আন্দোলন জোরদারে তৃণমূলে বার্তা

ফানাম নিউজ
  ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১২:৩২
আপডেট  : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১৩:১৪

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে টানা কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি। এ ইস্যুতে আন্দোলন জোরদার করতে ইতোমধ্যে তৃণমূলে বার্তা দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। তবে হঠকারিতা নয়, শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে দলটি। এ মুহূর্তে দলীয় প্রধানের স্বাস্থ্যের বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চান নীতিনির্ধারকরা। এজন্য সমঝোতার পথ খোলা রেখে আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করছেন তারা। পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়ানো হচ্ছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে ইতোমধ্যে তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ সারা দেশের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে আলোচনা হয়। দু-এক দিনের মধ্যে আবারও কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, এই ইস্যুতে দলের নেতাকর্মীদের অধিকাংশই হরতাল দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। কিন্তু এখনই এ ধরনের কর্মসূচিতে যেতে চায় না হাইকমান্ড। বড় আন্দোলনে যাওয়ার আগে টানা ছোট কর্মসূচি দিয়ে জনমত গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। যাতে পরবর্তী সময়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে ওঠে, সাধারণ মানুষও অংশ নেন। সূত্র জানায়, নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়ানো হচ্ছে। প্রভাবশালী দেশগুলোর উচ্চদপস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দলের নেতারা খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি তুলে ধরছেন। সম্প্রতি ঢাকা সফর করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপির এক নেতা। সেখানে খালেদা জিয়ার অবস্থা তুলে ধরা হয়। এছাড়া এই ইস্যুতে ঢাকার বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনৈতিকদেরও চিঠি দিয়ে অবহিত করা হবে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, দেশগুলো এ বিষয়ে সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। নেত্রীর চিকিৎসার জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে-একথা কখনও ভাবতে পারিনি। দেশের মানুষও কোনোদিন কল্পনা করেনি। আজ দেশের ডান-বাম সব রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দাবি তুলেছেন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার। এ অবস্থায় আমাদের সামনে আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। সে আন্দোলনে কোনো হঠকারিতা থাকবে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা সরকারের কোনো পাতা ফাঁদে পা দেব না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে এবং খালেদা জিয়ার ?সুচিকিৎসা চাই-এ শব্দটা, এ আবেগটা আমাদের শক্তি। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কর্মসূচি করে যাব। মাঠই বলে দেবে কখন কী করতে হবে। যেভাবে গণঅনশন, মানববন্ধন কর্মসূচিতে জনগণের স্রোত নেমেছে-এটা কি বড় কর্মসূচি নয়? সামনে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে।

১৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি নেতারা জানান, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরা বলেছেন, বাংলাদেশে তার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি দিতে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। শনিবার এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য তারা বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনতে পারবেন। যত বড় চিকিৎসক তারা আনতে চান, আনতে পারেন। সেটায় সরকার কোনো বাধা দেবে না। কিন্তু এটাও তাদের মনে রাখতে হবে, দেশের আইনে যা আছে, তার বাইরে গিয়ে সরকার কোনো কিছু করবে না।

বিএনপি নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ছাড়া দেশের অধিকাংশ দল খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার আহ্বান জানিয়েছে। চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ নিয়ে দেশের জনগণ ক্ষুব্ধ। বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে শনিবার নয়াপল্টনে গণঅনশন কর্মসূচিতে জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, গণফোরামসহ ২০ দল ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও অংশ নেন। এছাড়া ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সব শরিক দল, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাপ, এবি পার্টি, এনডিপি, নাগরিক অধিকারও বিবৃতি দিয়েছে। শনিবার ২০ দলীয় জোটের পাঁচটি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে স্মরকলিপি দেয়। হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ অনেকে। সবার দাবি, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হোক।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনও এ ইস্যুতে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে যুবদল আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশের জেলা-মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যদেরও মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। এছাড়া কর্মসূচি নিয়ে তৃণমূল নেতাদের দলীয় হাইকমান্ড থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে আন্দোলন জোরদারের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনের সময় কোনো উসকানিতে যেন পা দেওয়া না হয় এজন্য জেলার তৃণমূল নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া জেলার নেতারা ঢাকার কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে যেন অংশ না নেন সে ব্যাপারেও কঠোরভাবে বলা হয়েছে।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) বিদেশে সুচিকিৎসার অনুমতি নিয়ে সরকার যা করছে তাতে সারা দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, যিনি দেশ ও দেশের জনগণের জন্য সব সময় কাজ করেছেন। আজ তার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে, যা সহ্য করা হবে না। গাজীপুর মহানগরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে রয়েছি। এ নিয়ে দলের যে কোনো আন্দোলন কর্মসূচি সফলে আমরা প্রস্তুত আছি। সূত্রঃ যুগান্তর