শিরোনাম
আন্তর্জাতিক সূচির বিরতিটা কী দারুণভাবেই কাটালেন আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি। আগের ম্যাচে ইতালিকে হারিয়ে অর্জন করেছিলেন ফাইনালিসিমা। এবার ইউরোপের আরেক দল এস্তোনিয়ার বিপক্ষে একাই পাঁচ গোল করে দলকে এনে দিলেন ৫-০ গোলের বড় জয়।
মেসির গোল উৎসবের দিন নিজেদের অপরাজিত যাত্রাকে ৩৩ ম্যাচে উন্নীত করলো আর্জেন্টিনা। সবশেষ ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকায় পরাজয়ের তেতো স্বাদ পেয়েছিল আলবিসেলেস্তেরা। এরপর খেলা ৩৩ ম্যাচের একটিতেও হারেনি দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দেশটি।
রোববার (৫ জুন) রাতে স্পেনের প্যাম্পলোনার এল সাদার স্টেডিয়ামে ফিফা প্রীতি ম্যাচটিতে এস্তোনিয়াকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলাই করেছে আর্জেন্টিনা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে সাতবারের ব্যালন ডি অর জয়ী তারকা লিওনেল মেসি। তিনি একাই করেছেন পুরো পাঁচটি গোল।
ক্লাব ফুটবলে বার্সেলোনার হয়ে এক ম্যাচে পাঁচ গোলের রেকর্ড রয়েছে মেসির। জাতীয় দলের জার্সিতে এর আগে তিন গোলের বেশি ছিল না কোনো ম্যাচে। এবার সেই আক্ষেপও দূর করে নিলেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। ক্যারিয়ারের অষ্টম আন্তর্জাতিক হ্যাটট্রিককে ৭৬ মিনিটের মধ্যেই পাঁচ গোলে পরিণত করেন মেসি।
শেষের ১৫ মিনিটে গোলসংখ্যাকে ছয়ে নেওয়ার জোর চেষ্টাই চালিয়েছিলেন মেসি ও আর্জেন্টিনা। কিন্তু শেষ দিকে আর সেভাবে জোরালো আক্রমণ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া এস্তোনিয়ার রক্ষণও দৃঢ়তার পরিচয় দিলে পাঁচ গোল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে মেসিদের।
এ নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মেসির গোলসংখ্যা বেড়ে হলো ৮৬টি। যার সুবাদে তিনি পেছনে ফেলে দিয়েছেন হাঙ্গেরির কিংবদন্তি ফুটবলার ফেরেঙ্ক পুসকাসকে। ফলে আন্তর্জাতিক গোলসংখ্যায় তার সামনে রইলো আর মাত্র তিনজন ফুটবলার।
এস্তোনিয়ার বিপক্ষে গোল করার মাধ্যমে জাতীয় দলের জার্সিতে ভিন্ন ৩০টি দেশের বিপক্ষে গোলের কীর্তি গড়েছেন মেসি। এছাড়া ক্যারিয়ারে মোট আনুষ্ঠানিক গোলে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেকে (৭৬৫) ছাড়িয়ে গেছেন মেসি। তার গোলসংখ্যা এখন ৭৬৭টি।
ইউরোপের তলানির দিকের দল এস্তোনিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার চ্যালেঞ্জ তেমন কঠিন হবে না, আগেই বোঝা গিয়েছিল। তাই নিজের নিয়মিত একাদশের আটজন খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিয়ে বেঞ্চের খেলোয়াড়দের সুযোগ দিয়েছেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি।
নতুনদের নিয়েও বোঝাপড়া সাড়তে সময় নেননি মেসি। শুরু থেকেই দাপট দেখিয়ে খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের সপ্তম মিনিটে ডি-বক্সের মধ্যে জার্মান পেজ্জেল্লাকে স্লাইডিং ট্যাকল করে বসেন গোলরক্ষক ইগোনেন। যা দেখে সরাসরি পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
স্পটকিক থেকে গোল করতে কোনো ভুল করেননি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে ডান দিকে নিচু শটে বল জালে জড়ান মেসি। আগের ম্যাচে জোড়া অ্যাসিস্ট করলেও ছিল গোল না পাওয়ার আক্ষেপ। এবার শুরুতেই সেটি মিটিয়ে নিলেন সাতবারের ব্যালন ডি জয়ী তারকা।
শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার পর আরও গোলের জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে টানা ৩২ ম্যাচ অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনা। তবু তেমন শক্ত সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৩৭ মিনিটের সময় মেসির পাস থেকে ভালো সুযোগ পান হোয়াকিন কোররেয়া। কিন্তু বারের ওপর দিয়ে মেরে বসেন তিনি।
পরের মিনিটে আবারও কোররেয়ার সঙ্গে মেসির বোঝাপড়ায় তৈরি হয় সুযোগ। এবার প্রথমবার শট করে ব্যর্থ হন মেসি। পরেরবার জালের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় মেসির শট। এক মিনিট পর নাহুয়েল মোলিনার জোরালো শট প্রতিপক্ষের রক্ষণে প্রতিহত হয়ে ফিরে আসে।
তবে বিরতির আগে ঠিকই আরও এক গোল আদায় করে নেয় আলবিসেলেস্তেরা। ম্যাচের ৪৫ মিনিটের মাথায় আলেজান্দ্রো গোমেজের পাস ধরে বক্সের ডান দিক থেকে নেওয়া শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন মেসি। এ নিয়ে জাতীয় দলের জার্সিতে ৩০টি ভিন্ন দলের বিপক্ষে গোলের কীর্তি হলো মেসির।
বিরতি থেকে ফিরে দুই মিনিটের মধ্যেই নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন মেসি। নাহুয়েল মোলিনার এগিয়ে দেওয়া বল ধরে সহজেই গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অষ্টম হ্যাটট্রিক ছুঁয়ে ফেলেন তিনি।
শুধু হ্যাটট্রিক করেই থেমে থাকেননি মেসি। ম্যাচের ৭১ মিনিটের মাথায় বুদ্ধিদীপ্ত শটে গোলরক্ষককে বোকা বানান। এর পাঁচ মিনিট পর হুলিয়ান আলভারেজের শট এস্তোনিয়ার রক্ষণে প্রতিহত হয়। ফিরতি বলে ঠাণ্ডা মাথার নিখুঁত ফিনিশিংয়ে আরও একবার জালের ঠিকানা খুঁজে নেন মেসি।
সূত্র: জাগো নিউজ