শিরোনাম
টানা ছয় ম্যাচ হেরে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে অবশেষে জয়ের আশা জাগিয়েছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। কিন্তু বাধ সাধলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। শেষ ওভারে জাদুকরী ব্যাটিংয়ে চেন্নাইকে এনে দিলেন ৩ উইকেটের রোমাঞ্চকর এক জয়। টানা সপ্তম ম্যাচে হারলো পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই।
মুম্বাইয়ের করা ১৫৫ রানের জবাবে ম্যাচ জিততে শেষ তিন ওভারে চেন্নাইয়ের প্রয়োজন ছিল ৪২ রান। যা নেমে আসে ৬ বলে ১৭ রানে। শেষ ওভারে প্রথম দুই বলে স্ট্রাইকই পাননি ধোনি। তিনি যখন ব্যাটিংয়ে আসেন তখন সমীকরণ ছিল ৪ বলে ১৬ রান।
সেখান থেকে মুম্বাইয়ের বাঁহাতি পেসার জয়দেব উনাদকাতকে দুঃস্বপ্নের এক রাত উপহার দিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিনিশার ধোনি। ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে যথাক্রমে ছয় ও চার মেরে সমীকরণ ২ বলে ৬ রানে নামান ধোনি।
পরে পঞ্চম বলে দ্রুততার সঙ্গে দৌড়ে নিয়ে নেন ২ রান। ফলে শেষ বলে বাকি ছিল ৪ রান। উনাদকাতের করা ইয়র্কার লেন্থের ডেলিভারি ফাইন লেগ বাউন্ডারি দিয়ে চার মেরেই দলের জয় নিশ্চিত করে দেন চেন্নাইয়ের সাবেক অধিনায়ক।
শ্বাসরুদ্ধকর এ জয়ের পর সাত ম্যাচে দুই জয়ের ৪ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফ খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখলো চেন্নাই। অন্যদিকে আসরে নিজেদের প্রথম সাত ম্যাচের সবকয়টি হেরে বিদায়ঘণ্টা একপ্রকার বেজেই গেলো মুম্বাইয়ের।
আইপিএল ইতিহাসে এই প্রথম কোনো আসরের প্রথম সাত ম্যাচই হারলো কোনো দল। এর আগে আসরের প্রথম সাত ম্যাচ হারেনি আর কোনো দল। শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশনে এসে তাই এক বিব্রতকর রেকর্ডই হলো মুম্বাইয়ের।
ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে ১৫৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা তেমনা আশা জাগানিয়া ছিল না চেন্নাইয়ের। ফর্মে থাকা ওপেনার রুতুরাজ গাইকদ রানের খাতাই খুলতে পারেননি। আরেক ওপেনার রবিন উথাপ্পা ৩০ রান করেন ২৫ বল খেলে।
মিচেল স্যান্টনার ৯ বলে ১১, আম্বাতি রাইডু ৩৫ বলে ৪০ ও শিভাম দুবের ১৪ বলে ১৩ রানের ইনিংসগুলো বাড়াচ্ছিল রানরেটের চাপ। হতাশ করেন অধিনায়ক রবিন্দ্র জাদেজাও। তার ব্যাট থেকে আসে ৮ বলে মাত্র ৩ রান। মনে হচ্ছিল ম্যাচটি সহজেই জিতে নেবে মুম্বাই।
কিন্তু ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ও এমএস ধোনির ৩.৩ ওভারে ৩৪ রানের জুটিতে আশা জাগে চেন্নাইয়ের। শেষ ওভারের প্রথম বলে আউট হওয়ার আগে ১৪ বলে ২২ রানের মূল্যবান ক্যামিও খেলেন প্রিটোরিয়াস। বাকি কাজ সারেন ধোনি। তিনি অপরাজিত থাকেন ১৩ বলে ২৮ রান করে।
