শিরোনাম
পঁচাত্তর পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে পাকিস্তানি সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকলে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত সবকিছু পরিবর্তন করতেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হুইপ স্বপন বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পর সেনাশাসক জিয়াউর রহমান সব ক্ষমতার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন। কাগজে-কলমে বিচারপতি আবু সাদাত মো. সায়েম রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক থাকলেও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জিয়া ও তার সহকর্মীরা। দেশের নাম বাংলাদেশ থাকলেও কার্যত জেনারেল জিয়া বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পাকিস্তানের বিশ্বস্ত সেবাদাস সাবেক বিচারপতি, আমলা, শিক্ষাবিদদের দিয়ে তিনি সায়েম সাহেবের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হুইপ স্বপন বলেন, বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এদেশে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণের আসন অবৈধভাবে শূণ্য ঘোষণা করে লোক দেখানো উপ-নির্বাচন করে জামায়াত-মুসলিম লীগারদের বিজয়ী ঘোষণার প্রহসন হয়। সেই বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে জিয়াউর রহমান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী নিযুক্ত করে ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী, চাকুরিচ্যুৎ, জার্মান প্রবাসী সিতরাত-এ-জুররাত খেতাবপ্রাপ্ত এম জি তওয়াবকে বিদেশ থেকে ডেকে এনে জিয়াউর রহমান বিমান বাহিনীর প্রধান, উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও উপদেষ্টা বানান। ১৯৭৬ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এমজি তওয়াবের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত ইসলামী জলসায় যুদ্ধাপরাধী সাঈদীরা স্লোগান দেয়- ‘তওয়াব ভাই তওয়াব ভাই, চান তারা পতাকা চাই।’
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা নামধারী জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পরপর ৩০ লাখো শহীদের রক্ত বিধৌত বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের অতি বিশ্বস্ত সেবাদাসদের দিয়ে সায়েম সাহেবের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। উপদেষ্টা পরিষদই মার্শাল ল' সরকারের মন্ত্রিসভা।
হুইপ স্বপন আরও বলেন, ধূর্ত জিয়া প্রথমে উপদেষ্টা পরিষদে সরাসরি নরঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের আনেননি। কৌশলে যুদ্ধাপরাধী নয়, কিন্তু পাকিস্তানের বিশ্বস্ত সেবাদাস এবং মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ বিরোধীদের দিয়ে সরকার গঠন করে নতুন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের সুযোগ মতো মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এমপির সভাপতিত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন কুমিল্লা উত্তর জেলা সভাপতি ম. রুহুল আমিন। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক বেগম ফরিদুন্নাহার লাইলী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব আব্দুস সবুর, জেলা সাধারণ সম্পাদক রৌশন আলী মাস্টার, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম সরকার, বেগম সেলিমা আহমাদ এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হানিফ সরকার, আলহাজ্ব হারুনুর রশীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, সৈয়দ আব্দুল কাইউম খসরু ও উপজেলা চেয়ারম্যান আহসানুল আলম সরকার কিশোর প্রমুখ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ সভাপতি এবং সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম সারোয়ার চিনু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।