শিরোনাম
দেশের স্বাধীনতা নিয়ে অবজ্ঞা ও অপপ্রচারমূলক মন্তব্যের দায়ে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় সাংবাদিকদের একটি সংগঠন 'রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসে'র বিবৃতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার 'সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্য' প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, বরং দেশের সংবিধান, আইন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সাংবাদিকতার নীতিমালা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থে এই মামলা হয়েছে। সেই বিদেশি সাংবাদিকরা হয়তো বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস জানেন না। বাংলাদেশের যে সম্পাদককে ভয় দেখানোর কথা বলা হচ্ছে, সেই সম্পাদক এক সময় রাষ্ট্রকেই ভয় দেখাতে তৎপর ছিলেন। বাংলাদেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব তথা রাজনীতি শূন্য করতে চেয়েছিলেন।
নিজের নামে তার পত্রিকায় ফলাও করে লিখেছিলেন, 'দুই নেত্রীকে সরে যেতে হবে'। পৃথিবীর কোন গণতান্ত্রিক দেশে কোন পত্রিকার সম্পাদক এ ধরনের ভূমিকা পালন করেছে বলে আমাদের জানা নেই। তিনি শুধু রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে কিংবা রাজনীতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেননি, দেশের সর্বোচ্চ আইন ও জনগণের পবিত্র ইচ্ছার প্রতিফলন সংবিধানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। তিনি সাংবিধানিক শাসনের পথ রুদ্ধ করে অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতায় রাখতে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তাদের সেই ষড়যন্ত্র যদি সফল হতো, তাহলে আজ বাংলাদেশের ভাগ্যে কি ঘটতো সেটা আমরা খুব সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারি না। তবে এতটুকু ধারণা করা যায়, সংবিধান বহির্ভূত শক্তির হাতে রাষ্ট্রকে তুলে দিতে মতিউর রহমানদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হলে বাংলাদেশ পাকিস্তানের মতো একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত হতো।
তিনি রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসে'র কাছে প্রশ্ন রাখেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় অসংবিধানিক শক্তিকে টিকিয়ে রাখতে একজন সম্পাদকের এই ধরনের কার্যক্রম কি স্বাধীন সাংবাদিকতার নীতির মধ্যে পড়ে?
ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, একটা শিশুর হাতে ১০ টাকা ঘুষ দিয়ে তার নামে একটা সংবাদ পরিবেশন করা, তাও আবার স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাকে অবজ্ঞা ও কটাক্ষ করে! এটি কি অপরাধ নয়? সাংবাদিক হলেই কি সবাই আইনের ঊর্ধ্বে? সব অপরাধ থেকে মাফ পাওয়া যায়? পৃথিবীর সকল সভ্য দেশেই শিশু অধিকার ও শিশু নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইনে যথেষ্ট সংবেদনশীলতা রয়েছে। অর্থের বিনিময়ে শিশুকে এক্সপ্লয়েট বা অবৈধভাবে ব্যবহার একটি অমার্জনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধরনের অপরাধ শিশুর জীবনকে শঙ্কিত করে তুলে। প্রথম আলো ক্লাস ওয়ানে পড়ুয়া একটা শিশুকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করে নিউজ করে নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে চায়। এটি জঘন্য অপরাধ। যেসব বিদেশি সাংবাদিক বিবৃতি দিয়েছে, তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন, তাদের নিজেদের দেশে কোনো একটা শিশুকে যদি এভাবে এক্সপ্লয়েট করা হতো, তারা কি করতো?
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বলেন, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমি তাদের বলব, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে কয়েকটি উপাদান প্রয়োজন, তার একটি হচ্ছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। অন্যান্য উপাদান গুলো হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পৃথকীকরণ, আইনের চোখে সকলের সম অধিকার ও সকল ক্ষেত্রে আইনের সমভাবে প্রযোজ্যতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, মৌলিক ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা, আইনসভা ও সরকারের প্রতিটি স্তরে নির্বাচনের ব্যবস্থা ইত্যাদি। অর্থাৎ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যেখানে আইনের শাসনের অনেকগুলো উপাদানের একটি, সেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে আইনের শাসনের মূল ভিত্তিকে আঘাত করা যায় না। আইনের চোখে সকলের সম অধিকার ও সকল ক্ষেত্রে আইনের সমভাবে প্রযোজ্যতার বিধান অনুসরণ করেই প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। 'কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়'-এটি যেমন আইনের শাসনের অন্যতম মূল ভিত্তি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়টি সত্যিকার অর্থে কার্যকর ও টেকসই করার ক্ষেত্রেও এই নীতির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিপাইনে নোবেলজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসা'র বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় তিনি অসংখ্যবার আদালতে হাজিরা দিয়েছেন এবং বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। সাংবাদিকতার পেশার কারণে কারো বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না-এটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।
ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, প্রথম আলো ও তার সম্পাদক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কথা বলে। অথচ গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনুস অলাভজনক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে পরবর্তীতে বিদেশে পাচার করেছেন এবং গ্রামীণ টেলিকমে ব্যাপক লুটপাট করেছেন-এরকম তথ্য সাম্প্রতিক সময়ে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে প্রথম আলোর কোনো উচ্চবাচ্য নেই। এ বিষয়ে তারা একেবারেই নিরব। অর্থাৎ তাদের পক্ষের কেউ দুর্নীতি, অর্থপাচার ও লুটপাট করলে তারা নিরব থেকে প্রকারান্তরে দুর্নীতিবাজদের সমর্থন করে।
ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এই মুহূর্তে প্রথম আলো সম্পাদক ও রিপোর্টারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে। এই ধরনের বক্তব্য যেকোনো সভ্য দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার পরিপন্থী। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উত্থাপিত হলে সেটি আইন অনুযায়ীই নিষ্পত্তি করতে হয়। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলে। আইন বহির্ভূতভাবে কাউকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া স্বাধীন সাংবাদিকতার লক্ষ্য নয় বরং এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী বিষয়।
তিনি বলেন, যে সকল বিদেশি সাংবাদিক এই বিবৃতি দিয়েছেন, তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন, তাদের নিজেদের দেশে কি সাংবাদিকরা আইনের ঊর্ধ্বে?
ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ২৬ শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে একটা শিশুকে বরাত দিয়ে লেখা হয়, পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়ে কি করমু।
৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে স্বাধীনতা দিবসে এরকম অবজ্ঞা ও কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য সমগ্র জাতিকে ব্যথিত করেছে। একটি জাতীয় দৈনিকে এই ধরনের মন্তব্য বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে অপমান করার শামিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে রাষ্ট্রের ওপর আঘাত হানা হচ্ছে। এই ধরনের অপরাধ সংঘঠনকারী আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না। অপরাধ করলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই আইনের মুখোমুখি হতে হবে।