শিরোনাম
দুজন ভালো বন্ধু ছিলেন একসময়। পাঁচ বছর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আলো ছড়িয়েছেন তাঁরা। মাঠে দুজনের বোঝাপড়া ছিল বেশ। সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা যখন জিতেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, তখন রেড ডেভিলের জার্সিটা দুজনের গায়েই ছিল। একজন খেলার পাট চুকিয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন শেখানোর। আরেকজন খেলছেন এখনো।
কথা হচ্ছে সাবেক দুই সতীর্থ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও ওয়েইন রুনিকে নিয়ে। ইংলিশ ফুটবলের দ্বিতীয় স্তরের ক্লাব ডার্বি কাউন্টির কোচের দায়িত্বে আছেন রুনি, অপর দিকে তাঁর চেয়ে বছরখানেকের বড় রোনালদো খেলছেন এখনো। দীর্ঘ ১২ বছর পর ফিরেছেন পুরোনো সেই ক্লাবে।
কিন্তু রুনির চোখে রোনালদোকে ফিরিয়ে কোনো লাভ হয়নি তাঁর সাবেক দলের, যে দলের কোচ হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। রোনালদোর পক্ষে এমন কথা হজম করা কঠিন, তাই প্রকাশ্যেই রুনিকে খোঁচা দিয়েছেন।
বর্তমানে দুজন যেন দুজনের ঘোর শত্রু। অন্তত দুজনের আচরণে এমন কিছুর গন্ধ পেলে দোষের কিছু নেই। সম্প্রতি স্কাই স্পোর্টসে আলোচক হিসেবে গিয়েছিলেন রুনি। রোনালদোকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরানোর সিদ্ধান্ত কাজে আসেনি বলে মন্তব্য করেন রুনি। সাবেক ইংলিশ স্ট্রাইকারের দাবি, রোনালদো এখন আর ২০ বছরের তরুণ নয়। আস্তে আস্তে তাঁর মধ্যে জড়তা দেখা যাচ্ছে। তবে এটাও স্বীকার করেছেন, ফুটবলে এটাই স্বাভাবিক। রোনালদোনির্ভর না হয়ে দলকে তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করতেও আহ্বান জানিয়েছেন রুনি।
জবাবটা দিতে সময় নেননি পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। ইনস্টাগ্রামে স্কাই স্পোর্টসের সে অনুষ্ঠানের সহ-আলোচক জেমি ক্যারাঘারের সঙ্গে একটি ছবি দিয়েছেন রুনি। সঙ্গে লিখেছেন, মানডে নাইট ফুটবলে (অনুষ্ঠানের নাম) দারুণ রাত কাটালাম। সে পোস্টে এসে রোনালদো মন্তব্য করেছেন, দুই ঈর্ষান্বিত। রুনির সুবাদে ক্যারাঘারের কপালেও রোনালদোর খোঁচা জুটেছে।
রোনালদো ও রুনির সম্পর্কে উত্থান–পতন নতুন কিছু নয়। যার শুরুটা ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে। ওই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড-পর্তুগাল ম্যাচে রেফারিকে প্ররোচিত করে রুনিকে লাল কার্ড দেখাতে বাধ্য করেন পর্তুগিজ তারকা। সেখানেই থামেননি, ক্যামেরায় ধরা পড়ে মাঠ ছাড়ার সময় পর্তুগালের ড্রেসিং রুমের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়েছিলেন রোনালদো। এ নিয়ে ইংল্যান্ডে তোলপাড় হয়েছিল। এমন শোরগোলের মধ্যে রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাও করছিলেন। পরে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের হস্তক্ষেপে তা আর হয়নি।
এরপর আবার জুটি বেঁধে নেমেছেন। ইউনাইটেডকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতিয়েছেন, জিতিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগও।
কিন্তু দুজনের সম্পর্ক যে স্বাভাবিক হয়নি, সেটা বোঝা যায় রোনালদো সম্পর্কে রুনির অতীতের আরেক মন্তব্যে। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের আগে সংবাদ সম্মেলনে রুনি নিজের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তুলনা টানেন রোনালদোর সঙ্গে। রোনালদোকে ‘গ্লোরি হান্টার’ বলে বসেন রুনি। তাঁর মূলকথা, রোনালদো এমন একজন খেলোয়াড়, যিনি সাফল্যকে তাড়া করতে ভালোবাসেন। রুনি বলেছেন, তিনি দলগত সাফল্য চান, ওদিকে রোনালদোর ব্যক্তিগত অর্জনটাও প্রয়োজন হয়।
রোনালদো ইউনাইটেডের জার্সিতে প্রত্যাবর্তনে মাঠে নেমেই জোড়া গোল করে আশা জাগিয়েছিল রেড ডেভিল সমর্থকদের। প্রাথমিক সে উচ্ছ্বাস অবশ্য স্থায়ী হয়নি। রোনালদোকে পেয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দাপট দেখানোর আশা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ইউনাইটেড বাদ পড়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকেও। এই মৌসুমেও কোনো শিরোপা–খরা কাটছে না তাদের। চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ষোলোর বাঁচা–মরার ম্যাচে নিষ্প্রভ ছিলেন পর্তুগিজ উইঙ্গার।
পরিসংখ্যান দেখে রুনির দাবি অবশ্য মানতে নারাজ রোনালদো সমর্থকেরা। এ মৌসুমে সব মিলিয়ে ৩২ ম্যাচে ১৮ গোল করেছেন রোনালদো। তাঁর ধারেকাছেও নেই কোনো সতীর্থ। তবু দলের ব্যর্থতার দায়টা এড়িয়ে যেতে পারেন না সময়ের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়।
গত ম্যাচে ম্যানচেস্টারের ঘরের মাঠে লেস্টারের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে অসুস্থতার কারণে দলে ছিলেন না রোনালদো। তবে শনিবারে এভারটনের মাঠে দলে ফিরতে পারেন তিনি। পয়েন্ট টেবিলে সাতে আছে ইউনাইটেড। আগামী মৌসুমে প্রিয় চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে চাইলে রোনালদোকেই এখন দলকে টানতে হবে। তাহলেই আর ইনস্টাগ্রামে জবাব দিতে হবে না। যা জবাব দেওয়ার, সেটা তাঁর হয়ে পারফরম্যান্সই দেবে।