শিরোনাম
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এক সেলফিতে বিএনপির নেতাদের রাতের ঘুম হারাম বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শনিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে এই মন্তব্য করেন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য শুরু করেন এভাবে, ‘আজ নতুন একটা খবর আছে। দিল্লিতে কী হচ্ছে? জি-২০ (সম্মেলন)। এত দিন বিএনপি আটলান্টিকের ওপারে হোয়াইট হাউসের দিকে তাকিয়ে ছিল, বাইডেন সাহেব নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আওয়ামী লীগকে হটিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসাবে। এই না? কী (উপস্থিত নেতা-কর্মীদের) দেখলেন আজকে? বাইডেন সাহেব নিজেই সেলফি তুললেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। তুলেছেন না? সঙ্গে আবার পুতুলও (সায়মা ওয়াজেদ) ছিল।’
বিএনপির আজকের গণমিছিল সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘চোখে এখন অন্ধকার দেখছে। খবর নিয়ে দেখবেন, বিএনপির নেতারা বেলা থাকতে মিছিল শেষ করে হাত-পা বিছিয়ে শুয়ে পড়েছেন। একজনেরও ঘুম আসবে না। রাতের ঘুম হারাম। কী শুনলাম, কী দেখলাম আর এখন কী হচ্ছে? বাইডেন সাহেব হাসিনার সঙ্গে ছবি তুলেছেন কেমন করে। এসব দেখে কী আর ভালো লাগছে।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর আসন্ন বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইউরোপের বিখ্যাত নেতা মাখোঁ আসছেন। কী বলবেন ফখরুল, গয়েশ্বর, আমীর খসরু? ইউরোপের সবচেয়ে জাঁদরেল নেতা বাংলাদেশে সফরে আসছেন। এখন শুধু আসবেন। এখন নেগেটিভ (নেতিবাচক) আসবে না, সব পজিটিভ (ইতিবাচক), সব পজিটিভ।’
বাইডেনের সেলফির প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘এই দৃশ্য দেখে বিএনপির এখন কী হবে? এখন কোন যাত্রা, পতনযাত্রা না পশ্চাৎ-যাত্রা? এখন পেছনের দিকে বিএনপিকে যেতে হচ্ছে। কোথায় বিক্ষোভ? কোথায় বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ, উত্তাল তরঙ্গমালা, সেটা থেকে গরুর হাটে গোলাপবাগে খাদে পড়ে, তারপর পদযাত্রা মানেই পশ্চাৎ-যাত্রা। আজকের গণমিছিলের হাঁক যতটুকু দেখেছি, মনে হয় না জনগণ আর গণমিছিলে আসবে। জনগণ নেই, নেতা-কর্মীরা (বিএনপি) আর আমেরিকার দিকে তাকাবেন না। তাহলে এখন কোথায় যাবেন?’
‘বাংলাদেশ শক্তির নয়, বন্ধুত্বের বলয়ে’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফখরুল সাহেব কী দেখাবেন? বাংলাদেশ শক্তির বলয়ে চলে গেছে, বাংলাদেশকে বৃহৎ শক্তির কেন্দ্র বলেছেন ফখরুল। আমি বলতে চাই, এ বলয় বন্ধুত্বের বলয়, এখানে কোনো শত্রুতা নেই। জাতির পিতাই বলে গেছেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। এই নীতি শেখ হাসিনা বজায় রেখেছেন। আগামী দিনে প্রমাণ হবে, শত্রুতা কারও সঙ্গে নয়, বাংলাদেশ সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চায়।’
বিএনপির মহাসচিবের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফখরুল সাহেব এখন কী করবেন? সিঙ্গাপুর থেকে সলাপরামর্শ নিয়ে এসেছেন, এখানে এসে এক দফার আন্দোলন করবেন! এ আন্দোলন এখন ভুয়া।’ এ সময় বিএনপির জোট এবং দফাগুলোকে ভুয়া বলেও দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘এ ভুয়া দল যে আন্দোলন করছে, সেটাও ভুয়া। বিএনপির বিরুদ্ধে খেলা হবে। ফাইনাল খেলা হবে। তারপর দেখা যাবে কত ধানে কত চাল। প্রস্তুত হয়ে যান।’
বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খবর আরেকটা আছে। ওপরে ওপরে আন্দোলন, তলেতলে নির্বাচন। সারা বাংলায় খবর লন। সব সিটে (আসন) ক্যান্ডিডেট (প্রার্থী) খাড়া করায় দিছে। এখন দুই, তিনজন না, যার যত টাকা, সে তত বেশি প্রার্থিতার জোরে লন্ডনে পাড়ি দেয়। ওখানে গিয়ে টাকা জমাচ্ছে। এত টাকা আসে কোত্থেকে। টাকা ওড়ে আকাশে, টাকা ওড়ে বাতাসে। নির্বাচন না করলে তারেক রহমান মনোনয়ন-বাণিজ্য করবে কীভাবে? নির্বাচন না করলে মনোনয়ন-বাণিজ্য কেমনে হবে।’
‘হলুদ আর লাল কার্ড খাবে’
বিএনপি খেলায় হেরে গেছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খালি নির্বাচনটা হওয়ার বাকি, ফাইনাল খেলায়ও হেরে যাবে। এর মধ্যে শুধু ফাউল করবে, হলুদ আর লাল কার্ড খাবে। এত দিন শুধু লাফালাফি করেছে। কত রবি জ্বলে রে, কেবা আঁখি মেলে রে। খবর তো বেগতিক। বিএনপি সামনে কিছু দেখে না। দেখে অন্ধকার।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে—এসব দেখে বিএনপি চোখেমুখে অন্ধকার দেখছে। দিনের আলোতেও অমানিশার দিশা। ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
বিএনপি সারা বাংলাদেশে মিথ্যার মহামারি ডেকে এনেছে বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, মিথ্যাচারের মহামারি বিএনপির দৌরাত্ম্য সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের একটা গ্রামের কর্মীকেও মিথ্যা কথা বলতে শিখিয়েছে। অবিরাম মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
ওবায়দুল কাদেরের ঠিক আগে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী। তিনি বক্তৃতা শুরুর সময় ওবায়দুল কাদের মঞ্চে উঠছিলেন। তখন নেতা-কর্মীরা টানা স্লোগান দিতে থাকেন। ফলে মতিয়া চৌধুরীর কোনো কথা শুনতে পারছিলেন কেউ। একপর্যায়ে দ্রুত বক্তৃতা শেষ করে নিজ আসনে চলে যান মতিয়া চৌধুরী।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি আগামী ২০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান যত দিন দলটির ক্ষমতায় আছেন, তত দিন বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে এলে সম্মানজনক আসন পাবে বিএনপি। বিরোধী দলের আসনে বসতে পারবে।
‘ষড়যন্ত্রের মেঘ কেটে যাচ্ছে’
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের মেঘ কেটে যাচ্ছে, আবার সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে। বিএনপির সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেই লক্ষ্যে আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকুন।’
বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘যত দিন তারেক রহমানের মতো দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী আপনাদের নেতা থাকবে, যত দিন দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া নেতা থাকবেন, তত দিন বিএনপির এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই, আসতে পারবে না।’ বিএনপির কর্মীদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিপদের মুখে না ফেলার আহ্বান জানান তিনি।
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও মহানগর আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। তিনি বক্তৃতা দেওয়ার সময় বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী স্লোগানে মুখর করে রাখেন।