শিরোনাম
আজ পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম জুমা এবং রহমতের দশকের তৃতীয় রোজা রাখার আমরা সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ।
বিশ্বময় মহামারি করোনার কারণে যদিও মনে প্রশান্তি নেই তারপরেও বিশ্বমুসলিম উম্মাহ বিশেষ ইবাদতে রত থেকে মাহে রমজানের দিনগুলো অতিবাহিত করছেন। কেননা মুমিনের বসন্তকাল হচ্ছে রমজান।
পবিত্র মাহে রমজানের প্রতিটি সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া আজ পবিত্র জুমার দিন। তাই রমজান এবং জুমা একত্র হয়ে আজকের এ দিনটি একজন মুমিনের জন্য বিশেষ ইবাদতের দিনে পরিণত হয়েছে।
কেননা ইসলামে পবিত্র জুমার গুরুত্ব অতিব্যাপক। কোরআন ও হাদিস থেকে জুমার নামাযের পবিত্রতা ও গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয়।
পবিত্র কোরআনে জুমার গুরুত্ব তুলে ধরে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝো’ (সুরা জুমা: ৯)।
হাদিস পাঠেও জুমার নামাজের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি, এ চার প্রকার মানুষ ছাড়া সব মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য’ (আবু দাউদ)।
অপর এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহকারে তার খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনা ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (আবু দাউদ)।
জুমার ফযিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন’ (ইবনে মাজাহ)।
হাদিসে আরো উল্লেখ আছে মহানবী (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন’ (ইবনে মাজাহ)। জুমার ফযিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন’ (ইবনে মাজাহ)।
একটু ভেবে দেখুন, মহান আল্লাহপাক পবিত্র জুমার দিনকে আমাদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবে গোষণা করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি এই দিনের যথাযথ মূল্যায়ণ করছি?
আমরা কি আমাদের জাগতিক কাজকর্ম বন্ধ করে আজানের সাথে সাথে মসজিদে গিয়ে খুতবা, নামাজ আদায় এবং দিনের অন্যান্য সময় আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করি? তাই এদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
আজকে যেহেতু পবিত্র জুমার দিন এবং রহমতের দশক আমরা অতিবাহিত করছি তাই আমাদের উচিত হবে নিজেদের ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে বেশি বেশি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।
আমরা যদি পবিত্র হৃদয় নিয়ে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাই এবং পুণ্যকাজ করতে থাকি তাহলে হয়তো তিনি আমাদের ক্ষমার চাদরে ঢেকে রাখবেন।
আমাদের রোজাগুলোও যদি একান্তই আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হয় তাহলে তিনি আমাদের রোজা কবুল করে আমাদের পুণ্য অনেকগুণে বাড়িয়ে দিবেন।
যেভাবে হাদিসে এসেছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন: ‘তোমাদের আল্লাহ বলেছেন, প্রত্যেক নেকীর প্রতিদান দশ গুণ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত আর রোজার ইবাদত বিশেষ ভাবে আমার জন্য আর আমি স্বয়ং তার প্রতিদান দিব অথবা আমি স্বয়ং এর প্রতিদান হব’ (তিরমিজি, আবওয়াবুস সাওম)।
জুমার দিনও আল্লাহতায়ালা মুমিনের পুণ্যের প্রতিদান কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন। তাই জুমার দিন জুমার নামাজ ছাড়াও যথাসম্ভব সকল প্রকার পুণ্য কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে।
হে রহমান ও রহিম আল্লাহ! আমরা তোমার রহমতের ভিখারী।
তুমি আমাদেরকে মাহে রমজানের রহমতের দশকের রহমত থেকে বঞ্চিত করনা এবং জুমার দিনের কল্যাণ থেকে কল্যাণমণ্ডিত কর, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
[email protected]
সূত্র: যুগান্তর