শিরোনাম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগের ভূমিকা দেখলে মনে হয় তারা এখন বিরোধীদল হয়ে গেছে। বিএনপি কর্মসূচি দিচ্ছে, প্রতিবাদে সরকার শান্তি কর্মসূচি দিচ্ছে। র্যাব, পুলিশ এদের কি কাজকর্ম নেই।
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানো, বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াসহ গ্রেফতার নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং অবৈধ সংসদ বাতিলসহ ১০ দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (জেটেব)।
আমীর খসরু বলেন, আওয়ামী লীগ নাকি জনগণের সম্পদ রক্ষায় নেমেছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দৈন্য এমন জায়গায় এসেছে দাঁড়িয়েছে, একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে তারা জনগণকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যর্থ হয়ে তারা বিএনপির কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
বিএনপির কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করা চলবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, লাখো জনতা প্রমাণ করেছে- গুলি করে, হত্যা করে, গ্রেফতার করে, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে জনগণের গণজোয়ার বন্ধ করা যাবে না। সেটা এরই মধ্যে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে প্রমাণ হয়ে গেছে। সরকার পরিবহন হরতাল দিয়ে, গায়েবি মামলা দিয়ে, গ্রেফতার করে, হত্যা করেও জনতার স্রোত রুখতে পারেনি। আগামীতেও তা পারার কোনো সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যতই শান্তি কর্মসূচি দেন, যতই জনগণের সম্পদ রক্ষার কথা বলেন, আপনারা জনগণের কাছে হাস্যকরভাবে পরিচিত হয়েছেন। জনগণ আপনাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখে হাসে। আপনাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। আপনারা রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আদালতের আশ্রয় নিচ্ছেন।
রাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে টিকে থাকার কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
জনগণ ভয়কে জয় করে ফেলেছে মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, জনগণের ভয়ে সরকার মিথ্যা ও গায়েবি মামলা, গ্রেফতার, হত্যা এগুলো চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থেকে সরে যাচ্ছে না। যত বেশি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হচ্ছে তত বেশি জনগণ রাস্তায় নেমে আসছে। তাদের (সরকার) ভয়ের মাত্রাও তত বেড়ে যাচ্ছে।
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণে আজকে কাঁচামাল আমদানির জন্য টেক্সটাইল মিলের মালিকরা এলসি খুলতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের লুটেরারা বিদেশে কীভাবে সম্পদ কিনছেন, তার একটি পূর্ণ বিবরণ আজকে গণমাধ্যমে এসেছে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করার কারণে আজকে রিজার্ভ শূন্যের কোটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আজকে টেক্সটাইল মিলগুলো গ্যাসের অভাবে পোশাক উৎপাদন করতে পারছে না। তারা তিন শিফটের পরিবর্তে এক শিফটে কাজ করছে। গ্যাসের উচ্চমূল্য দিয়ে টেক্সটাইল মিল চালানো সম্ভব হচ্ছে না। যে গার্মেন্টস সেক্টরকে জিয়াউর রহমান গড়ে তুলেছিলেন, আজকে সেটা তারা (সরকার) ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকে মন্দিরে ভাঙচুর হচ্ছে, খ্রিস্টানদের চার্চে হামলা-দখল চলছে, বৌদ্ধদের মন্দিরে আগুন লাগানো হচ্ছে। এই সরকারের হিংস্রতা থেকে কেউ রক্ষা পাচ্ছে না।
দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, আজকে বিশ্ব গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অধিকার হরণ নিয়ে প্রতিনিয়ত রিপোর্ট করছে। বাংলাদেশের মিডিয়ার স্বাধীনতার ওপর যে হস্তক্ষেপ চলছে সেটি পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলো একটি কমিটি নিযুক্ত করেছে।
তিনি বলেন, একটি দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, নির্বাচন, বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসন কখন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অধীনে আসে, যখন সে দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, আইনের শাসন, বাকস্বাধীনতা থাকে না, যখন মানুষ ভোট দিতে পারে না। আজকে বাংলাদেশের প্রতিটি বিষয় দেশ ও দেশের বাইরে থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ চলছে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের ওপর যে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ সেটি আজ বিশ্বনজরে এসেছে। এমন সময় আসবে বাংলাদেশে গণমাধ্যম বলে কিছু থাকবে না। সাংবাদিকদের কোনো ভূমিকা থাকবে না। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
জেটেব সভাপতি মো. ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।