শিরোনাম
যারা দেশের সমৃদ্ধি পছন্দ করে না, তারা অপপ্রচার ছড়ায় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। অব্যাহতভাবে দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্র্যতা কমছে, দেশের সমৃদ্ধির সঙ্গে সব মানুষের সমৃদ্ধি এবং স্বচ্ছলতা এসেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেকের পছন্দ হয় না। সেজন্য দেখা যায়, কিছু কিছু পত্রিকায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নেগেটিভ রিপোর্ট করা হয়। বিদেশ থেকে চিহ্নিত ব্যক্তি বিশেষ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) চট্টগ্রামের দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের বাসায় সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, কূটনীতিকদের আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো সমীচীন নয়। প্রয়োজনে কূটনীতিকদের আচরণ সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের বাজেটের জন্য ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে কারও দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হয় না। বরং আমাদের সাহায্য দেওয়ার জন্য তারা অর্থের ঝুলি নিয়ে আমাদের কাছে আসে এখন। আমাদের খাটো করার সময় চলে গেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ করোনা মহামারি এবং বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে, অর্থনীতিক সমৃদ্ধি যেভাবে অব্যাহত আছে, এটি পৃথিবীর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা প্রশংসা করছে। সম্প্রতি ব্লুমবার্গ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেখানে তারা বলেছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং করোনার মধ্যেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কারণে আগামী নির্বাচনেও শেখ হাসিনা জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদের মতো নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ব্লুমবার্গ এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এসেছে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা যেভাবে তিনি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন, সেই কারণেই তিনি চতুর্থ বারের মতো নির্বাচিত হওয়ার উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে।
‘গত পরশু আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন আমাদের দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা ছিল ৪১ শতাংশ, কিছুদিন আগে সেটা কমে ২০ শতাংশে নেমেছিল। এই করোনা মহামারি এবং বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যে এখন সেটি কমে ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্য ১৭ শতাংশ। আইএমএফের রিপোর্ট অনুযায়ী এই করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়েছে। ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি তখন আমাদের অর্থনীতির আকার ছিল পৃথিবীর ৬০তম, এখন আমরা জিডিপিতে পৃথিবীর ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। গত ১৪ বছরে আমরা ২৫টি দেশকে অতিক্রম করেছি। সেই ২৫ দেশের মধ্যে মালয়েশিয়ার অর্থনীতিও আছে। পিপিপিতে আমরা পৃথিবীর ৩১তম অর্থনীতির দেশ।’
সাংবাদিকদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আপনাদের মনে আছে যখন বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিল, তখন কিছু বড় পত্রিকায় ব্যানার হেডিং দিয়েছিল ‘পদ্মাসেতু আর হচ্ছে না’। কিন্তু বাংলাদেশে পদ্মা সেতু হয়েছে নিজেদের টাকায়।
এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা ভূমিকা রাখে। গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম মানুষকে সঠিক তথ্য পেতে এবং সঠিক চিন্তা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। একই সঙ্গে মানুষকে বিশ্বপরিস্থিতিও জানাতে সহায়তা করে।
তিনি বলেন, আজ বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে যেখানে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন দেশে পণ্যের সংকট হয়েছে। আমাদের দেশে কোনো পণ্যের সংকট হয়নি। ইউরোপের সুপার মার্কেটে এক লিটারের বেশি ভোজ্যতেল, ছয়টার বেশি ডিম কিনতে দেওয়া হয় না একসঙ্গে। কারণ সেখানে পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের দেশে পণ্যের মূল্য বেড়েছে, কিন্তু পণ্যের সংকট তৈরি হয়নি। এখানেই হচ্ছে তাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য।
আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। গণমাধ্যমের এ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এবং তা অব্যাহত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা মনে করি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিকাশ, গণতন্ত্রের বিকাশ জড়িত। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি চর্চার আমাদের যে সংস্কৃতি সেটিকে আরও গভীরে প্রোথিত করা নির্ভর করে। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের সম্মিলিত দায়িত্বশীলতাও আছে। স্বাধীনতার নামে যদি আমরা কেউ অপসাংবাদিকতা করি তাহলে দেশের আপামর জনগণ এবং সাংবাদিক সমাজ নিশ্চয় সেটিকে সমর্থন করে না। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকতার নামে রাজনীতি করা যে সমীচীন নয়, সেটিও নিশ্চয়ই আপনারা আমার সঙ্গে একমত হবেন।
দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান গ্রেফতারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশ বিবৃতি দিয়েছে। এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ১২টি দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ভারতের দিকে তাকানোর অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেখানে কয়েকদিন ধরে বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশি করা হয়েছে, সেখানে কি এ ধরনের বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ, বিবৃতি দিয়েছে? দেওয়া হয়নি। কারণ ভারত বড় দেশ, ভারতের শক্তি সামর্থ্য বেশি। সেজন্য সেখানে সেই সাহস দেখাতে পারেনি।
কূটনীতিকদের সঙ্গে ইফতারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কূটনীতিকদের সহায়তা কামনা করেছেন। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরাতো প্রথম থেকেই বলে আসছি তারা রজনগণের কাছে যায় না। তারা বিদেশি কূটনীতিকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পদলেহন করে। আমি আশা করেছিলাম তারা দুঃস্থ মানুষের সঙ্গে ইফতার করবে। সেটি না করে ফাইভ স্টার হোটেলে বসে কূটনীতিকদের সঙ্গে ইফতার করেছে। সেখানে গিয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য অনুনয় বিনয় করেছে।
তিনি বলেন, আসলে দোষটা কূটনীতিকদের চেয়েও আমাদের অনেকের অনেক বেশি। কারণ আমরা গিয়ে তাদের হাতে পায়ে ধরি একটু কিছু বলার জন্য, আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য। এটি আসলে দেশবিরোধী এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শামিল।
এসময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সফর আলী উপস্থিত ছিলেন।