শিরোনাম
নারীর প্রতি অশোভন ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও কয়েকটি অডিও ক্লিপ ফাঁসের ঘটনায় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদের সম্পদের হিসাব নিয়ে আলোচনা চলছে। সূত্র: যুগান্তর
দেখা গেছে, ১০ বছরের ব্যবধানে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে আরও বেশি।
জামালপুর আসন থেকে ২০০৮ ও ২০১৮ সালে দুই দফা নির্বাচন করেন ডা. মুরাদ। ওই দুই দফায় নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া তার হলফনামা বিশ্লেষণে এ তথ্য মিলেছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনের হলফনামায় ডা. মুরাদ তার আয়ের উৎস দেখিয়েছিলেন কেবল চিকিৎসা পেশা। আর কোনো খাত থেকে কোনো আয় ছিল না তার।
চিকিৎসা সেবা দিয়ে তিনি বাৎসরিক ৩ লাখ ৯ হাজার ৬০০ টাকা আয় করেন বলে তথ্য দেন সেই হলফনামায়।
আর ১০ বছর পরে তার সেই আয় বেড়ে হয় ১৪ লাখ টাকা। সেখানে অবশ্য আয়ের উৎস চিকিৎসা সেবা দেখাননি, বেশিরভাগটা ব্যবসা থেকে আসে বলে ২০১৮ নির্বাচনের হলফনামায় লিখেছেন তিনি।
অবশ্য দুই নির্বাচনের হলফনামাতেই মুরাদ নিজের পেশার ঘরে লিখেছেন ‘চিকিৎসা’।
পেশার ঘরে কোনো পরিবর্তন না এলেও একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনের হলফনামায় চাকরি থেকে আয়ের ঘরে কোনো অংক-ই নেই।
সেই অর্থে এই ১০ বছরে চিকিৎসা পেশায় একদিনও অংশ নেননি ডা. মুরাদ। সংসদ সদস্য হওয়ার পর ব্যবসায় মনযোগী হয়ে তার আয় বেড়ে তিনগুন।
হলফনামায় ব্যবসা থেকে বছরে ১২ লাখ টাকা, বাড়ি/এপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার ২৯৩ টাকা এবং কৃষি থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় দেখানো হয়েছে সেখানে।
২০০৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী, কোনো স্বর্ণালঙ্কার ছিল না মুরাদ বা তার স্ত্রীর। ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৭.৩০ শতাংশ অকৃষি জমির মালিক ছিলেন মুরাদ। কোনো কৃষিজমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট বা প্লট ছিল তার ওই সময়।
সে সময় মুরাদ হাসান নগদ ২ লাখ ২২ হাজার ২১৩ টাকা দেখান। সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগে দেখানো হয় ৫৪ হাজার ৯২১ টাকা। ৮ লাখ টাকা দামের একটি টয়োটা মাইক্রোবাস দেখান।
আরো দেখানো হয়, ৪০ হাজার টাকার টিভি ও ফ্রিজ। কম্পিউটার ও ওভেনসহ আরও ৪০ হাজার টাকার সম্পদ। খাট, সোফা, ডাইনিং সেট, চেয়াল টেবিল যা বাসায় ছিল তার দাম দেখানো হয়েছিল ১ লাখ টাকা।
দশ বছর পর একাদশ সংসদীয় নির্বাচনের হলফনামায় দেখা গেল, কোনো নগদ টাকা হাতে নেই এমপি মুরাদের। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২১ লাখ ২৭ হাজার ৩৫ টাকা সঞ্চয়, শেয়ারে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ, সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৩১ টাকা বিনিয়োগ।
২৫ ভরি স্বর্ণ থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে, এর দাম দেখানো হয়েছে আড়াই লাখ টাকা।
আরো দেখানো হয়েছে, ৮০ হাজার টাকা দামের টিভি ও ফ্রিজ এবং লাখ টাকা দামের ল্যাপটপ। আসবাবপত্র ছিল আড়াই লাখ টাকার।
এর বাইরে ৩ লাখ টাকার পিস্তল ও শটগানেরও মালিক তিনি তখন, যা দশ বছর আগে ছিল না।
এছাড়া জমি বিক্রি থেকে ২০ লাখ টাকা; পুঁজি হিসেবে ৬ লাখ টাকা এবং ঋণ হিসেবে দেওয়া ১৫ লাখ টাকার হিসাবও তিনি ২০১৮ সালের হলফনামায় দিয়েছেন।
প্রথমবার এমপি হওয়ার সময় কোনো কৃষিজমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট বা প্লট না থাকলেও ২০১৮ সালের হলফনামায় মুরাদ নিজের নামে সরিষাবাড়ির দৌলতপুরে ১০ বিঘা কৃষি জমি এবং ২ কাঠা ও ১.২ বিঘা অকৃষি জমি দেখিয়েছেন।
এছাড়া ঢাকার পূর্বাচলে ৫ কাঠা জমি থাকার তথ্যও দিয়েছেন, যার দাম ৩৫ লাখ ২৭ হাজার ৯৫০ টাকা।
এই দশ বছরে ডা. মুরাদের চেয়ে তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসানের সম্পদের পরিমাণ বেশি বেড়েছে।
২০১৮ সালের হলফনামায় মুরাদ তার স্ত্রীর নামে ১৫০ ভরি গয়নার তথ্য দিয়েছেন, এবার উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন ‘পৈত্রিক ও বিয়ে সূত্রে’।
২০০৮ সালে জাহানারা এহসানের কোনো সঞ্চয় বা বিনিয়োগ ছিল না। ২০১৮ সালে হলফনামার ওই ঘরে ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র থাকার তথ্য।
তার স্ত্রীর নামে পুরানা পল্টনে ছয় তলা একটি বাড়ি হয়েছে। বেইলী হাইটসে (নওশান হাইটস কলোনী) একটি ফ্ল্যাটও হয়েছে তার। এছাড়া মুরাদের ওপর ‘নির্ভরশীলদের’ একজন শান্তিনগরের কনকর্ড টুইন টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। এর সবগুলোই দান থেকে পাওয়া বলে মুরাদের ভাষ্য।