শিরোনাম
কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। দাজ্জালের আগমন কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত। মানব জাতির জন্যে দাজ্জালের চেয়ে অধিক বড় বিপদ আর নেই। বিশেষ করে সে সময় যে সব মুমিন জীবিত থাকবে, তাদের জন্য ঈমান নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। সব নবীই আপন উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন। দাজ্জাল কেমন হবে, সেই ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।
দাজ্জালের যেসব ক্ষমতা দেখে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে
ক. একস্থান হতে অন্য স্থানে দ্রুত পরিভ্রমণ: নাওয়াস বিন সামআন থেকে বর্ণিত, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে দাজ্জালের চলার গতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘দ্রুতগামী বাতাস বৃষ্টিকে যেভাবে চালিয়ে নেয়, দাজ্জালের চলার গতিও সেরকম হবে।’ তিনি আরো সংবাদ দিয়েছেন, যে মক্কা ও মদিনা ব্যতীত পৃথিবীর সব অঞ্চল সে পরিভ্রমণ করবে। মক্কা ও মদিনার সব প্রবেশ পথে ফেরেশতারা তলোয়ার হাতে নিয়ে পাহারা দেবে।
খ. দাজ্জালের সঙ্গে জান্নাত-জাহান্নাম: দাজ্জালের জাহান্নামের আগুন প্রকৃতপক্ষে সুমিষ্ট পানি এবং জান্নাত হবে জাহান্নামের আগুন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দাজ্জালের সঙ্গে যা থাকবে তা আমি অবগত আছি। তার সাথে দুটি নদী প্রবাহিত থাকবে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটিতে সুন্দর পরিস্কার পানি দেখা যাবে। অন্যটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যাবে। যার সঙ্গে দাজ্জালের সাক্ষাৎ হবে, সে যেন দাজ্জালের আগুনে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে পান করে। কারণ উহা সুমিষ্ট পানি। তার চোখের উপরে মোটা আবরণ থাকবে। কপালে কাফের লেখা থাকবে। মূর্খ ও শিক্ষিত সকল ঈমানদার লোকই তা পড়তে সক্ষম হবে।’
গ. দাজ্জাল মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করবে: দাজ্জাল তার কর্মকাণ্ডে শয়তানের সহযোগিতা নিবে। শয়তান কেবল মিথ্যা ও গোমরাহী এবং কুফরী কাজেই সাহায্য করে থাকে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দাজ্জাল মানুষের কাছে গিয়ে বলবে, আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করে দেখাই, তাহলে কি তুমি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে? সে বলবে অবশ্যই মানব। এ সুযোগে শয়তান তার পিতা-মাতার আকৃতি ধরে সন্তানকে বলবে, হে সন্তান! তুমি তার অনুসরণ কর। সে তোমার প্রতিপালক।’
ঘ. দাজ্জালের ডাকে আকাশও সাড়া দেবে: দাজ্জালের ফিতনার মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে পরীক্ষা করবেন। দাজ্জাল আকাশকে আদেশ দিবে বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্যে। আকাশ তার আদেশে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। জমিনকে ফসল উৎপন্ন করতে বললে করবে। চতুষ্পদ জন্তুকে ডাক দিলে তারা দাজ্জালের ডাকে সাড়া দিবে। ধ্বংস প্রাপ্ত ঘরবাড়িকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দাজ্জাল এক জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনার জন্য বলবে; এতে তারা ঈমান আনবে। দাজ্জাল তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্য আকাশকে আদেশ দিবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে। যমিন ফসল উৎপন্ন করবে এবং তাদের পশুপাল ও চতুষ্পদ জন্তুগুলো অধিক মোটা-তাজা হবে এবং পূর্বের তুলনায় বেশি দুধ প্রদান করবে। অতঃপর অন্য একটি জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। লোকেরা তার কথা প্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল তাদের নিকট থেকে ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসবে। এতে তারা চরম অভাবে পড়বে। তাদের ক্ষেত-খামারে চরম ফসলহানি দেখা দেবে। দাজ্জাল পরিত্যক্ত ভূমিকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে। গুপ্তধনগুলো বের হয়ে মৌমাছির দলের ন্যায় তার পিছে পিছে চলতে থাকবে।’
ঙ. মুমিন যুবককে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে: হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, দাজ্জাল বের হয়ে মদিনার দিকে অগ্রসর হবে। যেহেতু মদীনায় দাজ্জালের প্রবেশ নিষেধ, তাই সে মদীনার নিকটবর্র্তী একটি স্থানে অবস্থান করবে। তার কাছে একজন মুমিন লোক গমণ করবেন। তিনি হবেন ঐ যামানার সর্বোত্তম মুমিন। দাজ্জালকে দেখে তিনি বলবেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি সেই দাজ্জাল যার সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সাবধান করেছেন। তখন দাজ্জাল উপস্থিত মানুষকে লক্ষ্য করে বলবে, আমি যদি একে হত্যা করে জীবিত করতে পারি, তাহলে কি তোমরা আমার ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করবে? লোকেরা বলবে, না। তারপর সে উক্ত মুমিনকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। এ পর্যায়ে যুবকটি বলবে, আল্লাহর শপথ! তুমি যে মিথ্যুক দাজ্জাল- এ সম্পর্কে আমার বিশ্বাস আগের তুলনায় আরো মজবুত হলো। দাজ্জাল তাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না।
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে, ওই যুবক দাজ্জালকে দেখে বলবে, হে লোক সকল! এটি সেই দাজ্জাল যা থেকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সাবধান করেছেন। অতঃপর দাজ্জাল তার অনুসারীদেরকে বলবে, একে ধর এবং প্রহার কর। তাকে মেরে-পিটে যখম করা হবে। অতঃপর দাজ্জাল তাকে জিজ্ঞেস করবে এখনও কি আমার প্রতি ঈমান আনবে না? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, উক্ত যুবক বলবে, তুমি মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। তারপর দাজ্জালের আদেশে তার মাথায় করাত লাগিয়ে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে। দাজ্জাল দু’খন্ডের মাঝ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করবে।
অতঃপর বলবে, উঠে দাঁড়াও। তিনি উঠে দাড়াবেন। দাজ্জাল বলবে এখনও ঈমান আনবে না? তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যুক দাজ্জাল হওয়ার ব্যাপারে এখন আমার বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অতঃপর তিনি বলবেন, হে লোক সকল! আমার পরে আর কারো সঙ্গে এরূপ করতে পারবে না। অতঃপর দাজ্জাল তাকে পাকড়াও করে আবার যবেহ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তার গলায় জবাই করার স্থানটি তামায় পরিণত হয়ে যাবে। কাজেই সে জবাই করতে ব্যর্থ হবে। অতঃপর তার হাতে-পায়ে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। লোকেরা মনে করবে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অথচ সে জান্নাতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ওয়াসাল্লাম বলেন, এই ব্যক্তি হবে পৃথিবীতে সেদিন সবচেয়ে মহা সত্যের সাক্ষ্য দানকারী।’
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