মুম্বাইয়ের পক্ষে ড্যানিয়েল স্যামস নিয়েছেন ৪ উইকেট। শেষ ওভারে ধোনির সামনে অসহায়ত্ব বরণ করা উনাদকাতের শিকার ২ উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে যান মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত। চেন্নাইয়ের অখ্যাত পেসার মুকেশের ফুল লেন্থের ইনসুইং ডেলিভারিতে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন তিনি।
এ নিয়ে আইপিএল ক্যারিয়ারে ১৪তম বার শূন্য রানে আউট হলেন রোহিত। আইপিএলে তার চেয়ে বেশি শূন্য নেই আর কারও। সমান ১৩ বার করে হাঁস খাওয়ার নজির রয়েছে অজিঙ্কা রাহানে, পার্থিব প্যাটেল, আম্বাতি রাইডু, মানদ্বীপ সিং, হরভজন সিং ও পিয়ুশ চাওলার।
রোহিত আউট হওয়ার দুই বল পর দারুণ এক আউটসুইং করা ইয়র্কার ডেলিভারিতে আরেক ওপেনার ইশান কিশানকে ফিরিয়ে দেন মুকেশ। সেই ডেলিভারি খেলতে গিয়ে নিজের হাঁটুর ওপরই পড়ে যান মুম্বাইয়ের এ তরুণ।
অধিনায়কের মতো ইশানও রানের খাতা খুলতে পারেননি। আইপিএলে একই ম্যাচে মুম্বাইয়ের দুই ওপেনারের শূন্য রানে আউট হওয়ার দ্বিতীয় ঘটনা এটি। এর আগে ২০০৯ সালের আসরে ডেকান চার্জার্সের বিপক্ষে শূন্য রানে আউট হন লুক রঞ্চি ও জেপি ডুমিনি।
শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারানোর পর পাওয়ার প্লে'তে সাজঘরের পথ ধরেন প্রোটিয়া তরুণ ডেওয়াল্ড ব্রেভিসও। মুকেশের তৃতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে মাত্র ৪ রান করেন ব্রেভিস। এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচে পাওয়ার প্লে'তে ৩ উইকেট নিলো চেন্নাই।
টপঅর্ডারের তিন ব্যাটার মাত্র ৪ রান করে ফেরার পর বিপর্যয় সামাল দেওয়ার মিশনে নামেন আরেক তারকা ব্যাটার সূর্যকুমার যাদব ও তরুণ তিলক ভার্মা। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি। দলীয় ৫০ হওয়ার আগেই ২১ বলে ৩২ রান করে আউট হন সূর্য।
এরপর দুই তরুণ তিলক ভার্মা ও হৃত্বিক শোকেন মিলে ধীরেসুস্থে ইনিংস এগিয়ে নিতে থাকেন। এ জুটিতে আসে ৬ ওভারে ৩৮ রান। দলীয় ৮৫ রানের সময় ডোয়াইন ব্রাভোর বলে আউট হওয়ার আগে ২৫ বলে ২৫ রান করেন শোকেন।
বুধবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আকস্মিক অবসর নেওয়া কাইরন পোলার্ডও বেশি কিছু করতে পারেননি। তিলকের সঙ্গে মিলে দলকে শতরান পার করিয়ে ৯ বলে ১৪ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। ড্যানিয়েল স্যামস ফেরেন ৫ রান করে।
অপরপ্রান্তে যাওয়া-আসার মিছিলে আস্থার প্রতীক হয়ে খেলছিলেন তিলক। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন তিনি। শেষ দিকে জয়দেব উনাদকাতের সঙ্গে মাত্র ২.৪ ওভারে যোগ করেছেন ৩৫ রান।
চলতি আইপিএলে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি করে তিন চার ও দুই ছয়ের মারে ৪৩ বলে ৫১ রান করেন তিলক। শেষের ঝড় তোলা উনাদকাত একটি করে চার-ছয়ের মারে খেলেন ৯ বলে ১৯ রানের অতি কার্যকরী ক্যামিও ইনিংস।
চেন্নাইয়ের পক্ষে বল হাতে মাত্র ১৯ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছেন মুকেশ। যা তার আইপিএল ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং। এছাড়া ব্রাভো নিয়েছেন ২টি উইকেট।