শিরোনাম
বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম ও তার স্বামী মাহফুজ আনামের কুশপুতুল দাহ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতাকর্মীরা। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর সুত্রাপুরে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে জহির রায়হান সাংস্কৃতিক মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু যুব মহাজোটের অভিষেক অনুষ্ঠান ও সংক্ষিপ্ত র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। কিন্তু কুচক্রী মহল সবসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। সেই কুচক্রী মহল যারাই হোক তাদের বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে সোচ্চার থাকব।
তিনি আরও বলেন, হিন্দু পরিবারের আইনটি তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এটার সিদ্ধান্ত তারা নিজেরাই নিবে। সেখানে সরকার যদি মনে করে তাহলে তাদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু কোনো মহল বিদেশি টাকা খেয়ে পারিবারিক আইন পরিবর্তন করতে পারে না। যা করার সরকার হিন্দুদের সাথে আলোচনা করে করবে। কেউ ষড়যন্ত্র করে তাই সরকারকে বিব্রত করতে পারবে না।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের প্রধান সমন্বয়কারী বিজয় কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, একসময় দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুরা নির্যাতিত হলেও প্রতিবাদের সাহস ছিল না। বর্তমান এই মহাজোট সরকারের কারণে হিন্দুরা রাজপথে নেমে নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে পেরেছে।
বর্তমানে কিছু ব্যক্তি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কারের দাবি তুলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা কে আমাদের ধর্মীয় আইন পরিবর্তনের দাবি তোলার? এই দাবির মাধ্যমে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল তৈরির চেষ্টা করছে।
মহাজোটের সার্চ কমিটির প্রধান ডি. কে. সমির বলেন, হিন্দুরা আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদও বিশ্বাস করেছিলেন হিন্দুদের ওপর। কিন্তু বর্তমানে একটি কুচক্রী মহল আওয়ামী লীগের সেই ভোটব্যাংক নষ্টের চেষ্টা করছে।
হিন্দুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় ও আইন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, হিন্দু পারিবারিক আইন পরিবর্তনের জন্য আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছে, সেখানে হিন্দু আইন সম্পর্কে কিছু না জেনে মাহফুজ আনাম, স্ত্রী শাহীন আনাম ও এঞ্জেলা গোমেজরা আইন পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে নজর দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই আমি।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নকুল কুমার চন্দ্র বলেন, কথায় আছে মায়ের থেকে মাসীর দরদ বেশি। সেই অবস্থা হয়েছে মাহফুজ আনামদের। হিন্দু সমাজে যে আইন আছে তাতেই হিন্দুরা সন্তুষ্ট। কিন্ত মাহফুজ ও শাহীন আনামরা সেই আইন পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। আসলে হিন্দুদের উপকার নয়, এর মাধ্যমে সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে তারা। হিন্দুদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর হীন উদ্দেশ্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন কাজ করছে। তাই তাদের প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান তিনি। তাদের প্রতিহত করার জন্য তিনি বিষয়টি সংসদে উত্থাপনের অনুরোধ জানান।
জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান সালমা হোসেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ আমাদের আপনাদের সবার দেশ, এখানে সবার সমান অধিকার আছে। আপনাদের সমস্যাগুলো দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে জানানো হবে। এ ছাড়াও যেকোনো প্রয়োজনে আমি আপনাদের সঙ্গে থাকবো।
জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের নবনির্বাচিত সভাপতি শ্রী প্রদীপ শংকর বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোর হস্তে প্রতিহত করা হবে।
মহাজোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও হরিচাঁদ ঠাকুরের সাধু শ্রী নির্মল ঠাকুর বলেন, যদি হিন্দু পারিবারিক আইন পরিবর্তন করতে হয় তাহলে সরকারকে হিন্দুদের সব সংগঠনের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু এই আইন যাতে পাস না হয় সে জন্য প্রয়োজনে রাজপথে আন্দোলন ও আমরণ অনশন করার হুশিয়ারি জানান বক্তারা।
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাড. গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, আজ একটি দুষ্কৃতী মহল এই অনুষ্ঠান বন্ধ চেষ্টা চালিয়েছিল। এ ছাড়াও হিন্দুদের ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু চক্র। তার মধ্যে একটি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। সরকারের শেষ সময়ে হিন্দু সমাজকে সরকারের প্রতি বিষিয়ে দিতে তারা হিন্দু পারিবারিক আইন পরিবর্তনের চেষ্টা করছে।
এ সময় শাহীন আনামকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, তারা হিন্দু সমাজের ও পরিবারের মধ্যে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করলে তাদের এনজিওর মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়া হবে। তাদের বারবার ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে, তারা ক্ষমা চায়নি। তাই তাদের বিরুদ্ধে লাগাতার বিভিন্ন কর্মসূচি চালানো হবে।