‘বঙ্গবন্ধু হত্যা ও আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর মানবাধিকার কোথায় ছিল’

ফানাম নিউজ
  ১৪ আগস্ট ২০২৩, ০১:০৭

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমাদের সুশীল সমাজের বিশাল অংশ আজকে মানবতার কথা বলে। বিভিন্ন দেশ এসে যখন মানবাধিকারের কথা বলে, তখন তারা (সুশীল সমাজ) সঙ্গ দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা বা তাঁর পরিবারকে নির্বংশ করার চেষ্টা, সেটা নিয়ে তাদের কথা নেই। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা নিয়ে কথা নেই। সে সময় মানবাধিকার কোথায় ছিল?

রবিবার (১৩ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘ষড়যন্ত্রের উৎপাটনই শোকাবহ আগস্টের অঙ্গীকার’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম এই সেমিনারের আয়োজন করে।

তিনি বলেন, ‘২০১৩-১৪ সালে পুড়িয়ে মানুষকে হত্যা করা হলো, পঙ্গু করে দেওয়া হলো— এতে কারও মানবাধিকার নেই! এটা কারও চোখে পড়লো না।’

ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যখন একটি প্রদেশ থেকে একটি স্বাধীন দেশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, আজও আমরা যখন কোনও নতুন উদ্যোগ নিতে যাই, তখন দেখি মাত্র তিন বছর সময়ে বঙ্গবন্ধু সেটা করেছেন। সারা জীবনে বঙ্গবন্ধু কোনও হঠকারী সিদ্ধান্ত নেননি। ধাপে ধাপে সবকিছু করেছেন। পুরো দেশটাকে এগিয়ে নেওয়ার পথরেখা তৈরি করেছেন।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আজকে একটি বাড়ি একটি খামার, সবুজ কৃষি, গৃহায়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। কেউ আশ্রয়হীন থাকবে না, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়া— সবকিছুর মূলে মানুষদের জন্য করা। সেগুলোই বঙ্গবন্ধুকন্যা করে চলেছেন। ষড়যন্ত্র আজও চলছে, তার একটা বড় প্রমাণ হচ্ছে— বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর পিলখানায় বিডিআরের ঘটনা ঘটানো হলো। সেটিকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীকে কেমনভাবে সরকারের বিরুদ্ধে উত্তপ্ত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। সে সময় খালেদা জিয়ার রহস্যময় গতিবিধি— কাজেই ষড়যন্ত্র ছিল এবং আছে। ষড়যন্ত্রের জাল কেটে আমাদের এগোতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন যুদ্ধের যে ক্ষেত্র, অনেক বিস্তৃত এবং ধরন বদলেছে। এখন সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার জগতে চারদিকে যুদ্ধ। আমাদের সেই যুদ্ধ করতে হবে।’

দীপু মনি বলেন, ‘প্রতিক্রিয়াশীলদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই শক্তি করে আসছে। তারা মানবাধিকারের কথা বলে। অথচ ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন তাদের সময়ে ঘটেছে। এই সামরিক, আধা-সামরিক সরকারের সময় নিজেদের সমস্যা এড়াতে সংখ্যালঘুদের নিয়ে দাঙা বাঁধিয়ে দেওয়ার রীতি অনেকদিন ছিল। আমরা এটিকে হয়তো বন্ধ করতে পারিনি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনে নিশ্চিতভাবে পৃষ্ঠপোষকতা থাকে না।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘তারা বলে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন করেনি।’ আমরা এতটাও মনভোলা নই। ৭১ ভুলে যাইনি। ’৯১ এর পরে, ২০০১ এর পরে কী হয়েছিল তা ভুলে যাইনি। গোপাল কৃষ্ণ, ফাহিমা, মুনিমা সব ভুলে যাবো? যাদের মাধ্যমে আমরা এমন নৃশংসতা দেখেছি। তারা বলে ‘আমরা নির্যাতন করিনি।’ আজকে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ষড়যন্ত্র আজও চলছে, একই লোকদের দিয়েই চলছে। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সজাগ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র প্রতিহত না করার খেসারত কী দিতে হয়, এটা আমরা এখন জানি। ৭৫ সালে যদি বঙ্গবন্ধুকে আমরা না হারাতাম, তাহলে বাংলাদেশ এই অন্ধকারে পতিত হত না।’’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট মেজর (অব.) নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, দৈনিক বাংলা ও নিউজবাংলা২৪.কমের পরিচালক (মিডিয়া) মো. আফিজুর রহমান, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।