শিরোনাম
বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, একটা কথা খুব পরিষ্কার মানবাধিকার ও গণতন্ত্র-এ দুটি পরস্পরের পরিপূরক। গণতন্ত্র ছাড়া মানবাধিকার কোনোদিন রক্ষা হতে পারে না, আর মানবাধিকার ছাড়া কখনো গণতন্ত্র চলতে পারবে না। আমাদের যে মানবাধিকার ও হিউম্যান রাইটস সংগঠনগুলো আছে তাদের হিসাব বছরে, প্রায় ৬০৭ জন গুম হয়ে গেছে। আমাদের প্রায় সহস্রাধিক রাজনৈতিক কর্মী নিহত হয়েছেন, তাদের হত্যা করা হয়েছে। ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যে ঢাকা কোর্টে যান, জেলা আদালতগুলোতে যান দেখবেন, যারা আসামি হয়ে আসছেন তাদের ৯০ ভাগ বিএনপির নেতাকর্মী।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এই সেমিনার হয়।
সেমিনারে ইংরেজিতে লেখা ‘Disenfranchisement under the authoritarian regime’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা চিত্র তুলে ধরা হয় এই গ্রন্থে। অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের আমলে ‘গুম’ হওয়া সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস, বিএনপির সাজেদুল ইসলাম সুমনের ভাগ্নি আফরা আনজুম, ওমর ফারুকের স্ত্রী পারভীন আখতার, ছাত্রদলের মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আখতার স্বজনদের সন্ধান চেয়ে আবেগময় কণ্ঠে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ, কানাডা, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করতে না দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। আজ তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক তিনি। আজ তার ন্যূনতম যে চিকিৎসার অধিকার তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের বেদনার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ৮ বছর ধরে আমরা এই পরিবারগুলোর কান্না শুনেছি, শিশুদের কান্না শুনেছি। এখনো শিশুরা অপেক্ষা করে থাকে কখন তার বাবা ফিরে আসবে। এ রকম একটা ভয়াবহ মর্মস্পর্শী পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি। বাংলাদেশে আমরা যারা আছি বারবার এ কথা বলার আর প্রয়োজন নেই যে, কীভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
দেশের বিচার বিভাগ ও প্রশাসন দলীয়করণের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, বিচার বিভাগের ওপর এ দেশের মানুষ কোনো আস্থা রাখতে পারছে না। প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করে ফেলা হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে, গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা হয়েছে। বলতে কোনো দ্বিধা নেই আজকে যারা গণমাধ্যমকর্মী আছেন তারা সবচেয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে এখন কথা বলার স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ‘জাতীয় ঐক্য’ সৃষ্টি করার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন-বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, অর্থনীতিবিদ মাহবুবউল্লাহ, বিএনপির অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ।