শিরোনাম
বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, জনগণের করের টাকায় চলা রাষ্ট্রীয় বাহিনী র্যাব দলীয় ক্যাডারের মতো ব্যবহার করায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকা। নিষেধাজ্ঞার পর র্যাব এখন আর গভীর রাতে সন্ত্রাসীদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যাচ্ছে না। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছে না। সূত্র: আরটিভি
রোববার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর সন্ত্রাসীরা র্যাবের কাছে সাধু হয়ে গেছে। র্যাব গুলি করা বন্ধ করে দিয়েছে। র্যাবকে দলীয় ক্যাডারের মতো ব্যবহার করে অনেক নিরপরাধ মানুষ এবং তাদের পরিবারের জীবনে সংকট তৈরি করেছে সরকার। এখন আমেরিকাকে নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কণ্ঠের স্বরও নত হয়ে গেছে। সব কিছু মিলিয়ে পরিষ্কার বোঝা যায়, সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
রুমিন ফারহানা বলেন, আমেরিকার চাপে সরকার নানান দিকে তোরজোড় শুরু করেছে। গুম হওয়া বেশ কিছু মানুষের ব্যাপারে জাতিসংঘ তথ্য চেয়েছে, তাই সরকার ব্যাপারটির সমাধান করতে চাইছে গুম হওয়া মানুষদের পরিবারের ওপর নতুন করে নিপীড়ন চালিয়ে। তাদের স্বজনকে কেউ তুলে নিয়ে যায়নি এমন কথা লিখিত বিবৃতি দিতে আর সাদা কাগজে সই দিতে বাধ্য করছে পুলিশ।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, বিরোধী দল-মত দমন, বিরাজনীতিকরণ, সেপারেশন অব পাওয়ার মুছে ফেলে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের অধীনস্ত করা, বীভৎস দুর্নীতি, সব কিছুর ফল হয়েছে এই যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশনের রিপোর্ট। এছাড়াও গণতন্ত্রের সূচক প্রকাশকারী ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, ফ্রিডম হাউজ, বেরটেলসম্যান স্টিফ টুং, ভি-ডেম, ইন্সটিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্স, মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, সিভিল লিবার্টি নিয়ে কাজ করা সিভিকাস, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স, আইনের শাসনের সূচক প্রকাশকারী ওয়ার্ল্ড জাস্টিস রিপোর্ট, দুর্নীতির সূচক প্রকাশকারী ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, নির্বাচনের মান নিয়ে সূচক প্রকাশ করা ইলেক্টোরাল ইন্টিগ্রিটি প্রজেক্টের গত কয়েক বছরের রিপোর্টে বাংলাদেশের দুরবস্থার চিত্র পরিষ্কার। এসবই সরকারের বিদায়ের ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে, সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
সরকার জনগণের করের কোটি কোটি টাকা খরচ করে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট ফার্ম পুষছে দাবি করে রুমিন ফারহানা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আর সব মন্ত্রী প্রথমে খুব কড়া ভাষায় আমেরিকাকে আক্রমণ করলেও এখন গলার স্বর নিচু। এখন নিজেদের সমস্যা খতিয়ে দেখার আলাপ হচ্ছে। প্রয়োজনে লবিস্ট, ল ফার্ম নিয়োগের কথা হচ্ছে। একটি ফার্মকে গত বছর সরকার ত্রৈমাসিক ৮০ হাজার ডলার করে দিয়েছে, বছরের যার পরিমাণ ৩ লাখ ২০ হাজার ডলার (আনুমানিক ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা)। ওই ফার্ম বিজিআর ছাড়াও গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিডল্যান্ডার গ্রুপের সঙ্গে ৪০ হাজার ডলারে এক মাসের জন্য একটি চুক্তি করেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম। এছাড়া কোনওয়াগো কনসালটিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার এক মাসের জন্য আরেকটি চুক্তি করে। ৩৫ হাজার ডলার অগ্রিম দেওয়ার শর্তে চুক্তিটি হয়, যাতে সই করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ অ্যালক্যাড অ্যান্ড ফে নামের লবিং প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ১২ লাখ ডলারের (১০ কোটি টাকার বেশি) বেশি দিয়েছে বলে দাবি বিএনপির এই সংসদ সদস্যের।