শিরোনাম
কেউ থাকেন বিদেশে, আবার কেউবা অন্য জেলায়। চাকরির সুবাদে বেশ কয়েকজন বউ-বাচ্চা নিয়ে বহু বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। ছাত্রলীগের কমিটিতেও কারো কারো নাম আছে। বরিশাল জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে ঢুকে পড়া এমন ১৭২ জনকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে ছাত্রদল।
গুরুত্বপূর্ণ পদে কি করে তারা ঢুকে পড়লেন এর কোনো ব্যাখ্যা কোথাও মিলছে না। ত্যাগী নেতাদের মধ্যে অনেকের বাদপড়া নিয়ে জবাবদিহি করতে ঘাম ছুটে যাওয়ার দশা স্থানীয় ছাত্রদল নেতাদের।
জেলা ছাত্রদলের একাধিক নেতা বলেন, ‘টিম লিডারের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় এক নেতাসহ কয়েকজনের ঘুস বাণিজ্যে এমন ঘটনা ঘটে। বিপুল অর্থের বিনিময়ে জেলা কমিটিতে বিতর্কিত লোকজনকে ঢোকানো হয়েছে। এক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। বিষয়টি জানলেও রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা ভেবে কিছুই বলতে পারছি না আমরা। কেননা কেন্দ্রীয় নেতাদের ক্ষেপিয়ে দলের রাজনীতিতে উপরে উঠা বা টিকে থাকা মুশকিল।
জানা গেছে, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে বাধ্য হয়ে ১৭২ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়দের আশা শেষ পর্যন্ত তিনিই দেবেন এ সমস্যার সমাধান। ২০১৮ সালে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। পাঁচ নেতার কমিটিকে জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। অবশ্য করোনাভাইরাস মহামারিসহ নানা কারণে কমিটি গঠনের কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। মাস ছয়েক আগে হঠাৎ বরিশাল জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৩১ সদস্যের কমিটির প্রস্তাব পাঠানো হয়।
সপ্তাহ দেড়েক আগে কেন্দ্র থেকে অনুমোদন দেওয়া কমিটির সদস্য সংখ্যা ৪৮৭ জন দেখা যায়। এ বিশাল কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বরিশাল থেকে পাঠানো ৩৩১ জনের তালিকা থেকেও বাদ পড়েছেন বেশ কয়েকজন। আর কেন্দ্রের অনুমোদিত কমিটির ৪৮৭ জনের মধ্যে ১৭২ জনের নাম বরিশাল থেকে পাঠানো হয়নি। দেখা গেছে- এ ১৭২ জনের মধ্যে ২১ জনকে সহ-সভাপতি, ৫৪ জনকে যুগ্ম সম্পাদক, ৩৭ জনকে সহ-সাধারণ সম্পাদক, ৩২ জনকে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, ৯ জনকে সহ-সম্পাদক এবং ১৪ জনকে সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান বলেন, আমরা ৩৩১ জনের কমিটির প্রস্তাব পাঠিয়েছি। গত মাসে কেন্দ্র থেকে অনুমোদন হয়ে আসার পর দেখি মোট সদস্য সংখ্যা ৪৮৭। তাদের মধ্যে অনেককেই আমরা চিনি না। অনেকে আবার কখনোই ছাত্রদলে সক্রিয় ছিলেন না। তাদের মধ্যে এমন লোকজনও আছেন যারা বছরের পর বছর ঢাকা কিংবা বিদেশে থাকেন। তাদের নাম কি করে কমিটিতে এলো তা কেন্দ্রীয় নেতারাই ভালো বলতে পারবেন। ৪৮৭ জনের বিশাল কমিটিতে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়া নেতাদের মধ্যে সাইমন আহম্মেদ কালুর বাড়ি ঝালকাঠি জেলায়। অথচ তাকে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি করা হয়েছে।
সূত্রঃ যুগান্তর
একইভাবে ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার বাসিন্দা জসিম উদ্দিনকে বরিশাল জেলার সহ-সভাপতি পদ দেয়া হয়েছে। সহ-সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া জাহিদুল ইসলামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় হলেও তিনি বহু বছর ধরে আমেরিকাপ্রবাসী। হিজলা উপজেলার বাসিন্দা সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া আনোয়ার হোসেন চাকরি সূত্রে আছেন মালয়েশিয়ায়। সহ-সভাপতি পদ পাওয়া একই উপজেলার নূর হোসেনও থাকেন সেখানেই।
সিংগাপুরপ্রবাসী গাজী কামালকে সহ-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। শুধু তারাই নন, ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকা নেতাকেও জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। এরকম একজন সদস্য হলেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান। আল নাহিয়ান জয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হলে বাবুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজ ফেসবুক স্ট্যাটাসে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।
বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মারুফ মল্লিককে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য সচিব এসএম আরাফাতকে জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। বরিশাল সদর উপজেলার কড়াপুর ইউনিয়ন বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক লেলিন খান মোর্শেদ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন। এছাড়া পদপদবি পাওয়া অন্তত ৩-৪ ডজন আছেন যারা সংসার এবং চাকরির সুবাদে বহু বছর ধরে রাজধানীর বাসিন্দা।
জেলা ছাত্রদলের একাধিক নেতা বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান বাপ্পি কমিটি গঠনের দায়িত্বে ছিলেন। টিম লিডার হিসাবে তিনিই মূলত কমিটি গঠনের পুরো বিষয়টি দেখভাল করেন। যতদূর জানি, বরিশাল থেকে পাঠানো কমিটিতে যাদের নাম ছিল না তারা বাপ্পির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এক্ষেত্রে নানা অনৈতিক লেনদেনের বিষয়ও আমাদের কানে আসে। পরে দেখি ৪৮৭ সদস্যের বিশাল কমিটি। যেখানকার অনেককে আমরা চিনি না। বরিশাল থেকে পাঠানো কমিটিতে তাদের নাম ছিল না। বিশেষ কিছুর বিনিময় ছাড়া এভাবে গণহারে কমিটিতে ঢোকা অসম্ভব। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত আমরা।
বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠু বলেন, কমিটি ঘোষণার পর খুব বিস্মিত হয়েছি। অনুমোদন দেওয়ার আগে জেলা নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাও করা হয়নি। এমন অনেকে কমিটিতে এসেছেন যারা নানাভাবে বিতর্কিত। মাদক ব্যবসায়ী আর ধর্ষণে অভিযুক্তরাও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছে।
মাহফুজুল মিঠু আরও বলেন, আমাদের পাঠানো কমিটির যাচাই-বাছাইকালে আমরা নানাভাবে কেন্দ্রকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। বিতর্কিত কাউকে কমিটিতে রাখার ব্যাপারে লবিং-তদবির কথা শোনামাত্র তাদের সম্পর্কে কেন্দ্রে আমরা বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছি। এমনকি অভিযোগের সাপোর্টিং ডকুমেন্টসও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এরপরও কি করে ১৭২ জন পদপদবি পেল তা বুঝতে পারছি না। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানোর পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জানানো হয়েছে। ১৭২ জনের পুরো তালিকা তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের মোবাইল ফোনে বহুবার কল ও খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি এবং খুদে বার্তারও সাড়া দেননি। সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল ফোন ব্যাক করার কথা বললেও তা করেননি। কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান বাপ্পির মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
সূত্রঃ যুগান্তর