রমজানে আন্দোলন থেকে জনগণকে নিস্তার দিন, বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রী

ফানাম নিউজ
  ২৮ মার্চ ২০২৩, ০২:৪১

পবিত্র রমজান মাসে জনজীবনের পবিত্রতা ও শান্তি উপেক্ষা করে আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপির সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন,তারা (বিএনপি) রমজান মাসেও আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। অন্তত এই রমজান মাসে জনগণকে আন্দোলন থেকে নিস্তার দিন।

সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনের নামে বিএনপির উন্নয়নবিরোধী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, রমজান মাসে বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের সময় গুলি করে ১৭ শ্রমিককে হত্যা করেছিলেন খালেদা জিয়া। যারা রমজানে মানুষকে গুলি করে হত্যা করে, তারা রমজান মাসের প্রতি সম্মান দেখাবে কী করে? তাই তো তারা এই মাসে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। পবিত্র রমজান মাস ও মানুষের দুর্ভোগের প্রতি তাদের কোনো অনুভ‚তিই নেই। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন,রমজানে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাঘবে ইফতার পার্টি না করে খাবার বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বিএনপি নেতা ও কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে ‘তথাকথিত’ আখ্যায়িত করে তাদের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাপক উন্নয়ন দেখে বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের প্রতি সম্মান দেখাতে বাধ্য হলেও তারা (বিএনপি) উন্নয়ন দেখেন না। বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে বর্ণনা করেছে।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি, অনেক আন্তর্জাতিক শক্তি আছে, তাদের এই ধারাবাহিক গণতন্ত্র পছন্দ নয়। আর আমাদের কিছু আঁতেল আছে, তাদের তো (ধারাবাহিক গণতন্ত্র) পছন্দই নয়। তারা মনে করে একটা অস্বাভাবিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাদের কদর বাড়ে। কারণ অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় আসে, তাদের কিছু লোক লাগে হাতের লাঠি বা খুঁটি হিসাবে। সেই লাঠি হতে পারছে না বলেই তাদের মনে খুব দুঃখ।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন,তারা (বিএনপি) সব সময় দেশে এবং বিদেশে বদনাম তো করছেই, আবার দেশের মধ্যেও আজেবাজে লিখে যাচ্ছে যে, কিছুই (দেশের অগ্রগতি) নাকি হয়নি। কিন্তু দেশের তৃণমূল মানুষের কাছে যান, তাদের মধ্যে যে আস্থা ও বিশ্বাস আছে; সেটাই আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন,আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অব্যাহত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কারণে গত ১৪ বছরে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ, সেই পথেই এগিয়ে যাবে।

দেশবাসী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যে আস্থা-বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে,তা নিয়েই যেন তারা এগিয়ে চলেন। কারও মিথ্যা কথায় যেন কেউ বিভ্রান্ত না হন।

তিনি বলেন,যে অবৈধ শক্তি ৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যা করে ক্ষমতায় এসেছিল,তাদের কোনো প্রেতারণা যেন আবার মানুষের স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে না পারে। তারা যেন মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও দেশের জনগণকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থাকতে হবে।

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,বিএনপি বিদেশিদের কাছে নালিশ করে যে, তাদের ওপরে নাকি খুব অত্যাচার করা হচ্ছে। অত্যাচার তো আমরা করিনি। অত্যাচার আমাদের ওপর করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এর শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছেন। 

বিএনপির জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন,রাজনীতিকে গালি দিয়ে ক্ষমতা দখল করে আবার সেই লেবাস খুলে নিজেরাই রাজনীতিবিদ হয়ে যান। উচ্ছিষ্টভোগীদের নিয়ে দল গঠন করার কালচার সেখান থেকেই শুরু হয়। 

তিনি বলেন, অবৈধ দখলকারীদের হাতে তৈরি করা দল নাকি এখন দেশে গণতন্ত্র চায়। যাদের জন্ম গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে হয়নি, যাদের জন্ম মিলিটারি ডিক্টেটেডের মধ্য দিয়ে, তারা আবার গণতন্ত্র চায়! গণতন্ত্রের জন্য নাকি তারা লড়াই করে। জিজ্ঞেস করতে হয়, ওদের জন্মটা কোথায়? অবৈধ দখলদারি এটা তো আমাদের কথা নয়। উচ্চ আদালত বলে দিয়েছে যে, জিয়া-এরশাদ সম্পূর্ণ অবৈধ। তারপরও তারা নাকি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান; সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, দলের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সোবহান গোলাপ ও আবদুল আওয়াল শামীম।