ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে দুনীতিবাজ এবং অতীতে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতাকারিদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ধরনের কাজে সঙ্গে জড়িত যারা দলের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। সূত্র: বাংলানিউজ

তৃণমূল থেকে তালিকায় নাম আসছে তাদেরকে বাদ দিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে।

দেশের সর্ববৃহৎ স্থানীয় সরকার স্তর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থীরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি অংশ না নেওয়া দলীয় প্রতীক নৌকা পেলেই বিজয় প্রায় নিশ্চিত জেনে দলের মধ্যেই চলছে মনোনয়ন যুদ্ধ। তবে, দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থী বাছাইয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি যারা দলের মনোনয়ন না পেয়ে যারা দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা করে প্রার্থী হবেন তাদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অবস্থান কঠোর।

কেন্দ্র থেকে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহের পর তাদের মধ্য থেকে প্রার্থী বাছাই করে জেলা কমিটি সর্বোচ্চ অনধিক তিনজনের নাম কেন্দ্রে পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জেলা, উপজেলা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা যুক্ত থাকেন। জেলা থেকে কেন্দ্রে পাঠানো নামের তালিকার মধ্য থেকে দলে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড একজনকে চূড়ান্ত করে দলীয় মনোনয়ন দেয়।

আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য কোনো কোনো ইউনিয়নের ১৫ থেকে ১৮ জন পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে বলে জানা গেছে।  

আবার কেন্দ্রে অনধিক ৩ জনের নাম পাঠানোর কথা বলা হলেও অনেক ইউনিয়ন থেকে এর বেশি নাম কেন্দ্রে আসছে বলেও জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের নেতা এবং দলের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন প্রার্থীকে বিভিন্ন দিক মূল্যায়ন ও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সততা, জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দলীয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা, দল ও দলের আদর্শের প্রতি আনুগত্য, দুনীতি, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কিনা, স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে অতীতে সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা এ বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিশেষ করে, যেসব ইউনিয়নে প্রার্থী পরিবর্তন হয়ে নতুন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যারা গত ৫ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন তারা বিরুদ্ধে কোনো দুনীতি, অনিয়মের অভিযোগ আছে কিনা এ বিষয়গুলোও দেখা হচ্ছে।

ওই নেতারা আরও জানান, অতীতে যারা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তাদেরকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

এবারেরও যারা দলের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, বিদ্রোহী প্রার্থী হবে বা দলের সিদ্ধান্তকে অমান্য করবে তারাও আগামীতে মনোনয়ন পাবে না বলেও ওই নেতারা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ  বলেন, সততা, যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাই করেই মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। কোনো ধরনের দুনীতি, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলে, অতীতে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। গত টার্মে ছিল তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই তারাও পুনরায় মনোনয়ন পাচ্ছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান  বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করছেন, দলের ও দলের আদর্শের প্রতি অনুগত, সততা আছে, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে এ ধরনের আগ্রহী প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ক্লিন ইমেজ, শিক্ষা এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যারা অতীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিল তারা কোনোভাবেই মনোনয়ন পাচ্ছেন না। এবারও যারা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারাও আগামীতে মনোনয়ন পাবেন না।

দেশে ৪ হাজার ৩শর বেশি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। মোট ৪ থেকে ৫ ধাপে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই ইউনিয়ন পরিষদগুলোর নির্বাচচন সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে গত সেপ্টেম্বরে প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত মার্চ মাসে স্থানীয় সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ স্তর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন স্থগতি রাখা হয়েছিল।