জুমার মর্যাদা ও গুরুত্ব সম্পর্কে নবিজীর দিকনির্দেশনা

ফানাম নিউজ
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:১৩

সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুমার দিনের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য জুমার দিনের গুরুত্ব অনেক বেশি। আল্লাহ এ দিনটিকে মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ ইবাদতের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এ দিনের আমল-ইবাদতেই রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের অনেক কল্যাণ। এ কারণেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিনের মর্যাদা ও সম্মান তুলে ধরে অনেক উপদেশ দিয়েছেন। যেন মুসলিম উম্মাহ এ দিনের ইবাদত-বন্দেগির প্রতি গুরুত্ব দেয়। তাহলো-

১. জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুনিয়াতে আমাদের আসার সময় সকল জাতির পরে। কিন্তু কেয়ামতের দিন আমরা সবার অগ্রবর্তী। অবশ্য আমাদের আগে ওদেরকে (ইয়াহুদি ও নাসারাকে) কিতাব দেওয়া হয়েছে। আমরা কিতাব পেয়েছি ওদের পরে। এই (জুমার) দিনের সম্মান ওদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। কিন্তু ওরা তাতে মতভেদ করে বসে। পক্ষান্তরে আল্লাহ আমাদের তাতে একমত হওয়ার তওফিক দান করেছেন। সুতরাং সকল মানুষ আমাদের থেকে পেছনে। ইয়াহুদিরা আগামী দিন (শনিবারকে জুমার দিনের মতো) সম্মান করে  এবং নাসারা করে তার পরের দিনকে (রবিবার)।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

২. জুমার দিনের কাজ

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক সাবালক পুরুষের জন্য জুমায় উপস্থিত হওয়া আবশ্যক।’ (নাসাঈ)

৩. ঘর-বাড়ি জালিয়ে দেওয়ার ঘোষণা

হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি ইচ্ছা করেছি যে, এক ব্যক্তিকে লোকেদের ইমামতি করতে আদেশ করে ঐ শ্রেণীর লোকেদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিই, যারা জুমাতে অনুপস্থিত থাকে।’ (মুসলিম, মুসতাদরাকে হাকেম)

৪. অন্তর মোহর মারার ঘোষণা

হজরত আবু হুরায়রা ও ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন- তাঁরা শুনেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মিম্বরের কাঠের উপর বলেছেন যে, ‘কতক সম্প্রদায় তাদের জুমা ত্যাগ করা থেকে অবশ্যই বিরত হোক, নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে অবশ্যই মোহর মেরে দেবেন। এরপর তারা অবশ্যই অবহেলাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (মুসলিম, ইবনে মাজাহ)

হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, একদিন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়ার সময় বললেন, ‘সম্ভবত এমনও লোক আছে, যার কাছে জুমা উপস্থিত হয়; আর সে মদিনার এক মাইল দূরে থাকে এবং জুমায় উপস্থিত হয় না। দ্বিতীয় বার তিনি বললেন, সম্ভবত এমন লোকও আছে যার কাছে জুমা উপস্থিত হয়; অথচ সে মদিনা থেকে মাত্র দুই মাইল দূরে থাকে এবং জুমায় হাজির হয় না। এরপর তিনি তৃতীয় বার বললেন, ‘সম্ভবত এমন লোকও আছে, যে মদিনা থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে থাকে এবং জুমায় হাজির হয় না; আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দেবেন।’ (আবু ইয়ালা, তারগিব)

৫. জুমা ত্যাগ করা মুনাফেকি

হজরত আবুল জাদ যামরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা ওজরে তিনটি জুমা ত্যাগ করবে সে ব্যক্তি মুনাফিক।’ (ইবনে খুযায়মাহ, ইবনে হিব্বান, তারগিব)

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরপর ৩ জুমা ত্যাগ করলো; সে অবশ্যই ইসলামকে নিজের পেছনে ফেলে দিল।’ (তারগিব)

সুতরাং মানুষের উচিত, জুমার নামাজ পড়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা। জুমা পরিত্যাগ করা থেকে বিরত থাকা। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপদেশগুলো মেনে জুমার দিনের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনের যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূত্র: জাগো নিউজ

ধর্ম এর পাঠক প্রিয়