শিরোনাম
বহুলপ্রত্যাশিত চাঁদপুর জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন এক যুগ পর সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু একাধিক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্ব ও দ্বিধাবিভক্তি দলে আরও সংকট প্রকট করে তুলছে। সম্মেলনকে ঘিরে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বাচন হলেও তা হয়েছে দ্বিধাবিভক্তির। একক নির্বাচন কমিশনের অধীনে এক জায়গায় ভোট হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে চার জায়গায়।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি অনুমোদিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হয়েছে চাঁদপুর সদরের বাগাদী ইউনিয়নের নানুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর এ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা চ্যালেঞ্জ করে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হকের নেতৃত্বে বিদ্রোহী গ্রুপ ভিন্নভাবে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করে।
এ বিদ্রোহী গ্রুপ আট উপজেলা ও সাত পৌর কমিটিসহ সব ইউনিটের কাউন্সিলরদের ভোট নিয়েছে চাঁদপুর শহর, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তিতে। দুই গ্রুপের আলাদা আলাদা ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে চারজন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। যদিও কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের অনুমোদিত নির্বাচন কমিশনের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঘোষণা দিয়ে যান।
উভয় গ্রুপের যাদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয় তারা হচ্ছেন-নানুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ভোটে সভাপতি পদে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ও সাধারণ সম্পাদক পদে সলিম উল্যাহ সেলিম নির্বাচিত হন। অপরদিকে বিদ্রোহী গ্রুপের ভোট অনুষ্ঠিত হয় তিন জায়গায়। সেগুলো হলো-হাজীগঞ্জ, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা এবং পৌর ইউনিটের ভোট হয়েছে হাজীগঞ্জের সোনাইমুড়ীতে।
শাহরাস্তি ও কচুয়ার চার ইউনিটের ভোট হয়েছে শাহরাস্তিতে এবং চাঁদপুর, ফরিদগঞ্জ ও হাইমচরের পাঁচ ইউনিটের ভোট হয়েছে চাঁদপুর শহরে বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান শাহিনের গুয়াখোলার বাসভবনে। এ তিন জায়গার ভোট গণনা শেষে হাজীগঞ্জে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এ গ্রুপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক ও মোস্তফা খান সফরি।
এদিকে নানুপুর উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলন ও নির্বাচনে শুধু শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক এবং সলিম উল্যাহ সেলিম ব্যতীত অন্য প্রার্থীদের এমনকি তাদের কর্মী-সমর্থক ও তাদের অনুসারী ভোটারদের কাউকে অংশ নিতে দেখা যায়নি। এরপরও কেন্দ্রীয় নেতারা এখানের ভোটে বিজয়ীদের নির্বাচিত ঘোষণা করে যান।
অপরদিকে হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি ও চাঁদপুর শহরে অনুষ্ঠিত পৃথক নির্বাচনকে অবৈধ বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার সামছুল ইসলাম মন্টু। তিনি বলেন, সেটি অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। আমরা দলের গঠনতন্ত্র ও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করেছি।
এদিকে বিদ্রোহী গ্রুপের ভিন্নস্থানে সম্মেলন করা নিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একটি চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে তিনি ২ এপ্রিল আলাদা কাউন্সিল করা গুরুতর অসদাচরণ ও সম্পূর্ণ দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থি বলে বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা আগামী তিন দিনের মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন কেন্দ্রে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ চিঠির পর বিষয়টিকে চাঁদপুরে দলের ভেতর শুদ্ধি অভিযানের শুরু হিসাবে দেখছেন কেউ কেউ। আবার অনেকেই মনে করছেন, এ চিঠি স্থানীয়ভাবে দলের ভবিষ্যৎকে আরও সংকটময় করে তুলবে।
সূত্র: যুগান্তর