শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণের দিন আজ

ফানাম নিউজ
  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৫:৪৬

যারা আমাদের প্রিয় মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছেন, সেই বীর মৃত্যুঞ্জয়ী ভাষা শহীদদের প্রতি বাঙালি জাতি আজ অতল শ্রদ্ধায় অবনত হয়েছে। আজ ২১ ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আজ ভাষা শহীদদের স্মরণের দিন। ১৯৫২ সালের এ দিনে হায়েনার বুলেটকে তুচ্ছ করে মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে রাজপথে নেমেছিল ছাত্র-জনতা। রক্ত দিয়ে আদায় করেছিল আপন ভাষায় কথা বলার অধিকার। মুক্তি-সংগ্রামের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সেটিই ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দুর্গে প্রথম পরাজয়ের আঘাত।

এ বছর জাতি মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পূর্ণ করছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের এদিনে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর চোখ-রাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে এসেছিল। যেন ভাষার দাবিতে সেদিন বান ডেকেছিল ঢাকার পথে পথে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলে। সেই শঙ্কা থেকেই শাসকগোষ্ঠী সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ অনেকে শহীদ হন।

আর তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে পাকিস্তানের শাসক বাহিনী রাজপথ রাঙিয়ে ছিল তাজা রক্তে। তাদের সেই সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগ জাতি হিসেবে আমাদের আজ পৃথিবীর ইতিহাসে অবিস্মরণীয় করেছে। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে সারাবিশ্বে। আমাদের দেশে এটি শহীদ দিবস হিসেবে পরিচিত। বাঙালির ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় শোকের দিন।

দিবসটি পালন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা ভাষা শহীদের প্রতি সশ্রদ্ধ সম্মান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। তবে করোনার কারণে যাবতীয় অনুষ্ঠান কিছুটা সীমিত করা হয়েছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যাতায়াতে করা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ আরোপ।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রবেশের রাস্তা-

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবাইকে পলাশী ক্রসিং ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। কোনোক্রমেই অন্য কোনো রাস্তা ব্যবহার করে শহীদ মিনারে প্রবেশ করা যাবে না।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের হওয়ার রাস্তা-

শহীদ মিনার থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে দোয়েল চত্বরের দিকের রাস্তা অথবা রোমানা চত্বরের রাস্তা দিয়ে বের হতে পারবেন। কোনোক্রমেই প্রবেশের রাস্তা দিয়ে বের হওয়া যাবে না।

সাধারণ নির্দেশনাবলি-
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কবরস্থান ও শহীদ মিনারে যারা শ্রদ্ধার্ঘ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন তাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।

শহীদ মিনারে প্রবেশের ক্ষেত্রে আর্চওয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করে সবাইকে প্রবেশ করতে হবে। এক্ষেত্রে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে। কোনো ধরনের ব্যাগ সঙ্গে বহন করা যাবে না।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারাদেশে র‍্যাবের ৭০০টি টহল টিম থাকছে। এছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়োজিত থাকছে দুই হাজার ৮২৬ জন র‌্যাব সদস্য। সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি না থাকলেও নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও সতর্কতার স্বার্থে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ অবদানের বিষয়টি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থাপন করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনসমূহে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচির সাথে মিল রেখে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ হতে সর্বোচ্চ পাঁচজন প্রতিনিধি হিসেবে ও ব্যক্তি পর্যায়ে একসাথে সর্বোচ্চ দুজন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। শহীদ মিনারের সব প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও লিকুইড সাবান রাখা হবে। মাস্ক না পরা অবস্থায় কাউকে শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।