শিরোনাম
বাজার তদারকির ব্যবস্থা করা, চাল-ডাল-তেলসহ দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার অঙ্গীকার করে আওয়ামী লীগ তার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট গঠন করে।
রাজধানীর পল্টন ময়দানের মহাসমাবেশে জোটের তরফ থেকে ঘোষণা করা অঙ্গীকারের মধ্যে আরও ছিল পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ‘মূল নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হবে। গরিব ও মধ্যবিত্তের জন্য ‘রেশনিং ব্যবস্থা’ চালু করা হবে। সব ধরনের সেবার মূল্য স্থিতিশীল রাখার অঙ্গীকার ছিল জোটের।
২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর পল্টন ময়দানে ওই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জোটের পক্ষে এই অঙ্গীকার ঘোষণা করেন তৎকালীন বিরোধী দল নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর তিন বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। টানা তৃতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আছে দলটি। আছে ১৪ দলীয় জোটও। কিন্তু ১৭ বছর পরে এসে আওয়ামী ছাড়া জোটের অন্য শরিকরা মনে করছে, একটি ছাড়া আর কোনো অঙ্গীকারই বাস্তবায়ন হয়নি।
২০০৪ সালে একুশে আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলার পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে ‘আদর্শিক’ জোট ১৪ দল। এই জোট আরও ২২টি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। এসব কর্মপরিকল্পনা পরে ২৩ দফা হিসেবে পরিচিতি পায়। পল্টনের মহাসমাবেশ থেকে রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সমাজ পুনর্গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। এ ক্ষেত্রে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে অবিচল থাকার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর কথাও বলা হয়।
কিন্তু এসব কর্মপরিকল্পনা শিকেয় উঠেছে বলে মনে করছেন ১৪ দলীয় জোটের অন্য শরিকরা। শরিক দলের নেতাদের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ শৈথিল্য দেখাচ্ছে। দলটি ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
বিদেশে থাকায় এ বিষয়ে ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আমীর হোসেন আমুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘তারা (জোট শরিক) দাবি করছে, ২৩ দফা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমি বলি ১৪ দলের এক শরিক আওয়ামী লীগ, বাকি ১৩ দল মিলে বাস্তবায়ন করে দেখাক।’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি কর্মসূচির ভেতর দিয়ে ২৩ দফা বাস্তবায়ন হচ্ছে। তা ছাড়া সরকারের অনেক কাজ আছে, জনগণকে অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে। সেগুলোও করতে হচ্ছে সরকারকে। শরিক দলগুলো যদি মনে করে ২৩ দফা বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তারা ফাইট করুক।’
ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার অভিযোগ বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘সরকার চালাতে গিয়ে কাউকে রাজনীতি করতে দেব না, এটা বলতে পারি না। তবে সাংঘর্ষিক কিছু ঘটলে সরকার নিশ্চয়ই ব্যবস্থা গ্রহণ করে, চুপ করে বসে থাকে না।’
জোটের অন্য নেতারা বলছেন, ২৩ দফার একটি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং রায় কার্যকর করা। এটি বাস্তবায়নের পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দায়িত্ব, কর্তব্য থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। তারা জানান, ২০০৯ সালের শেষের দিকে জোটের একটি বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ২৩ দফা বাস্তবায়নের দাবি তুলে একটি পরামর্শক কমিটি করার প্রস্তাব করেন, সেটাও করা হয়নি।
তারা দাবি করেন, জোটের মূল অঙ্গীকার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা, দুর্নীতি দূর করা, চাঁদাবজি-সন্ত্রাস, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন রোধ করা। তাদের প্রশ্ন, ক্ষমতার ১৩ বছরে সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন আসলে কতটুকু হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে স্বপ্ন জোটগতভাবে দেখা হয়েছিল তার কত শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে? ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে জোটের যে অঙ্গীকার সেটা কোথায়? ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াত কেন নিষিদ্ধ করা সম্ভব হয়নি।
২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল ও এরশাদের জাতীয় পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল মিলে নির্বাচনী জোট মহাজোট গঠন করে। এই জোট ক্ষমতায় আসার পর মহাজোটভিত্তিক সরকার হয়। ২০১৪ সালে বিএনপি ও তার মিত্রদের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে ১৪ দলীয় জোট আবার ক্ষমতায় আসে। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও এই জোট বিজয়ী হয়। তবে এই দফা সরকারে জোট শরিকদের রাখা হয়নি।
