মামুনুল কাণ্ডে বিতর্কিত হেফাজত

ফানাম নিউজ
  ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:২৪

গেল বছরের মতো এ বছরও করোনা মহামারীর কারণে কয়েকমাস লকডাউনে ছিল দেশ।  তবে মহামারীর এ ছোবল ছাড়াও বেশ কিছু ঘটনা নানাভাবে আলোচনায় এসেছে। 

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে গত বছর শুরু হওয়া হেফাজতের সাবেক নেতা মামুনুল হকের আস্ফালন চলতে থাকে এ বছরও। 

২০২০ সালের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে মামুনুল হকের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয় সরকার ও ইসলামপন্থীদের। এ নিয়ে বিতর্ক ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।  

গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। সেই বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়।  ওই সংঘাতে প্রাণ হারান অন্তত ১৮ জন। 

এর মধ্যে ৩ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে ধরা পড়েন। এতে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত।

মোদিবিরোধী আন্দোলনের নামে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে বেপরোয়া তাণ্ডবের পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রিসোর্টকাণ্ডে মামুনুল হককে নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।  একইসময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাণ্ডবের অভিযোগে একে একে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার করতে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় মাওলানা মামুনুল হককে গত ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টে ধরা পড়ার পর থেকেই মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ তাকে নজরদারির মধ্যে রেখেছিল।  এ ঘটনার পর হেফাজতের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।

সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা শুরু থেকেই সমঝোতার চেষ্টা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।  কিন্তু সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত ২৫ এপ্রিল কমিটি ভেঙে দেন হেফাজত নেতারা। 

১৮ এপ্রিল দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ।

পরদিন ১৯ এপ্রিল ২০২০ সালের মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাজেদুল হক। 

শুনানি শেষে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সেদিন তার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর বিভিন্ন নাশকতার মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ধর্ষণ মামলায় বিচার শুরু

ধর্ষণ মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। গত ৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিসুর রহমান এ অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে মামুনুল হকের বিচার শুরু হয়। গত ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় ধর্ষণ মামলা করেন মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা।

রাষ্ট্রদ্রোহিতার দুই মামলা

মামুনুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দুইটি মামলা করা হয়। গত ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা ও নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক বাদী হয়ে ঢাকার আদালতে মামলা করেন।

হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত

 গত ২৬ মার্চ ও এর পরবর্তী সময়ে হেফাজতে ইসলামের সহিংস কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী নেতাদের গ্রেফতার ও নানামুখী চাপে ২৫ এগ্রিল রাতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। 

ওই দিন রাতেই ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়।  এরমধ্যে ৭ জুন ঢাকার খিলগাঁওয়ের মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে আমির পদে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী ও মহাসচিব পদে মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদীসহ ৩৩ সদস্যের নতুন কমিটি করা হয়। তবে ওই কমিটিতে আল্লামা শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ মাদানীকে রাখা হয়। যদিও ইউসুফ মাদানী ওই কমিটি প্রত্যাখান করেছেন। 

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নব গঠিত কমিটিতে রাখা হয়নি খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও তার অনুসারীদের। 

বিভিন্ন অভিযোগে জেলে থাকা ও রাজনৈতিক পরিচয়ধারী নেতাদের বাদ দিয়ে অরাজনৈতিক এই সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।