শিরোনাম
বিরোধী শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার কৌশল অবলম্বন করে মাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি বিরোধীদের ওপর আগ বাড়িয়ে হামলায় না জড়াতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।
সূত্রমতে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে দেশে বিদেশে সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি ফেলতে বিএনপি নতুন করে ফাঁদ তৈরি করছে। দলটির কর্মসূচি থেকে উসকানি দিয়ে সংঘাত সৃষ্টির মধ্যদিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশি-বিদেশি মিডিয়া ও কূটনৈতিক মিশনগুলোর নজরে আনার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এমন তথ্য দিয়ে সারা দেশের নেতাকর্মীদের সে সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে। এজন্য বিএনপিকে কোনো ধরনের সুযোগ দেয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলাপর্যায়ের ছাত্রলীগ নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এই বৈঠকে।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক যৌথসভায় এমন নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকে উপস্থিত দলটির একাধিক নেতা এসব নিশ্চিত করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে ২৮ সেপ্টেম্বর আলোচনা সভার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় বৈঠক থেকে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন নেতা জানান, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো তাদের মতো করে কর্মসূচি পালন করবে। আমরা আমাদের মতো করে কর্মসূচি পালন করবো। আওয়ামী লীগ কারো গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবে না। প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে নির্ধারিত স্থানেই সতর্ক থেকেই আওয়ামী লীগ তার কর্মসূচি পালন করবে। অন্য কোনো দলের কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না। সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবেই বলেছেন, কারো কর্মসূচিতে বাধা দেয়া বা হামলা চালানো যাবে না। কেউ কোনো ধরনের হামলায় জড়ালে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। কারণ বিএনপি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তারা এসব করে উসকানি দিয়ে একটা ঘটনা ঘটানোর মধ্যদিয়ে বিশ্বে একটা মেসেজ দিতে চাচ্ছে যে, দেশে গণতন্ত্র নেই। বিরোধীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, বিরোধীদের ওপর হামলা মামলা নির্যাতন চালাচ্ছে সরকার। তাদের পাতানো ফাঁদে পা দেয়া যাবে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ সফরের কথা উল্লেখ করে বৈঠকে ওবায়দুল কাদের জানান, নেত্রী জাতিসংঘ দেয়া ভাষণে গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলবেন। সেখানে তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতেই বিএনপি এই নতুন ফাঁদ এঁটেছে। আর এ কারণে বিএনপি গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান বনানী ও এর আশপাশের এলাকায় কর্মসূচি পালন করছে। তারা সেখান থেকে উসকানি দিয়ে মারামারি বাধানোর চেষ্টা করছে। যাতে দেশি-বিদেশি মিডিয়া ও বিদেশি মিশনগুলোর মনোযোগে আসতে পারে। এই সুযোগ তাদের দেয়া যাবে না। এজন্য সবাইকে সতর্ক থেকে কর্মসূচি পালন করতে হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, কেন্দ্র থেকে আমাদের বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি যে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া দলটির পাতা ফাঁদ সম্পর্কে ও সচেতন করেছেন আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, বিরোধী দলের কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চলমান কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তবে সাংঘর্ষিক কর্মসূচিতে যাওয়ার দরকার নেই- এমন কথাও বলা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির ফাঁদ সম্পর্কে নগর ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির বিতর্কিত ফোনালাপ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ডাকা ধর্মঘটের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় জেলাপর্যায়ের নেতাদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।