শিরোনাম
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর খুব একটা আগ্রহ কখনোই দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি নতুন করে এই নির্বাচনের দিকে ঝুঁকছে তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেল কয়েক মেয়াদে এসব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একমাত্র ইসলামী আন্দোলন নিয়মিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছিল। এবার অন্য দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদের দ্বিতীয় দফা ভোটে খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ কয়েকটি দলের প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন।
স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর কয়েকজন নেতা জানান, স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইসলামি দলগুলোর অনীহা বরাবরই। মূলত তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় কার্যক্রম না থাকাই স্থানীয় নির্বাচনের প্রতি এই অনাগ্রহের মূল কারণ। আবার ক্ষেত্রবিশেষে কখনও প্রার্থীকে সমর্থন দিলেও প্রচার-প্রচারণার ব্যয়সহ আনুষাঙ্গিক খরচের কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে খুব একটা উৎসাহ দেওয়া হয় না।
আলাপকালে একাধিক ধর্মভিত্তিক দলের উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন নেতার জানিয়েছেন, এবার স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে আগ্রহের পেছনে বিভিন্ন সংস্থার চাপ রয়েছে। ‘একমুখী নির্বাচনে’র বিষয়টি আলোচনায় থাকার কারণে এই চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
তারা মনে করেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি শুরু করা সম্ভব হবে ইউপি নির্বাচনের মাধ্যমে। আর কেউ কেউ বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকেও তৃণমূল পর্যায় থেকে মোকাবিলা করার পথ সহজ হলো।
২৬১ ইউপিতে ইসলামী আন্দোলনের জয় একটিতে
গত জুনে ও সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম দফার ভোটে অংশগ্রহণ করে ইসলামী আন্দোলন। ৩৬৪টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত ২৬১টিতে প্রার্থী দিতে সক্ষম হয় দলটি। এগুলোর মধ্যে বরিশাল সদর উপজেলার মাত্র একটি ইউনিয়নে বিজয়ী হন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আহমদ আবদুল কাইয়ুম জানান, ইউপির দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনে ৮৪৮টি ইউপিতে নির্বাচন হবে। এ পর্বে এরইমধ্যে ২৯৮টি ইউপিতে ফরম জমা দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্তভাবে অন্তত পাঁচ শতাধিক ইউপিতে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী দিতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এরআগে, গতবার অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দলটির ১ হাজার ৮১ জন প্রার্থিতা করেছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদের এবারের সবগুলো নির্বাচন মিলিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কমপক্ষে সাড়ে ৩ হাজার প্রার্থী হতে পারে বলে দলীয়সূত্র জানিয়েছে।
দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিচ্ছে মজলিস, জমিয়ত ও ঐক্যজোট
ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম পর্বে অংশ না নিলেও দ্বিতীয় পর্বে প্রার্থিতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি-জোট ছেড়ে আসা খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোট।
জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মুঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জানান, চলমান ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে এখন পর্যন্ত ৮-১০ জন প্রার্থিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর অধিকাংশ প্রার্থী সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নীলফামারী এলাকার।
প্রথম পর্বে জমিয়তের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার কারণ জানতে চাইলে মাওলানা আফেন্দী বলেন, ‘প্রথম পর্বে তো সেরকম ভোট হয়নি। আর কৌশলগত কারণও ছিল। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত ছিল কাসেমী (আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী) সাহেবের জীবদ্দশাতেই।’
গতবারের ইউপি নির্বাচনে সুনামগঞ্জের একটি ইউনিয়নে জমিয়তের একজন বিজয়ী হন। আর সিলেটে অন্য একাধিক ইউপি নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি ভোট হয় বলে জানান আফেন্দী।
খেলাফত মজলিসের দলীয়সূত্র জানায়, প্রথম পর্বে অংশ না নিলেও আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে দলটির অন্তত ২০টিতে প্রার্থিতা থাকতে পারে। এছাড়া মেম্বার পদে অন্তত ৩০-৩৫ জন অংশ নেবেন।
এ বিষয়ে যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, ‘আমরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। দলীয়ভাবে আগেই সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচনে অংশগ্রহণের। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে এবার খুব বেশি প্রার্থী নেই।’
দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে ইসলামী ঐক্যজোট ইতিবাচক বলে জানিয়েছেন দলটির শরিক নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি মাওলানা একেএম আশরাফুল হক। তিনি বলেন, ‘প্রথম দফায় নেজামে ইসলাম পার্টি থেকেই প্রার্থিতা দেওয়ার কথা চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু নানা কারণে দেওয়া যায়নি।’
ইসলামী ঐক্যজোটের এই যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, ‘ইসলামী ঐক্যজোট দ্বিতীয় পর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলসহ কয়েকটি এলাকায় প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
দলীয়ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্বাচনে সায় দিয়েছে খেলাফত আন্দোলন। রবিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় দলের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে দলের নেতা কর্মীদের আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করেছি। তবে কেউ যদি প্রার্থী হয়, তাতে আপত্তি নেই।’
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৭ অক্টোবর ও ভোটগ্রহণ হবে ১১ নভেম্বর। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন