শিরোনাম
জনসম্পৃক্তমূলক কর্মসূচি নিয়ে এবার মাঠে নামছে বিএনপি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ঘোষিত ১১ দিনের কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
এ ইস্যুতে সব বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রথমবারের মতো বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে। ইতোমধ্যে তা সফল করতে ৮১টি সাংগঠনিক জেলায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করছেন। বিএনপি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রত্যেকটি জিনিসপত্রের দাম এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মূল্য বৃদ্ধি তো রয়েছেই। যে কারণে বিএনপির মতো একটি বড় দলের দায়িত্ব রয়েছে এসবের প্রতিবাদ করার। কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপির আমল বর্তমান আওয়ামী লীগের আমলের দ্রব্যমূল্যের চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে সামনে কর্মসূচি আসছে। এর আগে বিএনপি জনসম্পৃক্তমূলক এসব কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকবে। পরে আবারও জেলায় জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য চাল-ডাল-তেলসহ পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজারের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়েছে। তারা কৃত্রিমভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারের চরম দুর্নীতির প্রভাব বাজারে গিয়ে পড়ছে এবং জনগণকে তার মাশুল দিতে হচ্ছে। বিএনপির মতো একটি দায়িত্বশীল দল তো বসে থাকতে পারে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে এসব কর্মসূচি নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে সম্পৃক্ত করতে যাচ্ছি।
বিএনপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী এই ইস্যুতে আজ ঢাকা মহানগরে সমাবেশ করবে বিএনপি। বিকাল ২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই সমাবেশ হবে। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
এছাড়া আগামী সোমবার ১১টি মহানগরে একযোগে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে দলটি। সিলেট মহানগরের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন ড. খন্দকার মোশররফ হোসেন, ময়মনসিংহ মহানগরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চট্টগ্রামে মির্জা আব্বাস, বরিশালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রাজশাহীতে নজরুল ইসলাম খান, খুলনায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গাজীপুরে সেলিমা রহমান, কুমিল্লায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ফরিদপুরে আব্দুল্লাহ আল নোমান, রংপুরে মো. শাহজাহান ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরে মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ। ২ মার্চ সারা দেশের জেলা পর্যায়ে ও ৫ মার্চ উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এছাড়া ১২ মার্চ সারা দেশে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে হাট-বাজারে ‘হাটসভা’, ‘পথসভা’ ও লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি রয়েছে। এসব কর্মসূচি সফল করতে সব সাংগঠনিক জেলায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা হলেন-ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত টাঙ্গাইলে অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, মানিকগঞ্জে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মুন্সীগঞ্জে মনিরুল হক চৌধুরী, ঢাকায় অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, গাজীপুরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নরসিংদীতে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও নারায়ণগঞ্জে আমান উল্লাহ আমান। চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত ফেনীতে শওকত মাহমুদ, নোয়াখালীতে আব্দুস সালাম, লক্ষ্মীপুরে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণে মো. শাহজাহান, কক্সবাজারে মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, খাগড়াছড়িতে ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, রাঙামাটিতে লুৎফর রহমান কাজল ও বান্দরবানে মাহবুবের রহমান শামীম। খুলনা বিভাগের অন্তর্গত মেহেরপুরে ডা. রফিকুল ইসলাম, কুষ্টিয়ায় সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, চুয়াডাঙ্গায় আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ঝিনাইদহে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোরে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, মাগুরায় মীর সরফত আলী সপু, নড়াইলে অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, বাগেরহাটে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, খুলনায় জয়নুল আবদীন ফারুক ও সাতক্ষীরায় অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ। রংপুর জেলার অন্তর্গত পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে ড. আসাদুজ্জামান রিপন, দিনাজপুরে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সৈয়দপুর ও নীলফামারীতে আবুল খায়ের ভুঁইয়া, রংপুরে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কুড়িগ্রামে হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু ও গাইবান্ধাতে আজিজুল বারী হেলাল। রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত বগুড়াতে নজরুল ইসলাম খান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নওগাঁয় এবিএম মোশাররফ হোসেন, রাজশাহীতে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, নাটোরে মশিউর রহমান, সিরাজগঞ্জে অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার, পাবনায় হাবিবুর রহমান ও জয়পুরহাটে শিরিন সুলতানা।
সিলেট বিভাগের অন্তর্গত সুনামগঞ্জে অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপি, সিলেটে ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, মৌলভীবাজারে মীর মো. নাসির উদ্দিন ও হবিগঞ্জে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত বরগুনায় কর্নেল (অব.) এমএ লতিফ খান, পটুয়াখালীতে হাবিব উন নবী খান সোহেল, ভোলায় আব্দুল হাই সিকদার, বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণে আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ঝালকাঠিতে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও পিরোজপুরে অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন। ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত রাজবাড়ীতে অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, মাদারীপুরে শ্যামা ওবায়েদ ও শরীয়তপুরে ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহম্মেদ অসিম। তবে এ বিভাগের ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলায় এখনো কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্গত জামালপুরে হারুন অর রশিদ, ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নেত্রকোনায় সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স ও কিশোরগঞ্জে অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। এ বিভাগের শেরপুরে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং উপজেলা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে পর্যাপ্ত দ্রব্যসামগ্রী বিক্রির দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ১১ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। কর্মসূচি হলো-বিএনপির উদ্যোগে আজ রাজধানীতে (মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে), ২৮ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় সদর ও মহানগরে, ২ মার্চ জেলা পর্যায়ে এবং ৫ মার্চ উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। ৬ মার্চ ছাত্রদল, ৮ মার্চ যুবদল, ৯ মার্চ স্বেচ্ছাসেবক দল, ১০ মার্চ কৃষক দল, ১৪ মার্চ মহিলা দল ও ১৫ মার্চ তাঁতী দলের উদ্যোগে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। এছাড়া ১২ মার্চ বিএনপির উদ্যোগে সারা দেশে ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে হাট-বাজারে হাটসভা-পথসভা ও লিফলেট বিতরণ করা হবে।
সূত্র: যুগান্তর