রোজার আধুনিক ৩০ মাসআলা

ফানাম নিউজ
  ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০০:৫২

আধুনিকতার উৎকর্ষে আমাদের জীবনযাত্রায় এসেছে বদল। যুক্ত হয়েছে নানা সরঞ্জাম, পরিভাষা। ঠিক তেমনি মাহে রমজানে রোজা রেখে চিকিৎসা বিজ্ঞান ও অন্যান্য আধুনিক নানা বিষয় আমাদের জীবনের তাগিদে গ্রহণ করতে হয়।

সেসবের কোনটা গ্রহণ করলে রোজা হবে, আর কোনটা করলে হবে না; তা জানাচ্ছেন—মুফতি মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

ইনজেকশন (Injection)

ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙবে না। (জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া)।

ইনহেলার (Inhaler)

শ্বাসকষ্ট দূর করার লক্ষ্যে তরল জাতীয় একটি ওষুধ স্প্রে করে মুখের ভেতর দিয়ে গলায় প্রবেশ করানো হয়। এভাবে মুখের ভেতর ইনহেলার স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। (ইমদাদুল ফাতাওয়া)।

এনজিওগ্রাম (Angio Gram)

হার্ট ব্লক হয়ে গেলে উরুর গোড়া দিয়ে কেটে বিশেষ রগের ভেতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয়, তার নাম এনজিও গ্রাম। এ যন্ত্রটিতে যদি কোনো ধরনের ওষুধ লাগানো থাকে, তারপরও রোজা ভাঙবে না। (ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা)।

এন্ডোস কপি (Endos Copy)

চিকন একটি পাইপ, যার মাথায় বাল্ব জাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলিতে ঢুকানো হয়। বাইরে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করা হয়। এ নলে যদি কোনো ওষুধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভেতর দিয়ে পানি/ওষুধ ছিটানো হয়ে থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। আর যদি কোনো ওষুধ লাগানো না থাকে, তাহলে রোজা ভাঙবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)।

নাইট্রোগ্লিসারিন (Nitro Glycerin)

এরোসল জাতীয় ওষুধ, যা হার্টের জন্য দুই-তিন ফোটা জিহ্বার নিচে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। ওষুধটি শিরার মাধ্যমে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। ওষুধের কিছু অংশ গলায় প্রবেশ করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব, এতে রোজা ভেঙে যাবে। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)।

লেপারোস কপি (Laparoscopy)

শিক্ জাতীয় একটি যন্ত্র দ্বারা পেট ছিদ্র করে পেটের ভেতরের কোনো অংশ বা গোশত ইত্যাদি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের করে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র। এতে যদি ওষুধ লাগানো থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। অন্যস্থায় রোজা ভাঙবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহিয়া)।


অক্সিজেন (Oxygen)

রোজা অবস্থায় ওষুধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোজা ভাঙবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)।

মস্তিষ্ক অপারেশন (Brain Operation)

রোজা অবস্থায় মস্তিষ্ক অপারেশন করে ওষুধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক, রোজা ভাঙবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহিয়া)।

রক্ত নেওয়া বা দেওয়া

রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের করলে বা শরীরে প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না। (আহসানুল ফাতাওয়া)।

সিস্টোসকপি (cystoscopy)

প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয়, এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না। (হেদায়া)।

প্রক্টোসকপি (proctoscopy)

পাইলস, পিসার, অর্শ, হারিশ, বুটি ও ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপ বলে। মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যাতে ব্যথা না পায়, সেজন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় কোনো পিচ্ছিল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরি ভেতরে প্রবেশ করে না। চিকিৎসকদের মতানুসারে ওই পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সঙ্গে মিশে থাকে এবং নলের সঙ্গেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। আর থাকলেও তা পরবর্তী সময়ে বেরিয়ে আসে। যদিও শরীর তা চোষে না, কিন্তু ওই বস্তুটি ভেজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙে যাবে। (ফতোয়ায়ে শামি)।

কপার-টি (Coper-T)

কপার-টি বলা হয় যোনিদ্বারে প্লাস্টিক লাগানোকে। যেন সহবাসের সময় বীর্যপাত হলে বীর্য জরায়ুতে পৌঁছাতে না পারে। এ কপার-টি লাগিয়েও সহবাস করলে রোজা ভেঙে যাবে। কাজা-কাফফারা উভয়টাই ওয়াজিব হবে। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)।

সিরোদকার অপারেশন (Shirodkar Operation)
সিরোদকার অপারেশন হলো, অকাল গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জরায়ুর মুখের চতুষ্পার্শ্বে সেলাই করে মুখকে খিচিয়ে রাখা। এতে অকাল গর্ভপাত রোধ হয়। যেহেতু এতে কোনো ওষুধ বা বস্তু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি স্থানে পৌঁছে না, তাই এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)।

ডিএন্ডসি (Dilatation and Curettage)

