শিরোনাম
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সদ্য পদত্যাগী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত দুজনই দলীয় কোন্দলের শিকার। এ কারণে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার দৌড়ে কে এগিয়ে তা এখনো ঠিকমতো বলতে পারছেন না ভোটারা। তবে দুই প্রার্থীরই কর্মী-সমর্থকরা দাবি করছেন, তাদের প্রার্থীই জয়ী হবেন।
এ অবস্থায় গত রাত ১২টায় শেষ হয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারণা।
কুমিল্লা সিটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শহরজুড়ে প্রার্থীদের পোস্টার শোভা পাচ্ছে। গতকাল বৃষ্টির কারণে প্রচারণায় কিছুটা ভাটা পড়লেও বিকেলে জমজমাট প্রচারণা। মিছিল-মিটিং আর মাইকে গান, কবিতার মাধ্যমে ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে।
এর আগেরবার এই সিটিতে দলীয় মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার পরাজয়ের পেছনে স্থানীয় কিছু নেতার হাত ছিল বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দায়ী ওইসব নেতার শাস্তির দাবিও উঠেছে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায়। কিন্তু এবার মনোনয়ন পাননি সীমা। তিনিও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে অবস্থান করছেন ঢাকায়। এ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, নির্বাচন নয়, ব্যক্তিগত কারণে ঢাকায় অবস্থান করছি। আমি সবসময় আওয়ামী লীগের লোক। নেত্রী যাকে ভালো মনে করেছেন, তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
অন্যদিকে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাক্কুরও একটি বিরোধী দল রয়েছে। এরা মূলত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপি থেকে নিষেধ করার পরও নির্বাচন করায় তার প্রতি ক্ষুব্ধ বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতা।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এই কোন্দলের কথা জানা গেলেও সাক্কু তা অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
তবে শেষদিনে নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত অভিযোগ করেন, নির্বাচনে কালোটাকা ছড়ানো হচ্ছে। তবে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীরই অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে বহিরাগতদের এনে ভোটকেন্দ্রের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
প্রচারণা চলাচ্ছেন না বাহার
নিজ নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লায়ই অবস্থান করছেন স্থানীয় (কুমিল্লা-৬) সংসদ সদস্য আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার। তবে তিনি কোনো নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না। কারও কাছে ভোটও চাচ্ছেন না। তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।
এদিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত নগরীর রাণীর দিঘির পাড়ের নিজের নির্বাচনী অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, আমার পক্ষ থেকে তাদের বাধা দেওয়া, নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা চাই কুমিল্লায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। যেই নির্বাচিত হোক আমার এবং দলের পক্ষে সুস্বাগত জানাবো।
নির্বাচনে কালোটাকা ছড়ানো হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী যার বিরুদ্ধে আমি দুর্নীতির অভিযোগ এনেছি, তিনি কালোটাকা ছড়াচ্ছেন। এমনকি আমার কর্মীদেরও টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু সোমবার সারাদিন নিজ বাসভবনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, সংসদ সদস্য তো চিঠি আমলেই নিলেন না।
এদিকে সোমবার দুপুর ১২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করা স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজামউদ্দিন কায়সার। এসময় বহিরাগতদের উপস্থিতি ভোটারের মাঝে শঙ্কা ও ভয় বাড়ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লা শহরের ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। সরকারদলীয় প্রার্থী বহিরাগতদের এনে জড়ো করছেন।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিষয়ে যে অসহায়ত্বের পরিচয় দিয়েছেন, তাতে আমরা কুমিল্লার মানুষ এতদিন যে আশা নিয়ে ছিলাম, এখন আমরা হতাশ। কারণ ওনার অসহায়ত্ব মানে প্রশাসনের অসহায়ত্ব, নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব।
মক ভোটে আগ্রহ নেই ভোটারদের
১৫ জুনের নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের ভোট প্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দিতে মক ভোটের আয়োজন করা হয়। প্রতি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দেওয়ার নিয়ম শেখাতে সোমবার মক ভোটের ব্যবস্থা করা হয়। তবে নগরীর অধিকাংশ কেন্দ্রেই ভোটারদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। দুপুরে কান্দিরপাড়ের ভিক্টোরিয়া কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পাঁচজন মেয়রপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ১০৮ জন। ভোটার আছেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। যার মধ্যে ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন পুরুষ, ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুজন। ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে বুথ রয়েছে ৬৪০টি।
সূত্র: জাগো নিউজ