শিরোনাম
রসুলে করিম (স) ইরশাদ করেন, ‘ইসলামে ব্যাধি সংক্রমণের কোনো বাস্তবতা নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস :৭৫৫৭) তাই সব মুসলমানের মৌলিক আকিদা ও বিশ্বাস হবে, যে কোনো রোগ সরাসরি আল্লাহর হুকুমেই প্রকাশ পায়। তবে হ্যাঁ, পৃথিবী আসবাবের জগৎ তথা কারণ ও উপকরণ প্রকাশের ক্ষেত্র হলো পৃথিবী। তাই ইসলাম কারণ ও উপকরণের স্বীকৃতি দিয়েছে। যেমন হাদিসে বলা হয়েছে, ‘কুষ্ঠ রোগী থেকে এমনভাবে পলায়ন করো, যেমন তুমি বাঘ থেকে পলায়ন করে থাকো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস :১৭৬৭) এতে বোঝা গেল, সংক্রমণটাও আল্লাহর হুকুমে হয়। রোগের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। এ আলোচনার মাধ্যমে এটাও পরিষ্কার হয়ে গেল যে ইসলাম সংক্রমণের অস্তিত্ব অস্বীকার করেনি, তবে একে চূড়ান্ত ক্ষমতাধর জ্ঞান করতে নিষেধ করেছে।
নতুন বিধিনিষেধে যা করা যাবে, যা যাবে না
হজরত আলী (রা) রসুলুল্লাহ (স)-এর একটি হাদিস বর্ণনা করেন, ‘তোমরা কুষ্ঠরোগীদের বারবার দেখতে যেয়ো না, আর তাদের সঙ্গে যখন কথা বলবে তখন তাদের এবং তোমাদের মাঝখানে একটি বর্শার পরিমাণ দূরত্ব থাকা উচিত। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৮১) সাকিফ গোত্রের একটি প্রতিনিধিদল রসুল (স)-এর কাছে উপস্থিত হয়। তাদের মধ্যে একজন কুষ্ঠরোগী ছিল। সে রসুল (স)-এর হাতে হাত দিয়ে বাইআত নিতে চেয়েছিল। রসুল (স) তার হাতে হাত না মিলিয়ে বলেন, ‘আমি তোমাকে (স্পর্শ না করেই) বাইআত করলাম, অতএব তুমি চলে যাও।’ (সহিহ মুসলিম, হদিস :২২৩১) হাদিস শরিফে প্লেগ-সম্পর্কিত বর্ণনায় এসেছে, ‘যদি কোনো স্থানে প্লেগ প্রকাশ পাওয়ার কথা শোনো, তখন তথায় প্রবেশ কোরো না। আর যদি তোমাদের বসবাসের এলাকায় প্লেগ দেখা দেয়, তখন সেখান থেকে পালিয়ে যেয়ো না। (সহিহ বুখারি, হাদিস :৫৭২৭-৫৭২৮) এতে বোঝা যায়, রসুল (স) প্লেগ-বিদূষিত এলাকায় এজন্য যেতে নিষেধ করেছেন যে সেখানে গেলে প্লেগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
করোনাকালীন সময়ে জরুরি দোয়া ও আমল :১. রসুল (স)-এর নির্দেশ অনুসরণে রোগমুক্তির উদ্দেশ্যে সবাই সালাতুল হাজাত আদায় করবে। এটা অত্যন্ত উপকারী ও পরীক্ষিত আমল। ২. উচ্চারণ :‘রাব্বিগ ফিরলি ওয়ার হামনি।’ অর্থ : হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দিন এবং আমার ওপর অনুগ্রহ করুন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮৯৪) ৩. উচ্চারণ :আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুজামি, ওয়ামিন সাইয়্যিইল আসকাম। অর্থ :হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে। (আবু দাউদ, হাদিস :১৫৫৪) ৪. উচ্চারণ :বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম। অর্থ : আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সবকিছু শোনেন এবং সবকিছু জানেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, এই দোয়া সকালে পাঠ করলে সারা দিন নিরাপদে থাকবে আর বিকালে পাঠ করলে সারা রাত্রি নিরাপদে থাকবে। (আবু দাউদ হাদিস : ৫০৮৬) ৫. আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে। রসুল (স) সব বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সাহাবায়ে কেরামকে আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত করার তাগিদ দিয়েছেন। এটি পাঠ করে নিজের শরীরে ও বাচ্চাদের শরীরে দম করবে (ফুঁ দেবে)। ৬. সকাল-বিকাল সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করবে। সুরা ফাতিহার অন্য নাম দোয়ার সুরা ও শিফার সুরা।
মসজিদে নামাজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে ধর্ম মন্ত্রণালয়
৭. সকাল-বিকাল সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে নিজের শরীরে ও বাচ্চাদের শরীরে দম করবে (ফুঁ দেবে)। আর করোনা ভাইরাসের মতো কঠিন রোগবালাইর সময় স্বাস্থ্যগত, সরকারি ও ধর্মীয় নিয়মাবলি অনুসরণ করা কর্তব্য।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য, কো-চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রোগী কল্যাণ সোসাইটি