শিরোনাম
‘নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে তাদের সহায়তা করা সরকারি দলসহ সব রাজনৈতিক দলের ভূমিকা রয়েছে। আমাদের চিরায়ত নিয়ম হলো, নির্বাচনে পরাজিত হলেই নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে দোষারোপ করে প্রশ্নবিদ্ধ করা। যা গণতন্ত্র বিকাশে সহায়ক নয়। বিতর্ক না করে বরং রাষ্ট্রপতি ও সার্চ কমিটিকে সহায়তা করুন।’
শনিবার (৬ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় তারা পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।
বক্তারা বলেন, একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে গণতান্ত্রিক সরকারের ওপর। আর গণতান্ত্রিক ও গ্রহণযোগ্য সরকার উপহার দেবে শক্তিশালী, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। আগামী ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যত বেশি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী হবে, তত নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। নির্বাচনকালে রাষ্ট্রের সকল নির্বাহী, প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের সকল প্রকার ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন করবে।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিতর্কিত করা খুব সহজ। কিন্তু বিতর্ক করা খুব কঠিন। সবাই একই মত পোষণ করবেন বিষয়টি এমন নয়। কিছু মানুষ ভিন্নমত পোষণ করবেন এটাই হলো সমাজের সৌন্দর্য। আইনি কাঠামো যতবার সংযোজন করলেন, ততবারই বিতর্কিত করলেন। সংবিধানে নির্বাচন সম্পর্কে স্পষ্ট বলা আছে। এখন আমাদের রাষ্ট্রপতি ও সংবিধানের ওপর আস্থা রাখা উচিত।
তিনি বলেন, সার্চ কমিটি আর সিলেকশন কমিটি এক নয়। একটি প্রস্তাব থেকে যোগ্য একজনকে বেছে নেওয়াই হলো সার্চ কমিটি। সার্চ কমিটি একটা প্রস্তাব দেবেন ও সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে বেছে নেবেন, সেই কাজে একটি সুন্দর সার্চ কমিটি তাকে সহায়তা করবেন। এর চাইতে সুন্দর কোনো কিছু হতে পারে বলে আমি মনে করি না।
একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাসগুপ্ত বলেন, বাংলাদেশ উন্নত দেশের সারিতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। সেই পরিস্থিতিতে যাওয়ার জন্য নির্বাচন অবশ্যই পূর্বশর্ত। নির্বাচন হতেই হবে। তবে আমাদের এটাও মনে রাখতে হব যে, যারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও আজকের বাংলাদেশকে জায়গায় নিয়ে আসতে পারেনি, শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে পারেনি, দেশের উন্নয়ন করতে পারেনি, তারাই নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে। সেটিও ভাবা দরকার। ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদালতের রায়েই সংবিধানে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এটা নিয়ে কোনো প্রস্তাবনা কিংবা আলোচনা উচিত নয়।
সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনার অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম বলেন, কোন দেশে সার্চ কমিটি আছে কি-না আপনারা চিন্তা করে দেখুন। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও সার্চ কমিটি আছে কি-না দেখতে হবে। পাকিস্তান সরকারের সব নির্বাচন বিতর্কিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্য বলুন, উন্নত দেশগুলোতেও নির্বাচন বিতর্কিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান দেখুন, পাকিস্তানের সংবিধান দেখুন, তুলনা করলেই বুঝতে পারবেন যে, বাংলাদেশের সংবিধান একটি গতিশীল সংবিধান। সংবিধান নিয়ে যারা প্রশ্ন করে, তাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই।
সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সার্চ কমিটি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেবে, এর চাইতে সুন্দর আর কী হতে পারে। এটাকে নিয়ে বিরোধ করার কোনো সুযোগ নেই। প্রধান বিচারপতি একটা সার্চ কমিটি গঠন করবেন। রাষ্ট্রপতি সেটাকে অনুমোদন দেবেন। তখন কমিশনারের হাতে সব ক্ষমতা চলে যাবে। বর্তমান সরকারের হাতে তখন কোনো ক্ষমতা থাকবে না। তাই আমরা চাই না, এটি নিয়ে আর বিতর্ক হোক।
ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা মোহাম্মদ আবেদ আলীর সভাপতিত্বে ও বুয়েটের প্রো-ভিসি ও ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খানের পরিচালনায় বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, ডুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান, সাবেক সচিব উজ্জল বিকাশ দত্ত, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. খুরশীদ আলম খান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাড. আবুল হাশেম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আহম্মেদ আবুল কালাম।
বৈঠকে আগামী নির্বাচন কমিশনের কমিশনারদের নিয়োগ কীভাবে হবে এবং সার্চ কমিটি তাদের সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে সে বিষয়ে ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম ৫টি প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবগুলো হলো- ১. সার্চ কমিটি ৫ সদস্য হতে ৯ সদস্যে গঠন করা। ২. নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি, সাবেক সফল নির্বাচন কমিশনার, ধর্মীয় গুণাবলি সম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া। ৩. সার্চ কমিটির প্রতিনিধির বিষয়ে কমিটি গঠনপূর্বে অধিকতর তদন্ত করা। ৪. রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপকালে সার্চ কমিটির প্রতিনিধিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। ৫. নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি কর্তৃক প্রস্তাবিত তালিকা রাষ্ট্রপতি সর্বাধিক অনুসন্ধান রিপোর্ট সমন্বয় করে সৎ গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, বিচক্ষণ, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও পূর্বের কর্মকাণ্ড সর্বাধিক বিশ্লেষণ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দান করতে হবে।