শিরোনাম
রাজপথে পেশীশক্তি প্রদর্শনই একটি রাজনৈতিক দলের ‘সক্ষমতা' নিরূপনের চাবিকাঠি। অতীতে দেখা গেছে বিএনপি ১২/১৩ বছর ধরে বড় কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। সেই বৈঠক করার কয়েকদিন পরই দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জেলে গিয়েছিলেন দুর্নীতির মামলায়। তিনি কারাগারে যাবার আগে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন৷ তারাও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আর অনশন করেই প্রতিবাদ করেছেন৷ মানুষ সহিংসতা দেখতে চায় না৷ এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতিই দেখতে চায়৷ সূত্র: আরটিভি
খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাথার ওপরই মামলার খড়গ ঝুলছে, যার বেশিরভাগই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে নাশকতার মামলা৷ তাই আবারো রাজপথে পেশীশক্তি দেখাতে গেলে জেলে যেতে হতে পারে– এমন শঙ্কা আছে অনেকের মাঝেই৷ নির্বাচনের আগে সেরকম ঝুঁকি হয়তো নিতে চাচ্ছেন না তারা৷
পাঁচ বছর সরকারে থাকলে যে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিই নানা কারণে মানুষের মাঝে ক্ষোভ, হতাশা তৈরি হয়৷ সেই ক্ষোভ আর হতাশার সুবিধা পায় সেই দলটির প্রতিদ্বন্দ্বীরা৷ আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে পরপর তিন বার সরকার গঠন করলো৷ তাদের নেতাকর্মী ও সরকারি নানা সিদ্ধান্তে ক্ষোভ হতাশা আছে মানুষের মাঝে৷ সেখানে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে মানুষের মাঝে এক ধরনের ‘ভালো ইমেজ' তৈরির সুযোগ তৈরি হয়েছে বিএনপির কাছে৷ সেই সুযোগটিও হয়তো নিতে চান তারা৷
পনেরো বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ২০২৩ সালের নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ঘুরে দাঁড়াতে এখনই কৌশল ঠিক করতে চাইছে বলে দলটির নেতারা বলেছেন। দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অনেকে বলেছেন, তাদের নেতৃত্বের ওপর মাঠ পর্যায় থেকে রাজপথের আন্দোলনের ব্যাপারে চাপ রয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামীসহ বিশ দলীয় জোট এবং গত নির্বাচনের সময়ের জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট-দু'টি জোটই এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি বিভিন্ন সময় সমালোচনার মুখে পড়েছে।
এখন কোন ধরনের জোট করবে এ নিয়েও তাদের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে। তবে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন, মাঠে আন্দোলন গড়ে তোলা এবং সংগঠন গোছানো দুই ক্ষেত্রেই তাদের নেতৃত্ব বার বার হোঁচট খেয়েছে।
সম্প্রতি, ডিজেল-কেরোসিনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন পালন করছে বিএনপি। বিএনপি নেতা আমীর খসরু এক মানববন্ধনে বলেন, “এই ডিজেলের কারণে সাধারণ মানুষের বাসভাড়া, দ্রব্যমূল্যসহ সব কিছুর দাম বাড়বে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের কৃষকরা। যারা ডিজেলের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সেচ দিয়ে থাকেন। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়বে।”
বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির মুখে আন্দোলনের কথা গত একযুগের বেশি সময় ধরে মানুষ শুনে আসছে। কিন্তু আন্দোলন আর দেখে না জনগণ। তাদের আন্দোলন বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার অঙ্কের মতোই।
তিনি সোমবার (১৫ নভেম্বর) সকালে তার বাসভবনে ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির বর্ণচোরা রাজনীতির মুখোশ এখন উন্মোচিত, দেশের মানুষ তাদের কথা ও কাজে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। ধ্বংসের রাজনীতির উত্তরাধিকার বহন করছে বিএনপি। খুন, সন্ত্রাস আর ষড়যন্ত্র বিএনপিরই মজ্জাগত দোষ।
এদিকে খালেদা জিয়াকে (৭৬) উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার দাবিতে আগামীকাল শনিবার ৭ ঘণ্টার গণঅনশনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবিতে আগামী ২০ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে এবং সকল জেলা-মহানগরে গণঅনশন কর্মসূচি পালনের জন্য আমি সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি।
দলটির নেতারা বলছেন, চেয়ারপারসনের কিছু হলে সরকারকে তার দায় বহন করতে হবে। আর দলীয় প্রধানকে মুক্ত করতে প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত তারা। ঢাকায় কর্মসূচি পালনে উপযুক্ত জায়গা না পাওয়া গেলে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
দীর্ঘদিন ধরে মাঠে তেমন সক্রিয় নেই বিএনপি। কর্মসূচি বলতে দলীয় কার্যালয় বা জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন, আলোচনা সভা কিংবা দলের প্রতিষ্ঠাতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সম্প্রতি এমন কিছু কর্মসূচিতেও দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও সমন্বয়হীনতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। বর্তমানে বিএনপি এই আন্দোলনকে ঘিরে কতটুকু সফল হতে পারে তা সময়ই বলে দিবে।