‘কিছুই মানে না যতক্ষণ তালগাছটা বিএনপির না হয়’

ফানাম নিউজ
  ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:২৪

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া আইনে কাউকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়নি দাবি করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির ওই পথে হাঁটে না। ইনডেমনিটি কথা শুনলেই আওয়ামী লীগের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। বিএনপি ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্তক্ষরণ করিয়েছে। এই আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। এই আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাকে প্রোটেকশন দেওয়া হয়নি। 

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর দেওয়া বিএনপিসহ অন্যান্যদের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

এ সময় জাতির পিতাকে হত্যার কথা স্বীকার ও খুনিদের পুনর্বাসিত করার বিষয়টি মেনে নিয়ে জনগণের কাছে মাফ চাইলে আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে ঐক্যমতে আসবে বলে জানান আইনমন্ত্রী।

বিলটি পাশের সময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা অভিযোগ করেন, আইনটি তড়িঘড়ি করে আনা হয়েছে। এর জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি এটা তড়িঘড়ি করে করার আইন নয়, এটা সত্য। বর্তমান কমিশনের মেয়াদের মধ্যে আইন করা সম্ভব নয় এটাও বলেছি। কারণ আমি বলেছিলাম করোনার সময় যে সীমিত সময়ের জন্য সংসদ বসে এর মধ্যে এই আইন পাশ করা কঠিন হবে। সংসদকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এটা বলেছিলাম।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, সুজনের একটি প্রতিনিধি দল আমার কাছে গিয়ে আইনের একটি খসড়া দিয়ে পাশের প্রস্তাব করেন। আমি আইনটি পাশ করার জন্য সময় লাগবে বলে তাদের জানাই। তারা অর্ডিন্যান্স করে এটা করার প্রস্তাবও দেন। আমি বললাম সংসদকে পাশ কাটিয়ে এই আইন করব না। সংসদে নেওয়া ছাড়া এ আইন আমরা করবো না।

আইনমন্ত্রী বলেন, এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যেসব দল সংলাপ করেছে, আর যারা যাননি তারা সবাই নির্বাচন কমিশন নতুন আইনের মাধ্যমে ইসি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা বলেছেন, অন্য কোনোভাবে ইসি গঠন করা যাবে না। গত ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আইনের বিষয়ে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। আমরা তড়িঘড়ি করিনি। এ আইনের কথা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হয় তখনই এই আইনের বিষয়ে কথা হয়েছিল। তখনই প্রধানমন্ত্রী এই আইনটি করার জন্য বলেছিলেন।

অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, এই আইন করার প্রক্রিয়া শুরুর পর যারা বাইরে কথা বলেন তাদের আন্দোলন সৃষ্টির চেষ্টার যে টুলস বা মসলা সেটা আর থাকেনি। সেজন্যই এখন তারা উঠে পড়ে লেগেছেন এটা তড়িঘড়ি করে কেন করছেন। তারা বলছেন, এটা ইসি করার আইন হয়নি। হয়েছে সার্চ কমিটি গঠন করার আইন।

আইনে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হয়েছিল। তখন থেকেই এই সার্চ কমিটির ধারণা এসেছে। এটা কল্পনা থেকেও আসেনি, আকাশ থেকেও পড়েনি। এটা তো নতুন আবিষ্কার নয়। সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত দুই কমিশন হয়েছে। যার কারণে এটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে জনমত যাচাই তো দশ বছর ধরে হয়ে গেছে। বিষয়টি হলো তালগাছটি না পেলে অনেক কমপ্লেইন থাকে।

তিনি বলেন, দুইজন বিশিষ্ট নাগরিক কারা হবে সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা তো আইনে কোথাও বলিনি যে, সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তাদের নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বিশিষ্ট নাগরিকের ক্রাইটেরিয়া তো বলে দেওয়া হয়নি। আমরা কেবল রাষ্ট্রপতিকে এই সুযোগটি দিয়েছি।

এক্সপাঞ্জ বিষয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, উনি আগে অসংসদীয় ভাষায় কথা বলেছিলেন বলেই তা এক্সপাঞ্জ হয়। আমি অসংসদীয় ভাষায় কোনো কথা বলিনি। আমারটা এক্সপাঞ্জ হবে কেন? আমি ভাষা যেটা ব্যবহার করি তা হলো বাংলার ক্লোকিয়াল ল্যাঞ্জুয়েজ। বাংলার জনগণ যেন শুনে বুঝতে পারেন।

বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির জবাবে মন্ত্রী বলেন, উনারা তো তালগাছ চান। উনারা কিছুই মানেন না যতক্ষণ তালগাছটা উনাদের না হয়। এই সংসদই বলেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে তিন টার্মের জন্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মামলা হলে কোর্ট দুটি বিধানকেই অবৈধ ঘোষণা করে। তারপরও উনারা এটার কথা বলবেন। উনারা আদালতের রায়ও মানেন না। উনাদের কথা হলো যেটা কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী করেছেন সেটা ভালো। কিন্তু যুদ্ধ করে জাতির পিতা যেটা করে দিয়েছেন সেটা ভালো না।

বিএনপির দলীয় সদস্যদের রাজনৈতিক ঐকমত্যের দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঐক্যমত করতে হলে উনাদের সত্যকে স্বীকার করতে হবে। আর সত্যটি হচ্ছে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সত্য হচ্ছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট উনারা মানে বিএনপি বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে। সত্য হলো- উনারা ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে দেননি। খুনিদের পুনর্বাসিত করেছেন। এসব সত্য মেনে জনগণের কাছে মাফ চাইলে আমরা ঐকমতে আসব। তারা এই প্রস্তাব গ্রহণ করলে আমরা ঐক্যমতে আসব। 
  
সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত আগের দুই কমিশনকে হেফাজত দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ইনডেমনিটি আর লিগ্যাল কাভারেজ এক কথা নয়। ইনডেমনিটি হচ্ছে অন্যায় করার পরে তাকে প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য আইন করা। লিগ্যাল কাভারেজ হচ্ছে যে কোনো বৈধ কাজ যেটার লিগ্যাল কাভারেজ ছিল না, সেটা তার আওতায় আনা। ইনডেমনিটি কথা শুনলেই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। ইনডেমনিটি আওয়ামী লীগ দেয় না, এটা বিএনপি দেয়। তারা ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্তক্ষরণ করিয়েছে।

‘২১ বছর আমাদের অপেক্ষা করিয়েছে জাতির পিতার হত্যার বিচার করতে। ইনডেমনিটির কথা আর আমাদের কাছে শুনাতে আইসেন না। আমরা ওই পথে হাঁটি না। এই আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে যে কাজটা করা হয়েছে সেটা থেকে শুরু করে সেটার লিগ্যাল কাভারেজ। এই আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাকে প্রোটেকশন দেওয়া হয়নি। সেই কারণে তাদের সেসব প্রস্তাব গ্রহণ করা যায় না। তাদের এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করব। না হলে সংসদ সদস্যদের অনুরোধ করব এসব প্রস্তাব ভোটে হারিয়ে দেওয়ার জন্য।’  সূত্র: যুগান্তর