শিরোনাম
বিদেশিদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আমার লোক ভোট দিলে অন্য কেউ কেন সার্টিফিকেট দেবে? বাংলাদেশের মানুষ এদেশ স্বাধীন করেছে; কেউ সার্টিফিকেট দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেনি। দেশের মানুষের ওপর আমার বিশ্বাস থাকলে অন্য লোককে দিয়ে কেন নির্বাচন অথেনটিকেট করতে যাবো? আমি ব্যক্তিগতভাবে এ পদ্ধতির বিরুদ্ধে। আমি আমেরিকা-ভারতে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দেখিনি। আমরা ম্যাচিউরড ডেমোক্রেুসি। ডেমোক্রেসির জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি। খুব কম দেশের মানুষ ডেমোক্রেসির জন্য রক্ত দিয়েছে। আমি কেন অন্যের সার্টিফিকেটে চলবো?’
এরআগে, বিকেল ৫টার দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে তার সিলেটের বাসায় যায় মার্কিন পর্যবেক্ষক দল। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বেরিয়ে যান পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা। তিন সদস্যের মার্কিন পর্যবেক্ষক দলে ছিলেন আইআরআইয়ের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সিনিয়র উপদেষ্টা জেওফ্রি ম্যাকডোনাল্ড, সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার অমিতাব ঘোষ ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডেভিড হোগস্ট্রা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি বাস মিস করেছে। যখন জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তখন তারা ইস্যুটি ধরতে পারতো। তখন যথেষ্ট জনসমর্থন গ্রহণ করতে পারতো। কিন্তু তারা সেটি ধরতে পারেনি। তারা সবগুলো ইস্যু মিস করেছে। এটা তারা বড় ভুল করেছে। কারণ তাদের মধ্যে নেতৃত্বের অপরিপক্কতা রয়েছে। যেটা আমি সবসময়ই বলি।’
‘বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে’ মন্তব্য করে ড. মোমেন বলেন, ‘শুধু সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে বিএনপি অনেক নিচে নেমে গেছে। কারণ তারা ইস্যুভিত্তিক। তাদের ইস্যুই দুটি। একটি হলো প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, আরেকটি তাদের নেত্রীর মুক্তি। নেত্রীকেতো আওয়ামী লীগ জেলে দেয়নি। তাদের গড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার জেলে দিয়েছে। এটা নিয়ে জনগণের মাথাব্যথা নেই।’
মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন পর্যবেক্ষক দল তথ্য সংগ্রহ করছে, ভবিষ্যতে কীভাবে বাংলাদেশের বড় দুই দলের মধ্যে তিক্ততা দূর করা যায়। আজকের বৈঠকে তাদের দুইটি প্রশ্ন ছিল। প্রথমটি বড় দুইটি দলের মধ্যে তিক্ততা কমানো যায় কীভাবে। আগামীতে আমাদের কোনো সাজেশন আছে কি না? আর আরেকটি প্রশ্ন ছিল তাদের—এবারের নির্বাচনে বিএনপি এলো না কেন? আমি বলেছি, সেটা তাদের (বিএনপিকে) জিজ্ঞাসা করেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি তাদের (বিএনপি) নিজেদের মধ্যে আলোচনার অভাব আছে। তাদের লোকেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলে এরকম বোকামি সিদ্ধান্ত হতো না। নির্বাচন বয়কট করে সরকার পরিবর্তন করা যায় না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মার্কিন পর্যবেক্ষক দল জানতে চেয়েছে নির্বাচনে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? কেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে? আমি বললাম, খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। তবে আমার তিনটি পর্যবেক্ষণ আছে। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা শক্তিশালী না, বিশেষ করে বিরোধী দল নেই। যার ফলে আমার লোকেরা মনে করছে উনিতো জিতে যাবেন। তাহলে লাইনে দাঁড়িয়ে কী হবে? আমি আশা করবো দলের লোকজন ভোট দেবে। তবে সাধারণ লোকজন ভাববে উনিতো বিজয়ী হবেন, খামাখা গিয়ে ভোট দিয়ে কী হবে। আর আরেকটি হলো ভোটের তারিখ। এটা আমি খেয়াল করিনি। আমেরিকাতে মঙ্গলবারে ভোট হয়। আমাদের এখানে ৭ জানুয়ারি না হয়ে আগামী মঙ্গলবারে হলে লোকজন শহরে থাকতো। এখন টানা তিনদিন ছুটি থাকায় অনেকে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে চলে গেছে। এতে করে আমরা অনেক ভোটার হারাবো। এটা আমরা আগে খেয়াল করিনি। এটা চিন্তা করা উচিত ছিল।’
ভোটের দিন বিএনপির হরতাল প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘ইসি এত কড়া, এত শক্তিশালী যে কারণে আমরা এখন কথা বলতে পারছি না। আমাদের ভোট দেন, এ কথাও বলতে পারছি না। কারণ ইসি নিষেধ করেছে। কিন্তু অন্যান্য দলের প্রতিও তাদের এ নিষেধাজ্ঞা নেই। আমরা সরকারি দল প্রচারণা করতে পারবো না, আর ওরা (বিএনপি) প্রচারণা করতে পারবে ভোট দিও না; এটা কেমন কথা? ইসির ভূমিকা সমানভাবে হওয়া উচিত।’