শিরোনাম
টেন্ডারবাজির অভিযোগের পর ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে নেতাদের গ্রেফতার, সংগঠন থেকে বহিষ্কার, ব্যাংক হিসাব জব্দ, বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাসহ নানান নেতিবাচক শিরোনাম নিয়ে সামনে আসে যুবলীগের নাম। ২০১৯ সালের শেষ দিকে ঘটা এসব ঘটনার পর কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে যুবলীগ। এ অবস্থা থেকে বের করতে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে অভিযানের পর ওই বছরের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। নতুন নেতারা সংগঠনটির দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি হানা দেয়। সেই দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় যুবলীগ। এতে তাদের নামের পাশে ‘মানবিক’ আখ্যা যুক্ত হতে থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যাসিনোকাণ্ডের বিব্রতকর অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দুই বছরে অর্জিত সুনাম ধরে রাখাই এখন সংগঠনটির জন্য চ্যালেঞ্জ।
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশকিছু নেতার নাম আসার পর সংগঠনটির তখনকার চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয় এবং তার বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তার আগে গ্রেফতার করা হয় যুবলীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে। যাদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম উল্লেখযোগ্য।
তাদের গ্রেফতার ও ক্যাসিনো কারবারে যুবলীগ সমালোচনার মুখে পড়ার পর সপ্তম কংগ্রেসে সংগঠনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এর প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যুবলীগের মাঠের রাজনীতিতে ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
পরিচ্ছন্ন ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এ দুজন নেতৃত্বে আসায় যুবলীগ সুসংগঠিত হয়ে মূল আদর্শে ফিরে যাওয়ার আশা তৈরি হয়। গত দুই বছরে শীর্ষ এ দুই নেতা মানবিক কাজের মধ্য দিয়ে তা করতে পেরেছেন বলে মনে করছেন অনেকে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনা হানা দিলে সরকারঘোষিত লকডাউনে সারাদেশে অসহায়, দুস্থ ও কর্মহীন মানুষকে সহযোগিতা করতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে নির্দেশ দেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর কর্মহীন অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, করোনা রোগী বহন, করোনায় মৃত ব্যক্তির গোসল, জানাজা, দাফন ও সৎকার, টেলিমেডিসিন সেবা, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ভ্রাম্যমাণ বাজার, ডক্টরস সেফটি চেম্বারসহ নানা কার্যক্রমে মনোনিবেশ করে যুবলীগ। পাশাপাশি কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দেয়া, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণেও প্রশংসা কুড়ায় তারা। কেন্দ্রের পাশাপাশি যুবলীগের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিও এসব কর্মসূচি গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশের প্রতিটি জেলায় সচ্ছল যুবলীগ নেতাকর্মীদের মাধ্যমে অসহায় গৃহহীন মানুষকে বিনামূল্যে গৃহনির্মাণ করে দিতে কর্মসূচিও গ্রহণ করে সংগঠনটি।
করোনায় মানবিক কাজের পাশাপাশি জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষেও আগস্টজুড়ে পথশিশু ও ভবঘুরে মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করে সংগঠনটি। কর্মসূচির অংশ হিসেবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ কার্যক্রম চলমান রাখে সংগঠনটি।
করোনাকালে সংগঠনটির অসহায়কর্মী-সমর্থকদের পাশেও দাঁড়িয়েছেন নেতারা। সারাদেশে কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থককে খাদ্য সামগ্রীসহ নানা সহায়তা দেওয়া হয়।
যুবলীগের মানবিক কর্মসূচির বিষয়ে সংগঠনের উপ-দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার শাহজাদা জানান, গত বছর করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই সারাদেশে অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে যুবলীগ। এ সময়ে যুবলীগের তরফ থেকে প্রায় ৭০ লাখ অসহায় কর্মহীন মানুষের মাঝে খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, ২০ লাখ মানুষকে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে এক কোটি বৃক্ষরোপণ করা হয়। এছাড়া ৩৬৭টি গৃহহীন মানুষকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়ার কর্মসূচি চলমান।
করোনাকালে যুবলীগের এ কার্যক্রম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনীতির উদ্দেশ্য হলো জনকল্যাণ, নিজেদের কল্যাণ নয়। সংগঠনটি যা করেছে তা দলের প্রয়োজনে করেছে। তাদের পরিবর্তন হয়েছে তা বলা যাবে না। কারণ আমাদের দেশে যে রাজনীতি চলে এটা অপরাজনীতি। দলের প্রয়োজনে কাজ করে। তাই রাজনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন না হলে তৃণমূল পর্যন্ত এ ধরনের কাজের স্থায়িত্ব থাকবে বলে মনে হয় না।
তবে যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, যুবলীগের নানা ঘটনা আমরা দেখেছি। এসব ঘটনা সংগঠনটির ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। কিন্তু করোনাকালে সংগঠনটি নানা কাজে ও অসহায় মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছে। এর মধ্য দিয়ে তাদের ভাবমূর্তির উত্তরণ ঘটেছে। এখন আগের সেই অপকর্ম দেখা যায় না। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এ উত্তরণটি ঘটেছে বলা যায়।
ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার বিষয়ে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, প্রতিটি যুবকেরই রাজনীতি করার অধিকার আছে। রাজনীতি করার মাধ্যমে সংগঠিতভাবে সমাজসেবা করবে তারা। মেধাবী ও সমাজে গ্রহণযোগ্য যুবকদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করে সৃজনশীল ও ভালো কাজ করলে এ ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখা যাবে। মানুষের সহযোগিতা করাই তাদের কাজ হওয়া উচিত।
যুবলীগের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। এখনো আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলছে। করোনা মহামারিতে যুবলীগ সারাদেশে মানবিক কার্যক্রম চালিয়েছে। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করেছে। ফলে মানবিক যুবলীগ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
‘মানবিক যুবলীগ’ আখ্যা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হবে কি না জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক বলেন, হ্যাঁ, এটি অবশ্যই চ্যালেঞ্জ হবে। আমরা চেষ্টা করবো এ ধারাটা অব্যাহত রাখতে। আমরা শুরু থেকেই মানুষের জন্য কাজ করে আসছি। আগামীতেও মানুষের কল্যাণে নানামুখী কার্যক্রম থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের প্রয়োজনে মানুষের প্রয়োজনে আমরা কাজ করে যাবো। সূত্র: জাগো নিউজ