ডিএন্ডসি হলো, আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্য Dilator এর মাধ্যমে জীবিত কিংবা মৃত বাচ্চাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে নিয়ে আসা। এতে রোজা ভেঙে যাবে। অযথা এমন করলে কাজা-কাফফারা উভয়টি দিতে হবে এবং তওবা করতে হবে। (হেদায়া)।

এম আর (M.R)
এম আর হলো, গর্ভধারণের পাঁচ থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ুতে এম আর সিরিঞ্জ প্রবেশ করিয়ে জীবিত কিংবা মৃত ভ্রণ নিয়ে আসা। যার পর ঋতুস্রাব পুনরায় হয়। অতএব, মাসিক শুরু হওয়ার কারণে রোজা ভেঙে যাবে এবং কাজা করতে হবে। কিন্তু যদি রাতের বেলা করা হয়, তাহলে দিনের রোজা কাজা করতে হবে না। (ফাতহুল কাদির)।

আলট্রাসনোগ্রাম (Ultrasongram)

আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষায় যে ওষুধ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, সবই চামড়ার ওপরে থাকে। তাই আলট্রাসনোগ্রাম করলে রোজা ভাঙবে না। (হেদায়া)।

স্যালাইন (Saline)
স্যালাইন নেওয়া হয় রগে। আর রগ যেহেতু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য স্থান নয়, তাই স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না। তবে রোজার কষ্ট লাঘবের জন্য স্যালাইন নেওয়া মাকরুহ। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ)।

টিকা নেওয়া (Vaccine)

টিকা নিলে রোজা ভাঙবে না। কারণ, টিকা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য কোনো স্থানে ব্যবহার করা হয় না। (আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল)।

ঢুস লাগানো (Douche)
ঢুস মলদ্বারের মাধ্যমে দেহের ভেতরে প্রবেশ করে, তাই ঢুস নিলে রোজা ভেঙে যাবে। ঢুস যে জায়গা বা রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে, সে জায়গা বা রাস্তা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য স্থান । (ফতোয়ায়ে শামি)।

ইনসুলিন (Insulin) গ্রহণ করা

ইনসুলিন নিলে রোজা ভাঙবে না। কারণ, ইনসুলিন রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে না এবং গ্রহণযোগ্য খালি জায়গায় প্রবেশ করে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)।

দাঁত তোলা

রোজা অবস্থায় একান্ত প্রয়োজন হলে দাঁত তোলা জায়েজ আছে। তবে অতি প্রয়োজন না হলে এমনটা করা মাকরুহ। ওষুধ যদি গলায় চলে যায় অথবা থুথু থেকে বেশি অথবা সমপরিমাণ রক্ত যদি গলায় যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (আহসানুল ফাতাওয়া)।

পেস্ট, টুথ পাউডার ব্যবহার করা

রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথ পাউডার, পেস্ট, মাজন ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরুহ। কিন্তু গলায় পৌঁছালে রোজা ভেঙে যাবে। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)।

মেসওয়াক করা

শুকনো বা কাঁচা মেসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজার দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। চাই যখনই করা হোক না কেন। (ফতোয়ায়ে শামি)।

মুখে ওষুধ ব্যবহার করা

মুখে ওষুধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে বা ওষুধের অংশ বিশেষ গলায় প্রবেশ করলে রোজা ভেঙে যাবে। গলায় প্রবেশ না করলে রোজা ভাঙবে না। (ফতোয়ায়ে শামি)।

রক্ত পরীক্ষা

রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে খুব বেশি পরিমাণে রক্ত দেওয়া, যার দ্বারা শরীরে দুর্বলতা আসে, তা মাকরুহ। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)।

ডায়াবেটিসের ‍সুগার মাপা

ডায়াবেটিসের ‍সুগার মাপার জন্য সুচ ঢুকিয়ে যে একফোঁটা রক্ত নেওয়া হয়, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)।

নাকে ওষুধ দেওয়া

নাকে পানি বা ওষুধ দিলে যদি তা খাদ্যনালিতে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং কাজা করতে হবে। (ফতোয়ায়ে রাহমানিয়া)।

চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করা

চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করার দ্বারা রোজা ভাঙবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় অনুভব হয়। (হেদায়া)।

কানে ওষুধ প্রদান করা

কানে ওষুধ, তেল ইত্যাদি ঢুকালে রোজা ভেঙে যাবে। তবে গোসল করার সময় অনিচ্ছায় যে পানি কানে ঢোকে, তাতে রোজা ভঙ্গ হবে না। অবশ্য এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যেন পানি গলায় না চলে যায়। (মাকালাতুল ফিকহিয়া)।

নকল দাঁত মুখে রাখা

রোজা রেখে নকল দাঁত মুখে স্থাপন করে রাখলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। (ইমদাদুল ফাতাওয়া)।

সূত্র: জাগো নিউজ

ধর্ম এর পাঠক প্রিয়