বিএনপি খুনি ও ষড়যন্ত্রকারীদের সংগঠন: বাহাউদ্দিন নাছিম

ফানাম নিউজ
  ২০ আগস্ট ২০২২, ২১:০৫

বিএনপিকে ‘খুনি ও ষড়যন্ত্রকারীদের সংগঠন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

তিনি বলেছেন, এরা দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কে দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায়। এরা সিরিজ বোমা হামলা ও জঙ্গিবাদের উত্থানে জড়িত। এরাই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা করেছে। এই খুনি ও সাম্প্রদায়িক দলকে কানাডার আদালত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে রায় দিয়েছিল। এদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড। আদালতের রায়ে তা প্রমাণিত এবং এই মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

শনিবার (২০ আগস্ট) সকালে রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ।

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ২১ আগস্টের হামলায় জড়িত ছিল বিএনপি। এই মামলায় আদালতের রায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নান, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির টিকিটে কুমিল্লা থেকে সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপি সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি তাজুল ইসলাম যাকে ভুয়া পাসপোর্টে বিএনপি বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। এ থেকেই প্রমাণিত হয় বিএনপি এ ঘটনায় জড়িত। এই যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানসহ পলাতকদের অচিরেই দেশে এনে বিচারের রায় কার্যকর করতে হবে এবং এদের দল বিএনপির বিচার করতে হবে।

তিনি বলেন, হত্যাকারী ও স্বাধীনতাবিরোধী দল বিএনপির লক্ষ্য জাতির পিতার আদর্শকে ধ্বংস করা এবং বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানানো। এখন তারা দেশের বাহিরে থেকে ষড়যন্ত্র করে এবং স্লোগান দেয় ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। দেশকে ধ্বংস করতে এরা এমন স্লোগান দেয়। আমরা তাদের বলতে চাই, ‘গো ব্যাক পাকিস্তান’। আপনারা পাকিস্তান, আফগানিস্তান যেখানে খুশি ঘাঁটি গাড়তে পারেন, বাংলাদেশে নয়। এই বিএনপি জামাতের শাসন আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছিল। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দশ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে দেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। এদের প্রত্যক্ষ মদদে আব্দুর রহমান, বাংলা ভাইয়ের মতো জঙ্গিরা দেশে সিরিজ বোমা হামলা করেছিল।

‘বিএনপি এখন এতটাই দেউলিয়া হয়ে গেছে যে, তারা যাদের কোনো জনসমর্থন নেই এমন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিটিং করে। তাদের সঙ্গে প্রতিদিন আলোচনা করে। তাদের নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে হটানোর চিন্তা করে। দেশের মানুষ এখন এদের চিনে গেছে। এদের কোনো জনসমর্থন নেই। দেশের মানুষ এখন আর বিএনপিকে সমর্থন করে না। বিএনপির মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক আছে এদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দরকার। এরাও সন্ত্রাসী সংগঠন। এদের বিচারের জন্য আইন হওয়া প্রয়োজন। এসব সংগঠন বিএনপির সঙ্গে মিলে দেশকে ধ্বংস করতে চায়।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচানোর সব চেষ্টাই করেছেন জিয়া। তাদের রক্ষায় জিয়া ইনডেমনিটি আইন জারি করেছিল। জিয়া দেশের সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি জঘন্যতম এক অধ্যায়। জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আগমনের মধ্য দিয়ে তিনি খুনিদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে এসেছেন। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দল হলো বিএনপি।

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা আজ আমাদের মাঝে নেই। তার আদর্শ আমাদের মাঝে রয়েছে। তিনি শুধু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ১৩ বছর জেলে কাটিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন দেশের মানুষ ভালো থাকুক। দেশের মানুষের কথা ভেবে তিনি কখনোই ঘাতকদের সঙ্গে আপোস করেননি। আজ তার আদর্শে এগিয়ে যাচ্ছে তার কন্যা শেখ হাসিনা। এখনো তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। তাকে ২১বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ও তার বোন শেখ রেহানা দেশের বাহিরে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন। ঘাতকরা চেয়েছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন সদস্যও যেন বেঁচে না থাকে।

আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, শোকের মাসে দাঁড়িয়ে আমরা শোককে শক্তিতে পরিণত করবো। খুনিদের প্রতি রয়েছে আমাদের ঘৃণা। আমাদের জানতে হবে এদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কী ছিল? নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের এটি তুলে ধরতে হবে। বর্তমানে খুনির প্রেতাত্মারা বাংলাদেশের আছে। তাদের বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা চেয়েছিল দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নিঃশেষ করে দিতে। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই তারা জাতির পিতাকে হত্যা করে। এদের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন হতে হবে। যেখানেই এদের ষড়যন্ত্র দেখবো সেখানে আমরা এদের প্রতিহত করবো। এদের আমরা দেশের মানুষের আর কোনো ক্ষতি করতে দেবো না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকেরা সবসময় এদের প্রতিহত করতে প্রস্তুত।

বিএনপির উদ্দেশে নাছিম বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে তার আদর্শকে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। এখন তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। জাতির পিতার স্বপ্ন এখন পূরণ হচ্ছে। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ ভিক্ষুকের জাতি থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াক। আজ শেখ হাসিনা আমাদের দেশকে আত্মনির্ভর করেছেন। আজ আমরা মর্যাদাশীল জাতিতে পরিণত। বিশ্বে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল। বিশ্বের অনেক বড় বড় নেতারা শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। দেশ সামনে আরও এগিয়ে যাবে। কেউ আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি কাজী শহীদুল্লাহ লিটন, দেবাশীষ বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী প্রমুখ।