১৪ দলের শরিক নেতারা বলছেন, ২৩ দফার প্রথম অঙ্গীকারের মধ্যে ছিল নির্বাচন কমিশনের সংস্কারসহ কালোটাকা, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা। তার মধ্য দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। দ্বিতীয় দফায় বলা হয়, দেশকে উগ্র সাম্প্রদায়িক সশস্ত্র অপশক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে সরকার ও প্রশাসনের সর্বস্তর থেকে ওই শক্তির অপসারণ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ধর্ম, মুক্তচিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধ করা হবে। এ দুটি অঙ্গীকারের কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, প্রশ্ন রাখেন নেতারা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচারের রায় বাস্তবায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হলেও ইতিহাস বিকৃতি রোধ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস রচনার অঙ্গীকার পূরণ হয়নি বলে জোট নেতারা দাবি করেন। আইনের শাসন, আইনের নিরপেক্ষ ও কার্যকর প্রয়োগ, মৌলিক অধিকার পরিপন্থী সব আইন ও বিধি বাতিল, বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের দলীয়করণ বন্ধ করার উদ্যোগ কি শতভাগ সফল হয়েছে, জানতে চান তারা।
জাতীয় সংসদকে সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু করে কার্যকর করা হবে এবং সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে ঘোষণা থাকলেও বাস্তবায়ন দেখছে না শরিকরা। জেলা-উপজেলাসহ সর্বস্তরের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের যে অঙ্গীকার ছিল বিগত নির্বাচনগুলো পর্যবেক্ষণ করলে প্রকৃত অর্থে স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়ন করে শক্তিশালী ও কার্যকর করা কী সম্ভব হয়েছে, প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের এই মিত্ররা। তাদের দাবি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনব্যবস্থা বলা চলে একেবারেই ভেঙে পড়েছে।
রাজনীতির দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে দেশে একটি সুষ্ঠু রাজনীতির ধারা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সফলতা নিয়ে প্রশ্ন আছে শরিক দলের নেতাদের। তারা বলছেন, রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে দুর্নীতি উচ্ছেদ করতে মন্ত্রী, সাংসদসহ সব দলের রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও আমলাদের সম্পত্তির হিসাব ও তার নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা করার ঘোষণা ছিল, সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। তারা বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা, ঋণখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়াসহ অবৈধভাবে অর্জিত সব অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অঙ্গীকারও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
বন্ধ কল কারখানা চালু, পাট, চিনি, পোশাকশিল্প বিকাশে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, মালিকানা নির্বিশেষে শ্রমিকদের জীবন ধারণের মতো জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও তার বাস্তবায়ন, অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য আইন প্রণয়ন ও ছাঁটাই-বরখাস্ত বন্ধ করা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর ও অর্থবহ পদক্ষেপ, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি এবং সহায়তার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে বলা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন শরিক নেতারা।
দারিদ্র্য নিরসনের জাতীয় কার্যক্রম গ্রহণ, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়া বস্তিবাসী, হকার, রিকশা-ভ্যানচালকদের উচ্ছেদ না করা, ভূমিহীন, নদীভাঙা ও বাস্তুহারাদের খাসজমিতে পুনর্বাসন, তাদের আবাসনসহ মৌলিক পরিষেবা নিশ্চিতের অঙ্গীকার অনেকটাই বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জানান ১৪ দলের শরিকরা। তবে প্রত্যেক পরিবারের একজন কর্মক্ষম যুবককে কর্মসংস্থানের অন্য ‘অ্যাপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম’সহ বেকারত্ব দূর করার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অমনোযোগিতা দেখছেন তারা।
তারা বলছেন, কৃষি উপকরণের মূল্য হ্রাস ও উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, কৃষিতে ভর্তুকি, কৃষি পুনর্বাসনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, কৃষিশ্রমিক, ক্ষেতমজুরদের কাজ ও মজুরির ব্যবস্থা করা, ভূমি ব্যবস্থার সংস্কার এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও আর্থিক মর্যাদা দেওয়ার অঙ্গীকার অনেকটুকু বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
জোটের শরিকরা মনে করেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনসহ নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর অঙ্গীকার বলা চলে শিকেয় তুলে রাখা হয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু অনেকাংশে বাস্তবায়ন সম্ভব হলেও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, দুর্নীতি ও সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ভুলে যাওয়ার মতো অবস্থা। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ‘ভরা জোয়ার’ চলছে। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার চালু থাকলেও প্রকল্পটি দুর্বল গতিতে চলছে।
তারা বলছেন, সংবাদপত্র ও রেডিও-টেলিভিশনকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া, অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন, সব অপ সংস্কৃতির আগ্রাসন রোধ, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা, অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক চেতনা এবং বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশকে উৎসাহিত করার অঙ্গীকার পূরণে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও শাস্তির ব্যবস্থা করার ঘোষণা থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে দুর্বলতা থাকায় বন্ধ করা যাচ্ছে না সাম্প্রদায়িক সহিংসতা।
বাংলাদেশের গ্যাস, কয়লাসহ খনিজসম্পদের জাতীয় স্বার্থে সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা, স্বচ্ছ জাতীয় নীতির অধীনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ব্যবস্থা, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বন্দর ব্যবস্থাপনাকে দক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা, চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দরকে দক্ষিণ এশিয়ার বন্দরে পরিণত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতেও অনীহা লক্ষণীয়।
আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টন, পানি ব্যবস্থাপনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর জোর দিয়ে এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ, জনগণের অংশগ্রহণ ও আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন কার্যকর করা, বাণিজ্য বৈষম্য হ্রাস, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ, সীমান্তে শান্তিসহ আঞ্চলিক সহযোগিতার নীতি দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে ১৪ দলের নেতাদের।
তবে ২৩ দফার শেষ কর্মসূচি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এই নীতির আলোকে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করার ঘোষণা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের জোট সঙ্গীরা।
জোট শরিকদের দাবি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৩ দফার উল্টো নীতিতে চলছে।
শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জোট সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘২৩ দফার অধিকাংশেরই বাস্তবায়ন নেই। কয়েকটি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে।’ কেন বাস্তবায়ন হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় দল যারা সরকারে আছে, তারা চায়নি বলেই হয়নি।
মেনন বলেন, ‘২৩ দফার ব্যাপারে এখন বৈঠকে আলোচনা হয় না। বহুবার এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও শোনে না সরকারি দল।’ এ ব্যাপারে তিনি হতাশার কথা জানান।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘২৩ দফা নিয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনাই হয়নি ক্ষমতায় আসার পর।’ তার মন্তব্য, জোটের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ বিপথে চলে গেছে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নীতিগত দিক থেকে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীদের প্রতি সহনশীল আচরণ করছে।’
জোটের অনেক শীর্ষ নেতা ১৭ বছরে জোটের ২৩ দফার অনেকগুলো ভুলেও গেছেন। অনেক নেতার কাছে গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মসূচিগুলো সংরক্ষণে নেই এমন তথ্যও উঠে এসেছে।
শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুও জোট সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘২৩ দফা আংশিক বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।’
জোটের শরিক দলের কয়েকজন নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ২৩ দফার বাস্তবায়নে ‘ধীরে চলো’ নীতি অনুসরণ করছে। তাদের দাবি, এই কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা গেলে সাম্প্রদায়িক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারত না।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াও জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। কর্মপরিকল্পনাগুলো আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বড় অঙ্গীকারগুলোর একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। দিলীপ বড়–য়া বলেন, ‘রাজনীতি মাঠে গড়ালে এগুলোর দফা-রফা হবে।’
কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক অসিত বরণ রায়ও একই কথা বলেছেন।
তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘২৩ দফা বাস্তবায়ন চলমান। রাতারাতি সবকিছু সম্ভব হয় না।’
সূত্র: দেশ রূপান্তর