শিরোনাম
নিজেদের অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে সরকার বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন টিকে আছে এইসব অপকর্ম করে। বিদেশিদের কাছে গিয়ে তারা বাঁচতে চায়। একদিকে (র্যাবের ওপর) নিষেধাজ্ঞা পড়েছে, অন্যদিকে যে অপকর্ম করেছে সেগুলো প্রকাশ হয়ে পড়েছে বিশ্ববাসীর কাছে। সেই কারণে আজকে তারা এভাবে ধরনা দিচ্ছে বিদেশিদের কাছে।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট: কোনো প্রতিকার নেই, দূষণ বেড়েই চলেছে, দেশের মানুষ বেঁচে আছে অসহায় অবস্থায়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যখন নির্বাচন আসছে তখন আমেরিকার কাছে দৌড়াচ্ছে। আমেরিকা গিয়ে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে বলছে যে, বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য সাহায্য করেন। যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেছেন আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে- নির্বাচন কেমন করতে যাচ্ছেন আপনার, সেখানে কি বিরোধীদল আসছে? স্পষ্ট জিজ্ঞাসা করে বলেছেন যে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য আপনারা কী ব্যবস্থা করছেন?
‘তখন তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন যে আপনি আমাদেরকে সাহায্য করেন বিএনপিকে আনার জন্য। আর এই লোকগুলো সারাক্ষণ কথা বলতে থাকে যে আমরা নাকি বিদেশিদের কাছে ধরনা দেই, আমরা বিদেশিদের সাহায্য নিয়ে কাজ করি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে গেছে, ভঙ্গুর হয়ে গেছে। আমরা সেটা লক্ষ্য করেছি করোনা সংক্রমণ যখন আসলো তখন। সেই সময়ে আমরা দেখলাম আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার বিষয়টি।
তিনি বলেন, এর কারণ কী? এই সরকারের একটাই লক্ষ্য থাকে দুর্নীতি, কীভাবে টাকা বানানো যায়। সেজন্য কী করেছে? করোনা টেস্টের নাম করে টাকা বানিয়েছে তারা, বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা কীভাবে দুর্নীতি করেছে। আমরা দেখলাম তাদের সমর্থনপুষ্ট এক ব্যক্তিকে লাভবান করার জন্য ভারত থেকে যে ভ্যাকসিন আনা হলো তার দাম তিন/চারগুণ বেশি। শুধুমাত্র সরকারের মদদপুষ্টদের লাভবান করতে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালগুলোতে গেলে দেখবেন সেখানে অবস্থাটা কী? বিশেষ করে মফস্বলের হাসপাতালগুলোতে কোনো স্বাস্থ্য সেবা নেই। জেলাগুলো বাদ দেন, আপনি পিজি হাসপাতালে যান দেখবেন। আমি কয়েকদিন আগে এক রোগীকে দেখতে গিয়েছিলাম পিজি হাসপাতালের কেবিনে। যে কেবিনে টাকা দিয়ে থাকতে হয়।
তিনি বলেন, সেই কেবিনে গিয়ে দেখলাম টাইলস ভেঙে গেছে। চেয়ার একটা আছে তার একটা পা নেই। বাথরুমে যাওয়া যায় না। এই যে অবস্থা এটার কারণ হচ্ছে, এই সরকারের এসব বিষয় কোনো খেয়ালই নেই। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে মেগা প্রজেক্ট। মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতি হবে, লাখ লাখ টাকা আয় করে বিদেশে পাঠানো যাবে। সেই টাকা দিয়ে বেগমপাড়ায় (কানাডা) বাড়ি তৈরি করবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কিছুক্ষণ আগে আমাদের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেছেন, বিবেক দূষণ। বিবেক তখনই দূষিত হবে যখন পুরো রাষ্ট্র দূষিত হয়ে যায়, পুরো প্রশাসন দূষিত হয়ে যায়, সব কিছু দূষিত হয়ে যায়। আজকে আমাদের মানুষদের বাঁচাতে হলে, বিবেকে দূষিত না করতে হলে এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে আমাদের জনগণের প্রতিনিধিমূলক একটা সরকার দরকার। জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক পার্লামেন্ট দরকার।
সেজন্য সবার আগে দূষণমুক্ত একটা নির্বাচন দরকার। দূষণমুক্ত নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং সেই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটা জবাবদিহিমূলক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। তার মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাম্মেল হক।
সূত্র: জাগো নিউজ