শিরোনাম
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষ সৃষ্টি করেছেন। সেই সাথে তার জীবনকে আন্দময় করার জন্য যাবতীয় নাজ-নেয়ামত দিয়ে রেখেছেন। অন্য দিকে সুখের পাশাপাশি মানুষের জন্য দুঃখও রেখেছেন। যাতে জীবনের ভারসাম্য বজায় থাকে। জীবন বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠে। জীবনের প্রকৃত স্বার্থকতা মানুষ উপলব্ধি করতে পারে। ছোট-বড় সব ধরনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সে সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা করে। কখনো সে যেন ঈমানহারা না হয়। তাই সুখ-দুঃখ মানবজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। একে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েই জীবনযাপন করতে হয়।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘আমি মানুষকে এক কঠোর পরিশ্রমের মাঝে সৃষ্টি করেছি’ (সূরা বালাদ : ৪)। অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়ভীতি, ক্ষুধার কষ্ট, জানমাল ও ফসলের ক্ষতিসাধন করে। যারা ধৈর্যের সাথে এর মোকাবেলা করে, তুমি ওই সমস্ত ধৈর্যশীলদের জান্নাতের সুসংবাদ দান করো। যখন তাদের ওপর বিপদ-আপদ আসে তখন যেন তারা বলে, অবশ্যই আমরা আল্লাহর তায়ালার জন্য। একদিন অবশ্যই তার কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে’ (সূরা বাকারা : ১৫৫-৫৬)।
তাই বিপদে-আপদে কোনোভাবেই নিরাশ হওয়া যাবে না। বরং ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে আল্লাহর প্রতি আরো বেশি তাওয়াক্কুল করতে হবে। যখনই কোনো বিপদ আসবে তার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। নিজেও সেই বিপদকে কাটিয়ে উঠার জন্য চেষ্টা করতে হবে। সেই চেষ্টাও যেন দ্বীনের পথে থেকে হয়। তাগুতের পথে নয়। কারণ মুমিন-মুসলমানের জন্য দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট ও আনন্দ-বিনোদন সব কিছুতেই কল্যাণ, যদি সে আল্লাহর দেখানো পথ ও মতের ওপর অটল থেকে দুনিয়ার জিন্দেগি পরিচালনা করে।
হাদিস শরিফে এসেছে, ‘ঈমানদারের জীবন বড়ই আশ্চর্যের বিষয়। তার সব কিছুতেই কল্যাণ। ঈমানদার ছাড়া আর কেউ এমন হয় না, যে সুখ পেলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। যা তার জন্য কল্যাণকর। আবার দুঃখ এলে সে ধৈর্য ধারণ করে। এটাও তার জন্য কল্যাণকর’ (মুসলিম, হাদিস নম্বর-২৯৯৯)।
মানুষের জীবন বড়ই আজব। কেউ জানে না তার হায়াত কখন ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু মানুষকে মরতে হবে এ কথা সবাই জানে। আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে তা-ও কারো আজানা হয়। তবুও মানুষ কখনো কখনো দুনিয়ার লালসায় সে কথা ভুলে যায়। সামান্য স্বার্থের জন্য নিজেকে বিক্রি করে দেয়। ক্রমাগত তার এই অধঃপতন তাকে এক সময় নামসর্বস্ব মানুষে পরিণত করে। সে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাতারে নিজেকে শামিল করে নেয়। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তবে ওই সমস্ত মানুষ ব্যতীত যারা ঈমান এনছে ও নেককাজ করেছে, এক অপরকে ভালো কাজ করার তাগিদ দিয়েছে আর একে অপরকে ধৈর্যধারণ করার উপদেশ দিয়েছে’ (সূরা আসর : ২-৩)।
কিছু মানুষ এমন আছে যাদের বিপদে পড়লে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। অন্য সময় আল্লাহকে ভুলে যায়। আবার এমনো কিছু মানুষ আছে যারা শয়তানকে নিজেদের বন্ধুু বানিয়ে নিয়েছে। বিপদে-আপদে ও সুখের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করে মানুষের শরণাপন্ন হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষকে যখন কোনো দুঃখ-দুর্দশা স্পর্শ করে তখন সে শুয়ে-বসে দাঁড়িয়ে সর্বাবস্থায় আমাকে ডাকে। আমি যখন তার দুঃখকষ্ট দূর করে দিই তখন সে এমনিভাবে চলতে শুরু করে, তাকে যে একসময় দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করেছিল আর তা দূর করার জন্য সে আমাকে কখনোই ডাকেনি; এভাবে যারা সীমালঙ্ঘন করে তাদের জন্য তাদের যাবতীয় কাজকর্মকে শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে’ (সূরা ইউনুস, আয়াত-১২)।
মানুষ বিপদে পড়লে আল্লাহকে ডাকবে। তার সাহায্য চাইবে এটাই স্বাভাবিক। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে, একবার যে ভুলটি আমি করলাম- হোক সেটি শয়তানের প্ররোচনায় বা নফসের তাগিদে, সেই ভুলটি আমি আর দ্বিতীয়বার করব না। বাকি জীবনটা আমি এভাবে পাপকে বিদায় জানিয়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেবো।