার সঙ্গে একটি বাউন্ডারির মার মারেন বার্ল। শেষ পর্যন্ত ২৮ বলে ৫৪ রান করেন তিনি। তার এই ঝড়ের ওপর ভর করেই শেষ পর্যন্ত ১৫৬ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় জিম্বাবুয়ে।
তবুও ১৫৭ রানের লক্ষ্য। খুব বড় কিছু ছিল না। কিন্তু এই লক্ষ্যও তাড়া করতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। থেমে যেতে হলো ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রানে। প্রথম ম্যাচে ১৭ রানে পরাজয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ৭ উইকেটে জিতে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা ধরে রেখেছিল টাইগাররা।
কিন্তু শেষ ম্যাচের আগে অধিনায়ক পরিবর্তন করতে হলো। ইনজুরির কারণে নুরুল হাসান সোহান ছিটকে যান। পরিবর্তে মোসাদ্দেক হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হয় অধিনাকত্বের। প্রথমবার জাতীয় দলের নেতৃত্ব দিতে এসে পরাজয়ের স্বাদই নিতে হলো মোসাদ্দেক হোসেনকে।
১৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর একটা বড় জুটি অন্তত প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু কোনো একটি বড় জুটি গড়ে উঠেনি। প্রতিষ্ঠিত ব্যাটারদের কেউই দাঁড়াতে পারলেন না জিম্বাবুয়ে বোলারদের সামনে। বরং নিয়মিত বিরতিতে একের পর এক উইকেট হারিয়েছে তারা।
বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং লাইনটা বেশ বড়। লিটন দাস, পারভেজ হোসেন ইমন, এনামুল হক বিজয় এবং নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মোসাদ্দেক হোসেন, মাহদি হাসান- কত বড় বড় ব্যাটার! কিন্তু আফিফ ছাড়া এদের কেউই জিম্বাবুয়ে বোলারদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারলো না।
১৩ রানে লিটন দাসের বিদায়ে শুরু, এরপর ২৪, ৩৪, ৬০, ৯৯, ৯৯, ১৩৩ এবং ১৩৯ রানের মাথায় পড়েছে ৮টি উইকেট। এমন নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালে জয়ের আশা করাটাই বোকামি।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ওপেনার লিটন দাস এবং পারভেজ হাসান ইমনের উইকেট হারিয়ে পড়েছে দারুণ বিপদে। ২৪ রানের মাথায় হারিয়ে বসে ২ উইকেট। ৩৪ রানে তৃতীয় এবং ৬০ রানে হারায় চতুর্থ উইকেট।
১৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামেন লিটন দাস এবং অভিষিক্ত ব্যাটার পারভেজ হাসান ইমন। কিন্তু দু’জনের কেউই নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন না। লিটন ঝড় তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ৬ বলে খেলেছিলেন ১৩ রান।
কিন্তু জিম্বাবুয়ের পেসার ভিক্টর নাইয়ুসির বলেই দিশেহারা হয়ে যান দুই ওপেনার। দ্বিতীয় ওভারেই দলীয় ১৩ রানের মাথায় নাইয়ুচির হাতে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন লিটন। দলীয় ২৪ রানের মাথায় সেই নাইয়ুচির বলেই মিল্টন সোম্বার হাতে ক্যাচ তুলে দেন পারভেজ হাসান ইমন। ৬ বলে ২ রান করেন তিনি।
এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে আশা ছিল সবার। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যেভাবে ব্যাট করেছিলেন, সেই ফর্ম মোটেও তিনি ফিরিয়ে আনতে পারলেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ে সফরে। জিম্বাবুয়েতে যারপরনাই ব্যর্থ হলেন। শেষ ম্যাচেও যখন তার কাছ থেকে বড় ইনিংস প্রত্যাশা ছিল, তখন তিনি আউট হলেন মাত্র ১৪ রান করে।
নাজমুল হোসেন শান্তও একের পর এক ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। ২০ বলে ১৬ রান করে বিদায় নেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ফেরানো হয়েছে, একজন সিনিয়র ক্রিকেটার থাকলে দলে ভারসাম্য থাকে। শেষ ম্যাচটা যেহেতু সিরিজ নির্ধারণী, সে কারণে তার অভিজ্ঞতাও কাজে লাগতে পারে। কিন্তু মাত্র ২৭ রান করেই তিনি বিদায় নিলেন।
অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেয়ে পুরোপুরি চাপে পড়ে গেলেন যেন মোসাদ্দেক। বল হাতেও খুব বেশি ভালো করতে পারলেন না। ব্যাট হাতে মাঠে নেমে এলেন আর গেলেন শুধু। গোল্ডেন ডাক মেরে ফেরেন সাজঘরে। ৯৯ রানের মাথায় পরপর দুই উইকেট হারিয়েই পরাজয়টা নিশ্চিত করে তোলে টাইগাররা।
আফিফ হোসেন ধ্রুব চেষ্টা করেছিলেন মাহদি হাসানকে নিয়ে। কিন্তু ১৭ বলে মাহদি ২২ রান করে আউট হয়ে গেলে সে সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়। হাসান মাহমুদ আউট হন ৩ রান করে। একমাত্র আফিফই বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন। ২৭ বলে তিনি অপরাজিত ছিলেন ৩৯ রানে।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন রায়ান বার্ল। ২৮ বলে ৫৪ রান করেন তিনি। ২০ বলে ৩৫ রান করেন লুক জংউই।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে ভিক্টর নাইয়ুচি নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। ২ উইকেট নেন ব্রাড ইভান্স। ১টি করে উইকেট নেন ওয়েসলি মাধভিরে, শন উইলিয়ামস এবং লুক জংউই।