ধর্ষকদের ক্ষমতার উৎস সাদ্দাম

ফানাম নিউজ
  ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:০০

কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় সারাদেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ। ধর্ষণের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছে। পর্যটকরা যাতে কক্সবাজার বিমুখ না হয় সেজন্য ন্যাক্কারজনক এই ঘটনায় তড়িৎ পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রশাসন। ধর্ষক ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরেও রাখছে।

ঘটনার পর এ পর্যন্ত দু’জনকে শনাক্ত করেছে র‌্যাব। তারা হলো শহরের বাহারছড়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে আশিকুল ইসলাম আশিক এবং তার সহযোগী ইস্রাফিল হুদা জয়। র‌্যাব ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, তারা ছিনতাইকারী। তবে স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের মূল হোতা আশিক। তার নেতৃত্বে রয়েছে অন্তত তিন ডজন অপরাধীর একটি চক্র। এই চক্রের মূল শক্তি কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, জেলায় নিজের আধিপত্য নিশ্চিত করতে নেতা হওয়ার পর সাদ্দাম একটি গ্রুপকে প্রশ্রয় দিতে শুরু করে। ওরাই ধর্ষণের অন্যতম হোতা। ২১ ডিসেম্বর রাতেও সাদ্দামের সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডায় মেতে ছিল ধর্ষকদের দল। বাহারছড়া ল্যাবরেটরি স্কুলের পাশে এই আড্ডায় আশিক, জয়, রেশাদ, মোবারক সবাই ছিল। পরে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম সেন্টমার্টিন চলে যান। আর ন্যাক্কারজনক এই ঘটনা ঘটে ২২ ডিসেম্বর রাতে।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, আশিক, জয়া, বিজয়, রেশাদ, রানাসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র। পর্যটন এলাকা কলাতলিতে ইয়াবা ব্যবসা, ছিনতাই, অপহরণসহ সব ধরনের অপকর্ম তারাই করে। আর এদের ক্ষমতার উৎস জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম।

জানা গেছে, আশিক, জয়, বিজয়, রেশাদ ও মোবারক গংরা এক সময় ছাত্রদল করতো। সাদ্দাম নেতা হওয়ার পর ক্ষমতা জানান দিতে এবং নিজের ভিত্তি মজবুত করতে ওদের আশ্রয়দাতা হয়ে ওঠেন। কক্সবাজার শহরের বাইরে বাড়ি হওয়ায় আধিপত্যের বিচারে সাদ্দাম কিছুটা দুর্বল ছিল। ফলে ছাত্রদলের হলেও জয়, আশিক গংদের নিজের করে নিতে কোনও দ্বিধা ছিল না তার।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সারওয়ার কমলের সঙ্গে ধর্ষক গ্রুপের সদস্য আশিক ও জয়ের সখ্যতা রয়েছে। শহরের যে কোনও অনুষ্ঠানে এমপি কমলের সঙ্গে জয় ও আশিককে দেখা যেতো।

ধর্ষক গ্রুপের সদস্য আশিক ও জয়ের সঙ্গে একাধিক ছবিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ মিললেও সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, ‘ধর্ষক গ্রুপের কোনও ছেলের সঙ্গে আমার জানাশোনা নেই।’ তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার সঙ্গে ওদের কয়টা ছবি দেখেছেন? সেগুলো একই পোশাকে নাকি ভিন্ন ভিন্ন পোশাকে? আমার মোবাইলে এখন চার্জ নেই। তাই ফেসবুক দেখতে পারছি না।’

কমল বলেন, ‘ছবিগুলো বিভিন্ন প্রোগ্রামে হয়তো তুলেছে। আমার সঙ্গে আপনি ছবি তুলে চাইলে কি আমি নিষেধ করতে পারবো? এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি আমি। তা না হলে পর্যটকদের অভাবে এই পর্যটন নগরী মরে যাবে।’

স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, এ মাসের শুরুতে কমলের সঙ্গে আশিক ও জয়কে দেখা গেছে। তবে কমল দাবি করেন, কোনও মিটিংয়ে তার সঙ্গে ওদের ছবি কেউ দেখাতে পারবে না।

জেলা ছাত্রলীগের একজন নেতা বলেন, এই ঘটনার পর ধর্ষক গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য মোবারকের নামে মামলা হলে সাদ্দাম সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিজেকে মামলা থেকে বাঁচাতে।

ঘটনার পর ধর্ষকদের কয়েকজনের সঙ্গে সাদ্দামের ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সাদ্দামের দাবি, ওদের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।

সাদ্দাম বলেন, ‘ছবি থাকাই ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করে না। আমাদের সঙ্গে অনেকেই ছবি তুলতে চায়। আমরা নিষেধ করি কীভাবে।’ তার দাবি, আশিক, জয়, মোবারক, রেশাদ, বিজয় কাউকেই তিনি চেনেন না। ওরা ছাত্রলীগের কোনও পর্যায়ের নেতাও নয়।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন