শিরোনাম
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। কিন্তু ছাত্রদল সভাপতির পরিবারের সদস্যরা বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এমনকি শ্রাবণের বাবা ও এক ভাই বর্তমানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও।
আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ায় দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই শ্রাবণের। বরং পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপির রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রদলের নবনির্বাচিত সভাপতি।
গণমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শ্রাবণ বলেন, তাদের (পরিবারের সদস্যদের) জাতীয়তাবাদী দলের পতাকা তলে আসার জন্য বলেছি। একইসঙ্গে দেশের আওয়ামী লীগ পরিবারের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছেও আমার একই আহ্বান থাকবে যে, দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলের সাথে থাকুন, দেশ গঠনে কাজ করুন।
শ্রাবণের গ্রামের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার চিংড়া গ্রামে। ২০০৩ সালে কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র শ্রাবণ কিছুদিনের মধ্যেই ছাত্রদল কর্মী হিসেবে হল ও বিভাগের সহপাঠীদের মধ্যে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।
এরপরই পরিবার থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন শ্রাবণ। তিনি বলেন, গত ১০ বছর আমি আমার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। আমার পরিবার ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতিকে বিশ্বাস করে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের সাথে আমার আদর্শিক দূরত্ব রয়েছে। আমার পরিবার হয়তো মনে করেছে- আমার সাথে যোগাযোগ রাখলে তাদের রাজনীতিতে ক্ষতি হতে পারে। তাই তারা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এটা শুধু আমার পরিবার না, এটা পুরো দেশের চিত্র। একদম তৃণমূল পর্যন্ত দেশকে বিভক্ত করা হয়েছে। ঘরে ঘরে কোন্দল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রদলের নবনির্বাচিত সভাপতি আরও বলেন, আমার পরিবার যেহেতু আওয়ামী লীগ করে, তাই তাদের চরিত্রও আওয়ামী লীগের বাইরে কিছু হবে না। তারা যে আমাকে অস্বীকার করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। বাবা-মা'র সাথে আমি থাকতে পারিনা। তবে আদর্শিক কারণে আমি গর্বিত। সংগঠনের কারণে আমার পরিবার বিসর্জন দিতে হয়েছে। দল আমার সেই আত্মত্যাগের মূল্যায়ন করেছে।
আওয়ামী লীগপন্থী পরিবারের সন্তান হয়েও ছাত্রদলের রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ জানিয়ে শ্রাবণ বলেছেন, কলেজ জীবনে ছাত্র রাজনীতির যে সংস্কৃতি চলমান ছিলো তাতে ছাত্রদলের রাজনীতিতেই বেশি আকৃষ্ট হই। এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের অত্যন্ত মেধাবী, স্মার্ট ও রুচিশীল হিসেবে মনে হয়েছে। সেখান থেকেই ছাত্রদলকে বুকে লালন করতে থাকি। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হই।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন শ্রাবণ। সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ছাত্রদল সভাপতি প্রার্থী হওয়া নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ওই সম্মেলনে ভোটে হেরে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।
এবার নতুন কমিটি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেলেন তিনি। গত রোববার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সুপার ফাইভ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে। জুয়েল এর আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার বিষয়টি পরিবারকে অবহিত করেছেন কিনা জানতে চাইলে শ্রাবণ বলেন, আমি মা'কে টেলিফোনে জানিয়েছি। তার মাধ্যমেই আমি আমার পরিবারকে আমার আদর্শের রাজনীতিতে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।
সূত্র: সমকাল