শিরোনাম
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে বিএনপি যদি বাড়াবাড়ি করে তাহলে খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ। তার ভাই-বোন, বোনের জামাই আমার কাছে এসেছেন, আবেদন করেছেন। আমরা তার সাজাটা স্থগিত করে বাড়িতে থাকার সুযোগ করে দিয়েছি। এটা মানবিক কারণেই দিয়েছি। কিন্তু যদি ওরা বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে আবার জেলে পাঠিয়ে দেবো।’
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে কোনো কথা নেই। কিন্তু একটা মানুষের গায়ে হাত দিলে ছাড়বো না।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) ‘জেলহত্যা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ স্মরণসভার আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ তাদের (বিএনপি) কি অবস্থা? আজ তাদের গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হবে। যে দলের জন্ম সামরিক শাসকের পকেট থেকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর দ্বারা, তারা আবার গণতন্ত্রের কি উদ্ধার করবে? সেটাই আমার প্রশ্ন। আবার সেই কথা শুনে কিছু লোক তাদের সঙ্গে তাল মেলান। তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি কোথায় থাকে? তারা কি বাস্তবটা বুঝতে পারেন না? আর নেতৃত্ব কোথায়? বিএনপি যে লাফালাফি করে তাদের নেতা কই?’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। তার সাত বছরের সাজা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার কথা যদি বলি, এতিমদের নামে বিদেশ থেকে যে মোটা অঙ্কের টাকা এসেছিল, সেই টাকাও এতিমরা পায়নি। ওই ট্রাস্টের নামে আসা সব টাকা গেছে নিজের নামের অ্যাকাউন্টে। সেখানেও তিনি ধরা খেয়েছেন এবং মামলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই মামলা দিয়েছে এবং ১০ বছরের জেল হয়েছে। তাদেরই প্রিয় ইয়াজউদ্দিন, মইন উদ্দিন ও ফখরুদ্দিন গং এ মামলা দিয়েছিল। অন্যদিকে তারেক রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির পিতার খুনিদের জিয়াউর রহমান বিদেশে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসিত করেছিলেন। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের বের করে দেয়। কিন্তু ২০০১ সালে যখন বিচারের রায়ের তারিখ পড়েছে, খুনিরা বিচারের কাঠগড়ায়, সেই সময় খালেদা জিয়া খুনি খায়রুজ্জামানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরি ও প্রমোশন দেন এবং মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার করেও পাঠান। খুনি পাশাকে বিদেশে মৃত অবস্থায় প্রমোশন দেন এবং তার ভাতা ও সবধরনের বেনিফিট পরিবারকে দেওয়া হয়। তাহলে কি করে অস্বীকার করবে এ হতাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত নন। ৩ নভেম্বর বা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়া যে জড়িত নন, তা কীভাবে তারা অস্বীকার করবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খুনি রশিদকে ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে বসানোর মাধ্যমে খুনিদের পৃষ্ঠাপোষকতা করেছেন। আর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া যে সম্পূর্ণভাবে জড়িত তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ সংসদে এ নিয়ে আওয়ামী লীগকে আলোচনাও করতে দেওয়া হয়নি। উল্টো খালেদা জিয়া বলেছিলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। অর্থাৎ একটি অপরাধ করার পর সেই অপরাধটা অন্যের ঘাড়ে চাপানোর ট্রিকসটা তারা ভালোভাবেই জানেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। আমরা মানুষের মন জয় করে এবং দেশের উন্নয়ন করেই নৌকার পক্ষে ভোট আনবো। দেশের মানুষ আর সেই অশান্ত পরিবেশ চায় না, শান্তির পরিবেশ চায়, দেশের উন্নতি চায়। তাই দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকেই চায়, কেননা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা মানে দেশে শান্তি, উন্নয়ন আর অগ্রগতি।’
স্মরণসভায় উদ্বোধীন বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্য পারভিন জামান কল্পনা, সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি এবং উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।