শিরোনাম
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি না দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো রাজনীতি হয়নি বলে দাবি করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করেছেন বলেও জানান তিনি।
বুধবার (৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা আইনি ব্যাপার, এখানে রাজনীতির কোনো প্রশ্ন নেই। তার (খালেদা জিয়া) পরিবার দরখাস্ত করেছিল, সেটা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আইনে কোথাও নাই তাকে এই দরখাস্তে তাকে বিদেশে যাওয়ার পারমিশন দেওয়া যায়। বিদেশ যেতে পারবেন না বলে আগেই শর্ত দেওয়া ছিল, এখন সেটিকে পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই।’
যে দুই শর্তে খালেদা জিয়াকে দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তা পরিবর্তন করা যায় কি না, এ প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইনে আছে শর্তযুক্ত অথবা শর্তমুক্ত। শর্ত যদি দেওয়া হয় তা মানতে হবে। …আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা তিনি তা প্রয়োগ করেছেন, এটা পুনরায় প্রয়োগ করার সুযোগ নেই।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়ে আইনমন্ত্রী কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইলে দোষ স্বীকার করে চাইতে হয়। বিষয়টি যিনি ক্ষমা চাইবেন তার বিষয়। এটা হচ্ছে সাংবিধানিক অধিকার, যে কেউ রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারে।
‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যিনি ক্ষমা চান তাকে কিন্তু দোষ স্বীকার করে দরখাস্ত করতে হয়। যিনি ক্ষমা চাইবেন এটা তার সিদ্ধান্ত। এখন খালেদা জিয়াকেই ক্ষমা চাইতে হবে। এটা হচ্ছে সাংবিধানিক অধিকার, যে কেউ রাষ্ট্রপতির কাছে মাফ চেয়ে তার সাজা মওকুফ করার জন্য আবেদন করতে পারে।’
২০০৮ সালে কোনো শর্তসাপেক্ষে শেখ হাসিনাকে জামিন দেওয়া হয়নি জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, আইন মেনেই তিনি (হাসিনা) বিদেশ গিয়েছিলেন এবং দেশে ফিরে এসেছেন। …মির্জা ফখরুলকে ভালো করে জেনেশুনে, বুঝে জনগণকে তথ্য দেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, ‘ফখরুল বলেছেন, আইনমন্ত্রী বলেছিলেন দণ্ড স্থগিত করে বাসায় থাকতে দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই, এটা পারে শুধু আদালত। অথচ তার কিছুদিন পরেই সরকারের নির্বাহী আদেশ দেশনেত্রী বাসায় এসেছিলেন।’
মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোথাও, কখনো এমন কথা বলিনি। আমার বক্তব্য সবসময় রেকর্ড করা থাকে বলে ২০১৬ থেকে আজ পর্যন্ত কী বক্তব্য দিয়েছি, সেগুলো চেক করেছি, সেখানে কোথাও নেই।’
আনিসুল হক বলেন, ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনা যখন বিদেশে গিয়েছিলেন তিনি তখন কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বা কয়েদি ছিলেন না। তিনি তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সবকটি মামলায় নিঃশর্ত জামিনে ছিলেন। শেখ ফজলে নূর তাপস শুধু বঙ্গবন্ধুকন্যার আইনজীবীই ছিলেন না, তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যার আইনজীবীদের দলের সমন্বয়ক হিসেবেও কাজ করতেন।
তিনি জানিয়েছেন, সবগুলোতে বেলবন্ড দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধুকন্যা মুক্ত হয়েছিলেন। এবং কোনো শর্তসাপেক্ষে তাকে জামিন দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ সেসময় তার বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে কোনো বাধা-নিষেধ ছিল না। তাই ২০০৮ সালে তার বিদেশে যাওয়ার সময় কোনো অনুমতি বা নির্বাহী আদেশের প্রয়োজন ছিল না। আইন মেনেই তিনি বিদেশে গিয়েছিলেন এবং আইনি অধিকারে তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন।
দণ্ডবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার শর্তসাপেক্ষে অথবা বিনাশর্তে যে কানো সাজা মওকুফ করতে পারে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, দাখিলকৃত দরখাস্ত নিষ্পত্তির পর পুনরায় এ সংক্রান্ত দরখাস্ত দাখিল ও বিবেচনা করার সুযোগ নেই। এ ধরনের বিষয় পুরনায় রিবেচনার সুযোগ রাখা হয়নি।
‘মির্জা ফখরুল সাহেব একটি দলের মহাসচিব। তার ভালো করে জেনে-শুনে, বুঝে জনগণকে তথ্য দেওয়া উচিত। তার কাছ থেকে জনগণ বস্তুনিষ্ট ও সঠিক তথ্য আশা করে। আমরা আশা করি অসত্য, মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে তিনি জনগণকে আর বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না।’
বেগম জিয়া বিদেশে যেতে চান এবং বিদেশে গেলে শর্ত মানা হবে- এ রকম কোনো আলোচনা আমাদের সাথে হয়নি বলেও জানান তিনি।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, শেখ হাসিনা মহানুভবতা দেখিয়ে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্তযুক্তভাবে মুক্তি দিয়েছিলেন। এরপর আর কত মহানুভবতা দেখাতে হবে, এটা প্রমাণ করতে যে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। আমরা কেউই খালেদা জিয়াকে ভয় পাই না।
হত্যা মামলার আসামি জোশেফকে আপনারা মুক্তি দিয়েছেন- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জোশেফ কিন্তু কোনো আদালতে খালাস পায়নি। সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি তার সাজা মওকুফ করেছেন। জোশেফ তার কাছে মাফ চেয়েছিল।’
যে দুই শর্তে খালেদা জিয়াকে দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তা পরিবর্তন করা যায় কি না, এ প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইনে আছে শর্তযুক্ত বা শর্তমুক্ত। শর্ত যদি দেওয়া হয় সেটা যাকে দেওয়া হচ্ছে মানতে হবে। সবগুলোই হয়ে গেছে। আইনে আবার খোলার অবকাশ নেই।’
বেগম জিয়ার মুক্তির ক্ষেত্রে দেশে চিকিৎসা নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া যৌক্তিক কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করেছি যৌক্তিক। তার কারণ হচ্ছে তখন তার যে অসুস্থতা ছিল, যতটুকু আমাদের জানানো হয়েছিল তাতে এটা শুধু আমরা যে মনে করেছি যৌক্তিক তা প্রমাণিত হয়েছে ২০২০ সালে থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তার চিকিৎসা সফলভাবে দেশে হয়েছে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশের মেয়র ফজলে নুর তাপস এবং আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।