শিরোনাম
ইউনিয়ন পরিষদে ৪৩ জন চেয়ারম্যান ও পৌরসভায় ৩ জন মেয়র বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় তাদের নির্বাচিত বলা যায় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেছেন, নির্বাচন না করেই চেয়ারম্যান পদে অভিষিক্ত হওয়া এ নির্বাচনকে ম্লান করে দিয়েছে। বুধবার বিকালে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া নির্বাচনি এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।
সোমবার ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ৯টি পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনের সময়
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা রাশিয়ায় অবস্থান করছিলেন। তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত সিইসির দায়িত্ব পালন করেন মাহবুব তালুকদার। নির্বাচনের বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এদিকে বুধবার বিকালে ঢাকায় ফিরেছেন সিইসি কেএম নূরুল হুদা।
মাহবুব তালুকদার বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনে বহুদলের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের কারণ বিশ্লেষণ করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া অনিবার্য। ভোটারদের নির্বাচন বিমুখতাও আমার কাছে গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত মনে হয়।
তিনি বলেন, এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা জড়িত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সার্বিকভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করে না। রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে মিডয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবার নীরবতা আমাকে হতাশ করেছে। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমরা কি গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় শামিল হতে অনীহা প্রকাশ করছি?
নিজের দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে মাহবুব তালুকদার বলেন, ১৭ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় দিনের জন্য আমি ভারপ্রাপ্ত সিইসির দায়িত্ব পালন করি। কয়েকজন নির্বাচনে আমার সাফল্য ও ব্যর্থতা জানতে চান। এত সংক্ষিপ্ত সময়ে আকস্মিকভাবে নির্বাচনি ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, নির্বাচনে তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমি সর্বদা বলে এসেছি জীবনের চেয়ে নির্বাচন বড় নয়। তবু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সহিংসতা রোধ করা গেল না। নির্বাচনে ঘটনা বা দুর্ঘটনা যা-ই হোক না কেন, নির্বাচন কমিশনের ওপরই দায় এসে পড়ে। তবে নির্বাচনের সব দুর্ঘটনা, অর্থাৎ বিশৃঙ্খলা, অবৈধভাবে ব্যালটে সিল মারা, প্রতিপক্ষকে হুমকি দেওয়া ইত্যাদি অনাকাক্সিক্ষত বিষয়ের পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এ কমিশনার বলেন, আমার দায়িত্ব পালনকালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনানুগভাবে দায়িত্বপালনের জন্য বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়। যে সব স্থানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে এবং এর জন্য যারা দায়ী প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের আটক করা হয়েছে। যারা অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিয়েছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদেরও আটক করা হয়েছে। অধিকতর তদন্ত করে আরও অনেককে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হয়নি এবং হবে না। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে একজন সংসদ সদস্যকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের টার্নআউট মোটামুটি ভালো ছিল। ভোটের হার শতকরা ৬৯ দশমিক ৩৪ ভাগ। নির্বাচন যেহেতু অনেকের মধ্যে বাছাই। সেহেতু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়াকে নির্বাচিত হওয়া বলা যায় কি- প্রশ্ন রাখেন তিনি।