শিরোনাম
পুলিশের বিরুদ্ধে পুত্রবধূ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীকে উদ্দেশ করে ‘সাম্প্রদায়িক গালি’ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায়। তিনি বলেছেন, জাতি-ধর্মনির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে কোনো পুলিশ সদস্যের মুখে এ ধরনের শব্দ বেরোতে পারে না।
সরকার পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র বলেও মন্তব্য করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, বাতি নেভার আগে ধপ করে জ্বলে ওঠে, সরকারের অবস্থাও তা–ই। সরকারের বর্তমান কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে পতনের শেষ শিখা জ্বলে উঠছে মাত্র। এটা নিভে যাবে। কখন নিভে যাবে, তা তারা নিজেরাও অনুমান করতে পারবে না।
আজ শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন। পুলিশের সমালোচনা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের বেতনভোগী যাঁরা, তাঁদের বেতনের টাকাটা কোনো ব্যক্তি বা দল দেয় না, তা হয় জনগণের টাকায়। তারপর দায়িত্বে থাকা পোশাকধারী পুলিশের মুখ থেকে যে বক্তব্য বের হয়েছে, এটা অত্যন্ত সাম্প্রদায়িক উসকানি। আওয়ামী লীগের একমাত্র ভরসাই তো এ দেশের হিন্দুদের ভোট। আর মালাউন বলতে তো হিন্দুদেরই বোঝায়, নাকি? প্রজাতন্ত্রের পোশাক পরিহিত পুলিশ বাহিনীর মুখ থেকে এই শব্দ অত্যন্ত গর্হিত অন্যায়। এখন থেকে তার পোশাক পরার অধিকার আছে কি না, এটা সরকারকে বিবেচনা করতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বিএনপির এক নেতার বাড়িতে ছাত্রলীগের হামলা হয়। এর প্রতিবাদে জিনজিরায় বিএনপি নেতারা বিক্ষোভ মিছিল করলে লাঠিপেটা করে পুলিশ। সে সময় কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিপুণ রায় চৌধুরীকে লক্ষ্য করে সাম্প্রদায়িক গালি দেন বলে অভিযোগ গয়েশ্বর রায়ের। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস সালামের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়িন। তিনি ফোন ধরেননি।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য গয়েশ্বর বলেন, ‘আমরা দেশটাকে স্বাধীন করার সময় হিন্দু-মুসলিম দেখিনি। জাতি-ধর্মনির্বিশেষে যুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে পুলিশের মুখে এ ধরনের শব্দ শোনার জন্য আমরা জন্য প্রস্তুত না।’
এ ধরনের সাম্প্রদায়িক আচরণ বন্ধে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘আমরা কুমিল্লার ঘটনায় কিন্তু এ রকমই দেখলাম ওসির। বিরাট একটা দুর্ঘটনা ঘটাল সারা দেশে। এর রেশে দেশকে একটা অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে আজকে পড়তে হচ্ছে। এই সময়ে গণতান্ত্রিক বিশ্ব ধিক্কার দিচ্ছে পুলিশ-র্যাবের কর্মকাণ্ডে। ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। শোনা যায়, লোকে বলে পালাক্রমে আরও আসিতেছে। সে মুহূর্তেও পুলিশ কেন সংযত হচ্ছে না। এটা কি সরকারের জন্য লাভজনক, না ক্ষতিকারক—সেটা সরকারকে বুঝতে হবে। আর ঘটনা যা–ই ঘটুক না কেন, সরকারকে এর দায় বহন করতে হবে—সেটা পুলিশ হোক, ছাত্রলীগ হোক বা যুবলীগ হোক। যে জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, তার দায় সেখানকার জনপ্রতিনিধির ওপর বর্তাবে। জবাব তাঁকে দিতেই হবে।’
গয়েশ্বর রায় অভিযোগ করেন, কোন্ডা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নূর হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ। এ সময় সন্ত্রাসীরা নূর হোসেনের স্ত্রী ও তাঁর বৃদ্ধা মায়ের গায়েও হাত তোলে। এর প্রতিবাদে জিনজিরায় সংবাদ সম্মেলন শেষে মিছিল বের করলে পুলিশ নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা করে, গুলি ছোড়ে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গতকাল কেরানীগঞ্জের ওসি একটা বাজে কথা বলেছেন, আবদুস সালাম তাঁর নাম। আপনারা জানেন, নিপুণ রায় চৌধুরী কী ধরনের সংগ্রামী নেত্রী। তিনি বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বউমা হতে পারেন, কিন্তু তিনি তো বিএনপির পক্ষে গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য কম সংগ্রাম করেননি। জেল-জুলুম তাঁর ওপর লেগেই আছে। তারপরও মালাউন বলে কী বাজে কথা উচ্চারণ করেছেন ওসি। আওয়ামী লীগ নিজেদের অসাম্প্রদায়িকতার পরাকাষ্ঠা হিসেবে জাহির করে। অথচ অন্তরের মধ্যে এরা প্রতিহিংসা পোষণ করে। আজকে থানা-পুলিশ সবই আওয়ামী চেতনার লোক। তো তাদের মুখ দিয়ে এ রকম কথা বের হচ্ছে কেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর অন্তরের যে বিষ, সেটাই ওসিদের মুখ থেকে বের হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে নিপুণ রায় চৌধুরী, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডুসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: প্রথম আলো