শিরোনাম
দিন শেষে আজ যে রাত নেমে আসছে সেটি একটি মহিমান্বিত রাত। ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ অর্থ সৌভাগ্য। অর্থাৎ ‘শবেবরাত’ শব্দের অর্থ ‘সৌভাগ্যের রাত’।
আরবিতে একে বলে ‘লাইলাতুল বরাত’। ১৫ শাবানের এ রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এবাদত-বন্দেগি ও জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে কাটান। বিভিন্ন বর্ণনামতে, এ রাতে মহান আল্লাহ বান্দাদের জন্য তার রহমতের দরজা খুলে দেন।
পবিত্র এ রাত উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। আরও বাণী দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ আমাদের পাথেয়। এ পবিত্র রজনীতে আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে অশেষ রহমত ও বরকত কামনার পাশাপাশি দেশের অব্যাহত অগ্রগতি, কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্যের প্রার্থনা জানাই। সৌভাগ্যমণ্ডিত পবিত্র শবেবরাতের পূর্ণ ফজিলত আমাদের ওপর বর্ষিত হোক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে শবেবরাত উপলক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আসুন সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনা ব্যক্তি সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এ রাত সম্পর্কে বলেন, শাবান মাসের এই রাতকে ইসলামে ‘লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান’ বলা হয়েছে। এ রাতে আল্লাহ অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করেন, কেবল মুশরিক (আল্লাহর সঙ্গে তুলনাকারী) ও হিংসুক ছাড়া।
এ সময়ে দুই থেকে তিনটি রোজা রাখা যেতে পারে। কেননা, এই সময়টা আইয়ামে বিজের মধ্যে পড়ে। মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর পক্ষ থেকে এ রাতে এবাদতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এদিন বাড়াবাড়ি পর্যায়ের খাওয়া-দাওয়ার চেয়ে এবাদত-বন্দেগির দিকে বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন।
এশা ও ফজরের নামাজ অবশ্যই জামাতের সঙ্গে পড়তে হবে। এ ছাড়া নফল এবাদত, কুরআন তেলাওয়াত ও তসবিহ পাঠ করা যেতে পারে। পটকাবাজি-আতশবাজি অবশ্যই করা যাবে না। এটা শবেবরাতের কোনো অংশ নয়।
রেওয়াজ অনুযায়ী, উপমহাদেশের মুসলমানদের অনেকেই মহিমান্বিত রজনী উদযাপনের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রোজা রেখেছেন তারা। আজ এবং কালও সিয়াম সাধনা করবেন অনেকে। রাষ্ট্রীয়ভাবেও বাংলাদেশে দিনটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যে কারণে শবেবরাতের পরদিন সরকারি ছুটি থাকে। কালও সরকারি ছুটি, তবে এবার তা সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মধ্যে পড়েছে।
শবেবরাত বাঙালি মুসলমানদের কাছে একটি উৎসবও। ঘরে সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী ভালো খাবার, মুখরোচক হালুয়া, রুটি ও পায়েস ইত্যাদি তৈরি হয়। এসব খাবার আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাড়িতে পাঠানো হয়। বিতরণ করা হয় গরিব-দুঃখীর মাঝে। তবে ইসলামি বিশেষজ্ঞরা এগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে এবাদত-বন্দেগিকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষ্যে আজ বাদ মাগরিব ও বাদ এশা এবং রাত ২টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র শবেবরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এতে অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন ওয়াজ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে আজ।
আতশবাজি নিষিদ্ধ : আজ সন্ধ্যা থেকে আতশবাজি নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শবেবরাতের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবং অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৮ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা হতে ১৯ মার্চ ভোর ৬টা পর্যন্ত ক্ষার জাতীয় বা বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ।’ দেশের অন্যান্য নগর ও শহরগুলোতেও অনুরূপভাবে আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।