শিরোনাম
ইবাদত-বন্দেগিসহ সব সময় সাধ্যমতো উত্তম পোশাক পরা ভালো কাজ। সুন্দর পোশাক পরায় বান্দার সংযমশীলতা ও তাকওয়া প্রকাশ পায়। জামা-কাপড় গায়ে দিয়ে যারা আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে বা দোয়া পড়বে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও পরকালে অনেক নেয়ামত। এ কারণে জামা-কাপড় গায়ে দেওয়ার সময় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতেন। জামা-কাপড় পরার ফজিলত বর্ণনা করে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন-
‘যে ব্যক্তি নতুন কাপড় পরার সময় এ দোয়া পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে দুনিয়া ও পরকালে নিজের নিরাপত্তা ও পর্যবেক্ষণে রাখবেন।' (তিরমিজি)
পোশাক-পরিচ্ছেদ মহান আল্লাহর নেয়ামত। কারণ পোশাক পরলে মানুষের লজ্জা-শরম নিবারণ হয় পাশাপাশি মর্যাদাবোধ ও আভিজাত্য ফুটে ওঠে। সভ্যতা, সংস্কৃতি, সৌন্দর্য্য ও রুচিবোধ প্রকাশ পায়। এ নেয়ামতের কথা তুলে ধরে মহান আল্লাহ বলেন-
یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ قَدۡ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡکُمۡ لِبَاسًا یُّوَارِیۡ سَوۡاٰتِکُمۡ وَ رِیۡشًا ؕ وَ لِبَاسُ التَّقۡوٰی ۙ ذٰلِکَ خَیۡرٌ ؕ ذٰلِکَ مِنۡ اٰیٰتِ اللّٰهِ لَعَلَّهُمۡ یَذَّکَّرُوۡنَ
‘হে বনি আদম! আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবর্তীণ করেছি সাজ-সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেজগারীর পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সুরা আরাফ: আয়াত ২৬)
পোশাক পরার সুন্নাত নিয়ম
পোশাক পরার সুন্নত নিয়ম হলো, পোশাক পরার সময় বিসমিল্লাহ বলে পোশাক পরা শুরু করা। পোশাক পরার সময় আগে ডান পাশ দিয়ে পোশাক পরা। আর পোশাক খোলঅর সময় বাম পাশ দিয়ে খোলা সুন্নত। নতুন পোশাক পরার সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং দোয়া পড়া সুন্নত।
পোশাক পরার নসিহত ও দোয়া
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নতুন পোশাক পরার সময় ওই পোশাকের নাম ধরে আনন্দ প্রকাশ করতে বলেছেন। পোশাক পরার ব্যাপারে নসিহত ও দোয়া পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একাধিক হাদিসে এসেছে-
১. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো নতুন কাপড়, পাগড়ি, জামা অথবা চাদর পরতেন, তখন ওই কাপড়ের নাম ধরে বলতেন-
اَللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ كَسَوْتَنِيْهِ أَسْئَلُكَ خَيْرَهُ وَ خَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّهِ وَ شَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আনংতা কাসাওতানিহি আসআলুকা খায়রাহু ওয়া খায়রা মা সুনিআ লাহু ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহি ওয়া শাররি মা সুনিআ লাহু।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসা, তুমি আমাকে এ কাপড় পরিয়েছ, আমি তোমার কাছে এর কল্যাণের প্রত্যাশী । যে কল্যাণের উদ্দেশ্যে এ কাপড় তৈরি করা হয়েছে। আর আমাকে তোমার আশ্রয়ে দিচ্ছি। এ কাপড় যে মন্দ উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে সে মন্দ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (আবু দাউদ)
২. হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নতুন কাপড় পরবে, তার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তবে পুরাতন কাপড়টি গরিবদের দান করে দেওয়া। আর নতুন কাপড় পরার সময় এ দোয়া পড়া-
اَلْحَمْدُ للهِ الَّذِى كَسَانِىْ مَا اُوَارىُ بِهِ عَوْرَاتِىْ وَ اَتَجَمَّلُ بِهِ فِىْ حَيَاتِىْ
উচ্চারণ : ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি কাসানি মা উয়ারিউবিহি আওরাতি ওয়া আতাঝাম্মালুবিহি ফি হায়াতি।’
অর্থ : সব ওই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে কাপড় পরিয়েছেন। যার দ্বারা আমি লজ্জা নিবারণ করি এবং আমার জীবনে শোভা ও সৌন্দর্য্য লাভ করি।’
যে ব্যক্তি নতুন কাপড় পরার সময় এ দোয়া পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে দুনিয়া ও পরকালে নিজের নিরাপত্তা ও পর্যবেক্ষণে রাখবেন।' (তিরমিজি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত নতুন কাপড়/পোশাকসহ সব সময় কাপড়/পোশাক পরার সময় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। আর তাতে প্রথমত আদায় করা হবে আল্লাহর শুকরিয়া আর দ্বিতীয়ত পাওয়া যাবে অনন্য নেয়ামত দুনিয়া ও পরকালের নিরাপত্তা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ ও নিরাপত্তা লাভে এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে পোশাক পরার সময় হাদিসে শেখানো দোয়া যথাযথভাবে পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।’