শিরোনাম
১৪ জুলাই, লর্ডস। ইংল্যান্ডের জন্য বিশেষ এক দিন। ২০১৯ সালের ওই বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা দিনভরই এল ঘুরেফিরে।
তিন বছর পর আরেকটি ওয়ানডেতে, ভিন্ন জার্সিতে, ভিন্ন অধিনায়কের অধীনে ২৪৬ রানে গুটিয়ে গিয়ে অবশ্য নিজেদের কাজটা কঠিন করে তুলেছিল আগের ম্যাচে ওভালে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া ইংল্যান্ড। তবে লন্ডনের অন্য ভেন্যুর ‘টু-পেসড’ উইকেটে বোলারদের জন্য ছিল সবসময়ই কিছু।
সেখানেই ইংল্যান্ড জ্বলে উঠল, বিশেষ করে জ্বলে উঠলেন রিস টপলি। এ বাঁহাতি পেসার মাত্র ২৪ রানে নিলেন ৬ উইকেট—ওয়ানডেতে কোনো ইংল্যান্ড বোলারের যেটি সেরা ফিগার। ফল—৩৮.৫ ওভারে ১৪৬ রানেই আটকে গেল ভারত। ওভালের বিভীষিকা ভুলে ১৪ জুলাই সেই লর্ডসে আরেকটি জয় পেল ইংল্যান্ড। এ ম্যাচে সুপার ওভার দূরে থাক, শেষ পর্যন্তও যেতে হলো না। ১০০ রানের জয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা আনল তারা।
ভারতকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার শুরুটা করেন টপলিই, তৃতীয় ওভারে রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে। লেংথ বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লু হন ভারত অধিনায়ক, রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি। ১০ বল খেলেও রান করতে পারেননি তিনি। ভারতের পরের ৩টি উইকেটের ‘দায়’ অবশ্য ব্যাটসম্যানদেরই বেশি বলতে গেলে। টপলির লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে কট-বিহাইন্ড শিখর ধাওয়ান। চার নম্বরে উঠে আসা ঋষভ পন্ত ব্রাইডন কার্সের নিরীহ লো ফুলটসে ক্যাচ তোলেন মিডউইকেটে। আর বিরাট কোহলির ওপর ভর করে অফ স্টাম্পের বাইরের চ্যানেলের পুরোনো ভূত—ডেভিড উইলির যে বলটা ছেড়ে দিতে পারতেন, সেটিতেই খোঁচা মেরে ধরা পড়েন বাটলারের গ্লাভসে। এর আগে টপলিকে দারুণ তিনটি চার মেরে কোহলি একটু হলেও ভিন্ন কিছুরই আভাস দিয়েছিলেন যদিও!
ব্যাটিংয়ের জন্য খুব একটা সহজ নয় যে উইকেট, সেটিতেই ভারত পরিণত হলো ৩১ রানে ৪ উইকেটে। তবে তখনো ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া, সূর্যকুমার যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা। পান্ডিয়া ও সূর্যকুমারের জুটিতে ওঠে ৪২ রান। সে জুটি ভাঙেন টপলি, অফ স্টাম্পের বাইরে বাড়তি বাউন্সের লেংথ বলে কাট করতে গিয়ে ইনসাইড-এজে বোল্ড হন ২৯ বলে ২৭ রান করা সূর্যকুমার। পান্ডিয়া ও শামির সঙ্গে এরপর ২৮ ও ৩৯ রানের জুটি গড়েন জাদেজা। পঞ্চম বোলার হিসেবে আসা মঈন আলীকে স্লগ করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন ৪৪ বলে ২৯ রান করা পান্ডিয়া।
মোহাম্মদ শামি আরেকবার ব্যাটিং সামর্থ্যের পরিচয় দেন, তবে টপলির লো ফুলটসে হার মানতে হয় তাঁকে। এরপর ভারতের যেটুকু লড়াইয়ের আশা ছিল, তা শেষ হয়ে যায় ষষ্ঠ বোলার হিসেবে আসা লিয়াম লিভিংস্টোনের বলে জাদেজা বোল্ড হলে। নিজের শেষ ওভারে এসে যুজবেন্দ্র চাহালকে দিয়ে নিজের পঞ্চম, প্রসিধ কৃষ্ণকে আউট করে ষষ্ঠ উইকেটটি পান টপলি।
এর আগে ভারতের বোলিংয়ে নায়ক ছিলেন চাহাল। ৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে আগেভাগেই আটকে দিতে মূল ভূমিকা ছিল এ লেগ স্পিনারের।
আগের ম্যাচের ব্যাটিং বিপর্যয় ভুলে এবার অন্তত ভালো শুরু করেন কয়েকজন ইংলিশ ব্যাটসম্যান, তবে সে ভাবে ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউ। জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টোর উদ্বোধনী জুটিতে ওঠে ৪১ রান। তবে মিডল অর্ডার ব্যর্থ আবারও—জো রুট, বেন স্টোকস ও জস বাটলার মিলে করেন মাত্র ৩৬ রান।
৩৮ বলে ৩৮ রান করা বেয়ারস্টোর পর রুট ও স্টোকসও ফেরেন চাহালের বলে। পরে মঈন আলীর উইকেটও নেন চাহাল। চার ইংলিশ ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন চাহালকে সুইপ করতে গিয়ে—বেয়ারস্টো ও রুট সাধারণ সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লু, স্টোকস রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লু, মঈন স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ।
স্টোকসের উইকেট দিয়েই ১০২ রানেই ইংল্যান্ড হারায় ৫ উইকেট। এরপর একটু লড়াই করেছিলেন মঈন । লিভিংস্টোনের সঙ্গে ৪৫ বলে ৪৬ রানের পর ডেভিড উইলির সঙ্গে তাঁর জুটিতে ওঠে ৭৮ বলে ৬২ রান। তবে মঈন, লিভিংস্টোন ও উইলি—তিন জনই ৩০ পেরোলেও ফিফটির দেখা পাননি কেউ। মঈন করেন ৪৭ রান। শেষ দিকে ৪৯ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলেন ১ রানেই পান্ডিয়ার বলে কৃষ্ণর হাতে জীবন পাওয়া উইলি, ২টি করে চারের সঙ্গে মারেন ২টি ছক্কা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের ওই পারফরম্যান্সকেই যথেষ্টর চেয়েও বেশি কিছু প্রমাণ করেন টপলিরা।